নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কলকাতা, ১৩ই জুন, ২০২৫: বিশ্ব প্রবীণ নাগরিক নির্যাতন সচেতনতা দিবস (১৫ জুন) উপলক্ষে, হেল্পএজ ইন্ডিয়া ‘আন্তঃপ্রজন্মীয় গতিশীলতা ও বার্ধক্যের উপর ধারণা’ বা ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং ইন্টারজেনারেশনাল ডাইন্যামিকস অ্যান্ড পারসেপশনস অন এজিং’ শীর্ষক প্রতিবেদন (ইন্ডিয়া ইন্টারজেনারেশনাল বন্ডস – INBO রিপোর্ট) প্রকাশ করেছে, যা এই ধরনের প্রথম জাতীয় গবেষণা। প্রতিবেদন প্রকাশের পর, ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটি কলকাতা সরকার, সম্প্রদায়, শিক্ষাবিদ এবং গণমাধ্যমের অংশীদারদের নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় এই গবেষণাটি ১০টি মেট্রো ও নন-মেট্রো শহরে (দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, আহমেদাবাদ, কানপুর, নাগপুর এবং মাদুরাই) পরিচালিত হয়েছে, যা SEC B এবং C শহরে পরিবারগুলির যুব ও প্রবীণদের নিয়ে করা হয়েছে। পরিমাণগত উপাদানের সঙ্গে গুণগত ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন (FGD) গুলিকে সমন্বিত করে ভারতের শহুরে যুব ও বয়স্কদের মধ্যে ধারণা, পারস্পরিক আদানপ্রদান এবং আবেগের দিকগুলি অনুসন্ধান করেছে।
৫৭৯৮ জনের উপর এই সমীক্ষা গবেষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭০% যুবক (১৮-৩০ বছর) এবং ৩০% বয়স্ক (৬০ বছরের বেশি)। এটি শহুরে ভারতে যুব ও বয়স্কদের মধ্যে সম্পর্ক, আবেগ এবং মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলি বোঝার জন্য করা হয়।
“এই প্রতিবেদনটি একইসঙ্গে উৎসাহ দেয় আবার সতর্কও করে। ভারতে বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধা ও পারিবারিক বন্ধন এখনও মজবুত—যেখানে ৮৬% বয়স্ক মনে করেন যে তাঁরা উপযুক্ত সম্মান পাচ্ছেন। কিন্তু বেশ কিছু লুকানো সমস্যাও আছে: অনেক প্রবীণ মনে করেন তাঁরা মানসিকভাবে অন্যদের থেকে দূরে সরে গেছেন, তাঁদের কথা শোনা হয় না, বা নানা সদর্থক আলোচনা থেকে তাঁরা বাদ পড়ছেন। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের শুধু বলা হয়, জিজ্ঞাসা করা হয় না’। এই ফারাক দূর করতে হবে। আমরা কি সত্যিই বয়স্কদের কথা শুনছি, নাকি শুধুই শুনছি বলে মনে করছি? ভারতে একইসঙ্গে যেমন যুব শক্তির সংখ্যা বাড়ছে তেমনি বাড়ছে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা। আমাদের এমন সমাজ গড়তে হবে যেখানে সব বয়সের মানুষের জায়গা আছে, শুধু যুবক বা প্রবীণ নয়। আসল সুযোগ হলো ‘প্রজন্মের মধ্যে মূল্যবোধ’ তৈরি—যেখানে যুবক ও প্রবীণরা একসঙ্গে যত্ন, ডিজিটাল শিক্ষা, পড়াশোনা ও স্বেচ্ছামূলক কাজ করবে। এতে বার্ধক্যজনিত একাকীত্বের পরিবর্তে সবাই মিলে কাজ করার যেমন সুযোগ হবে, তেমনি বিভিন্ন প্রজন্ম কেবল কাছাকাছি নয়, স্বপ্ন ও সহযোগিতাযকেও জুড়বে”, বলেন রোহিত প্রসাদ, সিইও, হেল্পএজ ইন্ডিয়া।
