জন্মদিনে স্মরণঃ চা র্ল স ডা র উ ই ন
বাবলু ভট্টাচার্য : পৃথিবীতে শত শত বিজ্ঞানী ছিলেন ও আছেন। তারা প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের জাদুকরী জগতটাকে নানাভাবে ভ্রমণ ও বিচার-বিশ্লেষণ করে চলেছেন। ভাবছেন, বিজ্ঞানকে কীভাবে মানুষের কল্যাণে আরও বেশি বেশি করে কাজে লাগান যায়। এদের মধ্যে এমন কয়েকজন বিজ্ঞানী আছেন, যাদের অসাধারণ চিন্তাশক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে আমাদের পৃথিবীটাকেই বদলে দিয়েছেন।
পৃথিবীকে বদলে দেয়া তেমন একজন বিজ্ঞানী হলেন, ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ চার্লস ডারউইন। তার ‘বিবর্তনবাদ ও প্রাকৃতিক নির্বাচন’ সংক্রান্ত মতবাদ দিয়ে আমাদের চারপাশের জীবন ও জগত সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষের ধারণাটাই পুরোপুরি পালটে দিয়েছেন। মানুষকে শিখিয়েছেন সম্পূর্ণ নতুনভাবে নিজেকে দেখতে।
ডারউইনের সব গবেষণাই খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। তবে, সবচেয়ে বিখ্যাত গবেষণামূলক কাজ ছিল, প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়ে ধারণা। যার মূল কথা হল, পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী প্রজাতিই একই পূর্বপুরুষের কাছ থেকে এসেছে এবং সময়ের সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে।
এর মূল সূত্রটি কিন্তু বেশ মজার। প্রাণীর যখন সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন ঘটে, যেটাকে উনি বিবর্তন বলে অভিহিত করেছেন, তখন তাদের যে বৈশিষ্ট্যগুলো তার পরিবেশের সঙ্গে মিলে যায় সেগুলো রয়ে গেছে আর যেগুলোর তেমন দরকার হয়নি সেগুলো হারিয়ে গেছে।
ডারউইন কিন্তু শুধু তার এই প্রাকৃতিক নির্বাচন বিষয়ক মতবাদ দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। তিনি বিস্তারিত গবেষণার মাধ্যমে তার এই যুগান্তকারী তত্ত্বের সপক্ষে শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। সেটা করার জন্যে পাঁচ বছর ধরে ‘এইচএমএস বিগল’ নামের একটি নৌ- জাহাজে গবেষণায় কাটিয়েছিলেন।
উনি আসলে সমুদ্র পড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশ এবং জনশূন্য দ্বীপে যেতেন। মতবাদ তো শুধু দিলেই হবে না তার পক্ষে প্রমাণ এবং যুক্তিও দেখাতে হবে। বিভিন্ন ভূখণ্ডের ঘুরে উনি এইসব প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহ করতেন। সমুদ্রযাত্রায় ডারউইন বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ ব্রাজিল, চিলি, অস্ট্রেলিয়া, ফকল্যান্ড দ্বীপ ও গালাপাগোস প্রভৃতি দ্বীপসমূহ ভ্রমণ করেছেন।
তিনি তার ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত ‘অন দ্য অরিজিন অব স্পেসিস’ (প্রজাতির উৎপত্তি) বইটিতে তার এই প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ সংক্রান্ত যাবতীয় গবেষণাকে বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এত জায়গা ঘুরে ঘুরে যে তথ্যগুলো পেয়েছেন তা উনার মতবাদটিকে সমর্থন করে। এই বইটিকে জীবের উৎপত্তি ও বিকাশ সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এছাড়া তার অন্যান্য কাজগুলির মধ্যে রয়েছে ‘দ্য এক্সপ্রেশন অব ইমোশনস ইন ম্যান অ্যান্ড এনিম্যালস’ (মানুষ ও প্রাণীসমূহের আবেগীয় অভিব্যক্তি), ‘দ্য ডিসেন্ট অব ম্যান, অ্যান্ড সিলেকশন ইন রিলেশন টু সেক্স’ (মানুষের ক্রমোন্নয়ন ও লৈঙ্গিক নির্বাচন), ‘দ্য পাওয়ার অব মুভমেন্ট ইন প্ল্যান্টস’ এবং ‘দ্য ফর্মেশন অব ভেজেটেবল মৌল্ড থ্রু দ্য একশন অব ওয়ার্মস’।
ডারউইন তার বিবর্তন তত্ত্বটি দিয়ে বিভিন্ন প্রচলিত বৈজ্ঞানিক, ধার্মিক ও দার্শনিক মতবাদকে নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। এর ফলে তার এই ধারণাটি ভীষণ আলোচিত হয়ে ওঠে। যদিও শিক্ষিত সমাজের অধিকাংশ মানুষই বিবর্তনবাদকে গ্রহণ করে নিয়েছেন, তবু আজও অনেকে এই ধারণার সত্যতাকে চ্যালেঞ্জ করেন-এর সমর্থনে প্রচুর তথ্যপ্রমাণ থাকার পরেও।
শেষ বয়সে ডারউইন নানা রোগে-শোকে আক্রান্ত হয়ে পড়লেও নিজের গবেষণাকার্য চালিয়ে যান এবং নিজের ধারণাগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকেন। একই সঙ্গে বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রেও নতুন সব ধারণার উৎপত্তি ঘটান।
আজীবন বিজ্ঞান সাধনার পর সেই ইংল্যান্ডেই তিনি ১৮৮২ সালের ১৯ এপ্রিল, ৭৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
চার্লস ডারউইন ১৮০৯ সালের আজকের দিনে (১২ ফেব্রু) ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment