বিশেষ প্রতিনিধি : কলকাতা, ১৯ ফেব্রুয়ারি,২০২১। পূর্ব ভারতে এই প্রথম মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর হাসপাতালে ফ্রজেন এলিফ্যান্ট ট্রাঙ্ক শল্য চিকিৎসার প্রয়োগ হল মহাধমনীর জটিল ব্যবচ্ছেদে। হিমায়িত হস্তিশুণ্ড বা ফ্রজেন এলিফ্যান্ট ট্রাঙ্ক কথাটা হাতির শুঁড়ের সঙ্গে সাযুজ্য থেকে এসেছে, এটি এক বিশেষ ধরনের গ্র্যাফটিং পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়। জীবনের ঝুঁকি আছে এমন ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে এক ধাপে ত্রুটি মেরামত সেরে ফেলতে হয়। মণিপুরের নিবাসী ৪৭ বছরের সামোম বিরোজিৎ সিং বুকে ক্রমাগত যন্ত্রণার কারণে স্থানীয় এক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। বারংবার যেহেতু যন্ত্রণাটা ফিরে আসছে, তাঁকে বুকের সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করতে বলা হয়।

তাতেই ধরা পড়ে স্ট্যানফোর্ড গোত্রীয় ‘এ অ্যায়োর্টিক ডিসেকশন’ নামে জটিল রোগের। এই রোগে মহাধমনীর রক্ত ভুয়ো নালীতে ঢুকে পড়ায় রক্তসঞ্চালনা বাধা পেয়ে বা থেমে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্ত যেতে পারে না, যা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। মণিপুরের ডাক্তাররা কলকাতার আর এন টেগোর হাসপাতালের সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জেন ডাঃ অতনু সাহার সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করেন। সুরেশবাবুকে বিমানে উড়িয়ে আনা হয় আর এন টেগোর হাসপাতালে বিস্তৃত পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য।

কলকাতার আর এন টেগোর হাসপাতালে পৌঁছনোর পর প্রাথমিকভাবে ওঁর অবস্থা স্থিতিশীল করা হয় এবং সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করা হয়। পরীক্ষা থেকে নিশ্চিত ধরা পড়ে ওঁর হৃদমহাধমনীর জটিল সমস্যা— অ্যাকিউট টাইপ এ অ্যাওর্টিক ডিসেকশন। ডাঃ অতনু সাহার অভিজ্ঞ নেতৃত্বে হৃদরোগ চিকিৎসক দল এই রোগকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে কাজে নেমে পড়েন। ১৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে এই জটিল অস্ত্রোপচার। সফল অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠা ছিল সময়ের অপেক্ষা। আটদিনের মাথাতেই তাঁকে হাসপাতাল ছেড়ে দেওয়া হয়।

আরটিআইআইসিএস–এর সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিয়াক সার্জেন ডাঃ অতনু সাহা জানালেন, ‘অঙ্গব্যবচ্ছেদ ও অন্য বিষয়গুলোর নিরিখে ফ্রজেন এলিফ্যান্ট ট্রাঙ্ক (এফইটি) পদ্ধতি স্টেন্ট বসানো এবং মুক্ত কাটাছেঁড়া পদ্ধতির মিশেলে এক অভিনব সংকর অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়া। এই ধরনের ব্যবচ্ছেদে দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। যেহেতু, এই ধরনের রোগে প্রাথমিক পর্বেই রোগনির্ণয় ও দ্রুত অস্ত্রোপচারই হল সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি। ডাঃ অতনু সাহা বলেন আমি অস্ত্রোপচার করলেও এটা একটা টিমওয়ার্ক। আমার সহযোগী দলকে সহযোগিতা এবং সাহায্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।’ এই সব কথা জানা গেল কলকাতা প্রেসক্লাবের সাংবাদিক সম্মেলনে।

আরটিআইআইসিএস–এর সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিয়াক অ্যান্ড হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জেন ডাঃ মৃণালেন্দু দাসের বক্তব্য, ‘ডাঃ সাহা এবং তাঁর সহযোগী দলের উদ্যোগ পুরো প্রক্রিয়াটিকে সম্ভব করে তুলেছে। পূর্ব ভারতে এই ধরনের অস্ত্রোপচার এটাই প্রথম। সুরেশবাবুকে দৈনন্দিন জীবনে ফিরতে দেখা আমাদের কাছে খুবই আনন্দদায়ক ব্যাপার।’

আরটিআইআইসিএস–এর সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিয়াক সার্জেন ডাঃ ললিত কাপুর বললেন, ‘এই ধরনের অস্ত্রোপচারের পরিণতি, যা রোগীর প্রাণ বাঁচিয়ে দেয়, খুবই আনন্দের। এমন চ্যালেঞ্জিং এবং জটিল অস্ত্রোপচার পূর্ব ভারতে এটাই প্রথম। আমি রোগীর দ্রুত আরোগ্য ও সুস্থ ভবিষ্যৎ কামনা করি।’

কলকাতার আর এন টেগোর হাসপাতালের ফেসিলিটি ডিরেক্টর মিঃ অভিজিৎ সিপি জানালেন, ‘গত দু দশক ধরেই আর এন টেগোর হৃদরোগ এবং অন্য সুপারস্পেশালিটি ক্ষেত্রে সেরা মান ও অত্যাধুনিক প্রযত্ন দিয়ে চলেছে। আমরা রোগীদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং পদ্ধতির সাহায্যে সবচেয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ। ফ্রজেন এলিফ্যান্ট ট্রাঙ্ক পদ্ধতি তারই উদাহরণ। এটি আমাদের মুকুটে আরেকটি সাফল্যের পালক জুড়ল। বাংলার মানুষদের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ, তাঁদের অবিচল আস্থা এবং সহায়তা দেওয়ার জন্য।’

রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইনস্টিটিউট অভ কার্ডিয়াক সায়েন্সেস সম্পর্কে দু–চার কথা —
কলকাতার রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অভ কার্ডিয়াক সায়েন্সেস (আরটিআইআইসিএস) ৬৮১ শয্যার এনএবিএইচ অনুমোদিত সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল। এটি ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের মুকুন্দপুরে অবস্থিত। কার্ডিয়াক সায়েন্সেস (হার্ট প্রতিস্থাপন–সহ), রেনাল সায়েন্সেস (কিডনি প্রতিস্থাপন–সহ), জিআই সায়েন্সেস (লিভার প্রতিস্থাপন–সহ), নিউরোসায়েন্সেস এবং অর্থোপেডিক্স চিকিৎসায় আরটিআইআইসিএস পূর্ব ভারতের প্রথম সারির হাসপাতাল।


Be First to Comment