২০২৫ সালে, ভারতের প্রায় ১২% মানুষের বয়স ৬০ বা তার বেশি হবে, যা ২০৫০ সালের মধ্যে ১৯% হবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে, ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যুবক রয়েছে, ১৫-২৯ বছর বয়সীর সংখ্যা ৩৬৫ মিলিয়নেরও বেশি ।
প্রতিবেদন বলছে, যুবকরা বয়স্কদের “একা” (৫৬%), “নির্ভরশীল” (৪৮%), কিন্তু “জ্ঞানী” (৫১%) এবং “সম্মানিত” (৪৩%) বলে মনে করে। এতে সহানুভূতি, প্রশংসা এবং কিছু সাধারণ ধারণার মিশ্রণ দেখা যায়।
“১৮-২৪ বছরের তরুণরা, বিশেষ করে যারা দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে একসঙ্গে থাকে, তাদের মধ্যে গভীর মানসিক বন্ধন তৈরি হয়য়। আশ্চর্যজনকভাবে, যারা আলাদা থাকে, তারাও সাধারণত বার্ধক্য সম্পর্কে অত্যন্ত ইতিবাচক মত পোষণ করে, যা দেখায় যে দূরত্ব সবসময় সম্পর্ক নষ্ট করে না। জীবনযাত্রা ও ডিজিটাল পার্থক্য থাকলেও, যুবক ও প্রবীণরা একমত যে পরিবারই বয়স্কদের যত্নের মূল ভূমিকা পালন করে। যুবকরা প্রজন্মের ফারাক বোঝে, কিন্তু সেই ব্যবধানকেও তাঁরা কমাতে চায়—তা সে একাকী বয়স্কদের সঙ্গে কথা বলায় হোক, তাদের কাজে সাহায্য করা কিংবা ডিজিটাল দক্ষতা শেখানো। তারা চায় স্কুল-কলেজে বার্ধক্য সম্পর্কে শেখানো হোক এবং যুবক-প্রবীণদের একসঙ্গে কাজের ব্যবস্থা করা হোক। প্রবীণরাও মাঝে মাঝে মনে করেন তাদের কদর কম, তবু তারা নবীনদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে চান, তাদের সঙ্গে দেখা করে খুশি হন, এবং পরিবারের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন। এই জটিলতা মোকাবিলায় আমাদের ইতিবাচক দিকগুলোকে আরো জোরদার করতে হবে আর ফারাকগুলো সচেতনভাবে দূর করতে হবে”, বললেন মিস অনুপমা দত্ত, পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি, হেল্পএজ ইন্ডিয়া।
মিডিয়া যুবকদের প্রবীণদের সম্পর্কে চিন্তাভাবনাকে অনেকটা প্রভাবিত করে। ৮০% যুবক বলেন, মিডিয়ায় বয়স্কদের প্রায়ই জ্ঞানী ও যত্নশীল হিসেবে দেখানো হয়, কিন্তু কখনও কখনও আবার অন্যের উপর নির্ভরশীল বা মজার চরিত্র হিসেবেও।
“হেল্পএজ তার #GenerationsTogether উদ্যোগের মাধ্যমে নবীন ও প্রবীণদের কাছাকাছি আনছে—এমনকি ডিজিটাল শিক্ষা, স্বেচ্ছাশ্রম ও একসঙ্গে শেখার মাধ্যমে। মিডিয়া বার্ধক্য সম্পর্কে যুবকদের মধ্যে একটা ধারণা গড়ে দেয়, তাই আমরা মিডিয়া, শিল্প ও অন্যদের সঙ্গে মিলে বার্ধক্য নিয়ে ভালো কাহিনী তৈরি করবার আশা রাখি”, বললেন প্রতীপ চক্রবর্তী, COO হেল্পএজ ইন্ডিয়া।
প্রতিবেদনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলিঃ
• নন-মেট্রো শহরে যুবক ও প্রবীণদের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ ও প্রজন্মের বন্ধন বেশি মজবুত, তবে বার্ধক্য নিয়ে তাদের ভয় বেশি এবং প্রজন্মের ফারাকও বেশি মনে হয়।
