———–আজ বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস———
মৃদুলা ঘোষ : ৮, সেপ্টেম্বর, ২০২০। বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত স্বতন্ত্র এক চিকিৎসা পদ্ধতি। চিকিৎসা ব্যবস্থায় ফিজিওথেরাপি র গুরুত্ব, ফিজিওথেরাপিস্টদের ভূমিকা ও অবদান চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট এবং সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ১৯৫১ সাল থেকে প্রতি বছর ৮ই সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস পালিত হয়ে চলেছে। ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই দিনটির ব্যপকতা ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফিজিওথেরাপি একটি ইংরেজি শব্দ। এখানে ফিজিও অর্থ শারীরিক, আর থেরাপি হলো চিকিৎসা পদ্ধতি। আমেরিকান চিকিৎসক মেরি এমসি মিলান ১৯২১সালে ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট আ্যসোসিয়েশন গঠন করে পঙ্গু মানুষের পুনর্বাসনের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক শাখার নাম ফিজিওথেরাপি বলে ঘোষণা করেন।

একটু সাফল্য অর্জন করে ফিজিওথেরাপি বাত ব্যথা, পক্ষাঘাত, স্পোর্টস ইনজুরি সহ পঙ্গুত্ব কে জয় করার অন্যতম শাখা হিসেবে ফিজিওথেরাপি, চিকিৎসা বিজ্ঞানে উজ্বলভাবে বিরাজ করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, ব্যাথা জনিত, দুর্ঘটনাজনিত, পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকে যে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পেপটিক আলসার, কিডনি, লিভারের ক্ষতি অনিবার্য হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত ফিজিওথেরাপি সর্বস্তরে গ্ৰহনযোগ্য। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট হিউম্যান মুভমেন্ট, ফিজিক্যাল আ্যকটিভিটি, প্রোমোটিংহেলথ, ফিটনেস বিশেষজ্ঞ। ফলে অক্ষমতা থেকে সক্ষমতায় আনতে ও মৃত্যুর হার কমাতে বড়ো ভূমিকা রাখে এই ফিজিওথেরাপি। কারন, এই চিকিৎসায় যুক্ত হয় হাইড্রো থেরাপি, ক্রায়োথেরাপী, কাইনেশিওলজি, ইলেকট্রো থেরাপি। ফলে দীর্ঘ মেয়াদী ব্যাথা নিরাময়ে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অনবদ্য প্রয়োগ বলেই মনে করা হয় বিশ্বজুড়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী র “ফিট ইন্ডিয়া” মুভমেন্ট এই ফিজিওথেরাপির সাফল্যের প্রতি এক সম্মান প্রদর্শন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু পক্ষাঘাতগ্রস্থতা থেকে মুক্তি নয়, খেলাধুলা র ক্ষেত্রে ফুটবল, ক্রিকেট, টেবিল টেনিস সহ যাবতীয় খেলার সাফল্য ফিজিওথেরাপি ছাড়া অচল। খেলোয়াড়দের তরতাজা রাখতে, মাঠে, কোর্টে সঠিক ভাবে পারফরমেন্স দেওয়ার জন্য ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব অপরিসীম। স্ট্রোক, আঘাত, শল্যচিকিৎসায়, স্নায়ু তন্ত্রের জটিলতায় ভুগে পঙ্গুত্বে রোগীর দেহ অবশ ও মাংস পেশী শক্ত হয়ে যায়। এইসব রোগীদের দৈনন্দিন জীবন কে কর্মক্ষম করে তুলতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।

এছাড়াও, স্পন্ডাইলাইটিস, ফ্রোজেন শোল্ডার,পায়ের গোড়ালি ব্যাথা, বার্ধক্যজনিত শারীরিক অসাড়তা দূর করতে ফিজিওথেরাপি বিভিন্ন মাধ্যম যেমনঃ ম্যানুয়াল থেরাপি, ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি, মোবিলাইজেশন, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ইনফিলট্রিশন, পশ্চারাল এডুকেশন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়।চলাচলে অক্ষম মানুষ কে সচল ও কর্মক্ষম করতে নানারকম এইডস যেমনঃ ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার, স্কুটারস, ওয়াকার, ব্রেস, কেনস্ এর সাহায্য নেওয়া হয়। এসবের সাহায্যে মাংসপেশী র সংকোচন-প্রসারন কে স্বাভাবিক করা হয়। একজন প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্ট পারেন এভিডেন্স ভিত্তিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দিতে, অন্য কেউ নন। তাই সময় মতন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন। সচল ও কর্মক্ষম জীবন যাপন করুন। পিভি সিন্ধু র বিশ্ব মিটে সোনা জয় অথবা হিমা দাসের সোনা জয় কিংবা জাতীয় স্তরে পদকজয়ী সবকিছুর পেছনে লুকিয়ে ফিজিওথেরাপি যে সাফল্যের আলোকে গুরুত্ব পায় না ফিজিও রহস্য। আড়ালেই রয়ে যান ফিজিওথেরাপিস্ট।
Be First to Comment