নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ১৬ মে ২০২৩। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর এজলাসে ওঠে পূর্বস্থলী থানা এলাকায় এক খবর সংক্রান্ত মামলা। এক ওয়েব পোর্টালের সম্পাদক মোল্লা জসিমউদ্দিন মামলা খারিজের আবেদন জানিয়ে এই মামলাটি করেছেন। মামলাকারীর আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানিয়েছেন -‘ এদিন কলকাতা হাইকোর্ট মামলা খারিজের আবেদন গ্রহণ করেছে। রাজ্যের কাছে ওই মামলার যাবতীয় তথ্য আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রিপোর্ট আকারে তলব করেছে। সেইসাথে ওই ওয়েব পোর্টাল সম্পাদক কে আইনী রক্ষাকবজ দেওয়া হয়েছে’। মামলাকারী দাখিল মামলায় প্রশ্ন তুলে জানিয়েছেন -” প্রকাশিত খবর সত্য না মিথ্যা? সেটি নির্ণয় করবে প্রেস কাউন্সিল। এখানে পুলিশ কি করে খবর সংক্রান্ত মামলা রুজু করলো? হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যে জনরোষ তৈরীর অভিযোগ তোলা হয়েছে তার সপক্ষে সাইবার রিপোর্ট এবং জনরোষের বিস্তারিত তথ্য কোথায়? তাছাড়া কোন খবর মিথ্যা বলে অভিযোগকারীর মনে হলে তা সংশ্লিষ্ট সম্পাদক কে চিঠি/ ইমেল মারফত জানাতে হয়।এরপর আইনী নোটিশ পাঠাতে হয়। কোথায় খবরটি তথ্য বিকৃত করা হয়েছে? তাই জানানো হয়নি”? উল্লেখ্য, এক এনজিও সংস্থার দুর্নীতি বিষয়ক খবর প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন সাংবাদিক শ্যামল রায় (বর্তমানে মৃত) । খবর প্রকাশে ওই ওয়েব পোর্টালের সম্পাদক মোল্লা জসিমউদ্দিন কে অভিযুক্ত করা হয়। নিম্ন আদালতের কোন সমন না দিয়েই সরাসরি ‘ওয়ারেন্ট’ ইস্যু করা হয় কালনা মহকুমা আদালতে। মামলাকারী পূর্বস্থলী থানার মামলা গ্রহণে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার, সংশ্লিষ্ট থানার আইসি এবং জেলার পুলিশ সুপার কে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। তার উত্তর অবশ্য দেয়নি পুলিশ কর্তৃপক্ষ। ভারতীয় গনতন্ত্রে চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে সংবাদমাধ্যম পড়ে। আর এই সংবাদমাধ্যম মূলত তিনপ্রকার হলেও চলতি সময়ে পোর্টাল নিউজ সংবাদমাধ্যমের আরেকটি রুপে এসেছে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্যসরকারের সাংবাদিকদের পেনশন সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে (তারিখ ২৯/০৩/২০১৮, নাম্বার ১২১৯/ডিআই/আইসিএ /এন) ২ নাম্বার সিরিয়ালে ‘এ’ বিভাগে পরিস্কার উল্লেখ রয়েছে যে – সাংবাদিক হিসাবে ওয়েব পোর্টাল সাংবাদিকেরাও পড়ছে। অপরদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত ‘প্রেস কাউন্সিল ‘ আছে সংবাদ সম্পকিত অভিযোগগুলি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিতে। সাধারণত কোন সংবাদমাধ্যমে কোন খবর নিয়ে কারও অসন্তোষ, অভিযোগ থাকলে সেই সংবাদমাধ্যম কে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে হয় সংবাদটি সংশোধন করার জন্য। এতে কোন কিছু না হলে আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাতে হয় নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করে। কেননা প্রকাশিত কোন খবর নিয়ে পুলিশ কোন মামলা সরাসরি গ্রহন করতে পারেনা বলে প্রবীণ সাংবাদিকরা জানিয়েছেন । উল্লেখ্য গত ৩০/১০/০৬ তারিখে হাইকোর্টে সৌমিত্র পালের এজলাসে ( সিরিয়াল নাম্বার ৫৭, রিট নাম্বার ডাবলু পি ২১০৩৭) গুসকরা নিবাসী জীবরাজ প্যাটেল নামে এক ব্যবসায়ী স্থানীয় এক পাক্ষিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর নিয়ে রিট পিটিশন করেছিলেন। সেখানে উক্ত পাক্ষিক পত্রিকার পাশাপাশি রাইটার্সের হোম বিভাগ, পুলিশসুপার ( বর্ধমান), জেলাশাসক (বর্ধমান) এবং আইসি (আউসগ্রাম) দের কে পক্ষ করা হয়। বিচারপতি এই রিট মামলা খারিজ করার আদেশনামায় উল্লেখ রাখেন যে – ‘ সংবাদ বিষয় অভিযোগটি নিদিষ্ট ফোরামে অনুমোদন আগে দরকার’। অর্থাৎ প্রেস কাউন্সিলের অনুমোদন। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে এক ওয়েব পোর্টাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষ কে লিখিত প্রতিবাদপত্র না পাঠিয়ে, আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ না দিয়ে সরাসরি প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে বিচারকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানার পুলিশ। গত ৩০/০৮/১৮ তারিখে রুজু করা (পিএস কেস নাম্বার ৩১৯/১৮) মামলায় চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল অভিযুক্ত মিডিয়া হাউসের সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বাড়ীর ঠিকানায়। ওই থানার পুলিশের এহেন অতি সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ৫০৫ (২) ধারায় মামলার নোটিশে তিনদিনের মধ্যে থানায় হাজিরার তলব হয়েছিল। ‘মঙ্গলকোট ডটকম’ নামে ওই ওয়েব পোর্টাল এহেন থানার নোটিশের প্রত্যুত্তরে আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার আইসি, তদন্তকারী পুলিশ অফিসার সহ পূর্ব বর্ধমানের পুলিশসুপারকেও। কেননা প্রকাশিত খবরে একাংশ যেমন খুশি হয়, ঠিক অপরাংশ অখুশি বা অসন্তোষ হয়। তাহলে খবরে অসন্তুষ্ট ব্যক্তিরা থানার মাধ্যমে এইরুপ নোটিশ মিডিয়া হাউসদের পাঠাতে লাগলে। সেইসাথে থানায় খবর নিয়ে বিচারকের ভুমিকায় পুলিশ বারবার হস্তক্ষেপ করলে নির্ভীক সাংবাদিকতা করাটা দুস্কর হয়ে উঠবে বলে মানে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। কোন খবর নিয়ে অভিযোগ থাকলে মিডিয়া হাউস কে লিখিত প্রতিবাদপত্র, আইনজীবীর লিগ্যাল নোটিশ সর্বপরি প্রেস কাউন্সিল কে জানানো। তা না করে সরাসরি পুর্বস্থলী থানার পুলিশ কিভাবে সংবাদ কেন্দ্রিক মামলা রুজু করলো? এই প্রশ্ন নিয়ে লিগ্যাল নোটিশ টি পাঠানো হয়েছে মিডিয়ার তরফে। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী ওই ওয়েব পোর্টালের সম্পাদক কে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত আইনী রক্ষাকবচ দিয়েছেন। এর পাশাপাশি খবর সংক্রান্ত মামলায় যাবতীয় তথ্য তলব করা হয়েছে।
Be First to Comment