• নন-মেট্রো শহরের যুবকরা (স্কোর: ৬৫.১৮) মেট্রো শহরের যুবকদের (স্কোর: ৬২.৫২) তুলনায় বয়স্কদের বেশি সম্মান দেয়, যা সম্ভবত ঐতিহ্যবাহী বা সম্প্রদায়ভিত্তিক মূল্যবোধের কারণে।
• যুবকদের মধ্যে সামগ্রিক ‘মূল্য ও সম্মান’ স্কোর ৬৩.৫৯ (১০০-এর মধ্যে), যা বয়স্কদের ও তাদের সমাজে ভূমিকা সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখায়। নন-মেট্রো যুবকদের স্কোর (৬৫.১৮) মেট্রো যুবকদের (৬২.৫২) চেয়ে বেশি, যা সম্প্রদায়ভিত্তিক মূল্যবোধের সঙ্গে জড়িত গভীর সম্মানকে দেখায়।
• যুবকরা বেশিরভাগ সময় দাদু-ঠাকুমা (৪৯%) ও বাবা-মা (৪৫%) কে নিয়ে কথা বলেন, আর প্রবীণরা মূলত ছেলে (৫০%) ও নাতি কে (৪০%) নিয়ে সময় কাটায়, যা পরিবারের গুরুত্ব দেখায়।
• যদিও ৮৮% প্রজন্মের মধ্যে কথাবার্তা মুখোমুখি হয়, ডিজিটাল ব্যবধান এখনও আছে। ৭১% বয়স্ক সাধারণ ফোন ব্যবহার করেন, কিন্তু মাত্র ৪১% স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। মাত্র ১৩% ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, এবং শুধু ৫% অনলাইন ব্যাংকিং বা হেলথ অ্যাপ ব্যবহার করেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৪% বয়স্ক কোনো ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার করেন না।
• প্রযুক্তি ব্যবহারে বয়স্কদের সমস্যা: ৬৬% প্রযুক্তিকে জটিল মনে করেন, ৫১% ভুল হওয়ার ভয় পান। যুবকরা সাহায্য করে, ৫৪% ছেলে-মেয়ে এবং ৫২% নাতি-নাতনি ডিজিটাল গাইড হিসেবে কাজ করে। কিন্তু যুবকরা মনে করে বয়স্করা আগ্রহী নন (৭৮%) বা ভুলে যান (৬৬%), আর বয়স্করা বলেন যুবকদের ধৈর্য কম (৭১%) এবং তারা দ্রুত বোঝায় (৪৯%)।
• দুই গ্রুপই একমত যে যুবকদের ব্যস্ততা কথাবার্তায় বাধা দেয় (বয়স্ক: ৭৬%, যুবক: ৭৪%)। যুবকরা (২৫%) বেশি মনে করে তাদের সমালোচনা করা হয়, বয়স্কদের তুলনায় (২২%)। দুই পক্ষই “প্রজন্মের ফারাক” মানে (যুবক: ৫১%, বয়স্ক: ৪৫%)।
• সমর্থন নিয়ে ভিন্নতা আছে: বয়স্করা বলেন, যুবকরা এটিএম থেকে টাকা তোলা (৫৫%) এবং হেলথ ইনস্যুরেন্সে (৪০%) সাহায্য করে, কিন্তু যুবকরা বলে তারা কম সাহায্য করে (২৩% এবং ১৮%)। ২৯% যুবক বলেন তারা কোনো আর্থিক সাহায্য করেন না, কিন্তু মাত্র ৬% বয়স্ক বলেন তারা কোনো সাহায্য পান না।
• স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দুই পক্ষই বেশি সমর্থন করে: ৮১% বয়স্ক এবং ৮২% যুবক মনে করেন যুবকদের বয়স্কদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। ৬৫% দুই পক্ষই ওষুধ এবং বাড়ির যত্নে সাহায্য সমর্থন করে।
• যুবক ও বয়স্করা বার্ধক্য নিয়ে একই ভয় পান: একাকীত্ব (যুবক: ৬৯%, বয়স্ক: ৬৮%), অসুস্থতা (৬৭% বনাম ৬১%), এবং আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা (৬২% বনাম ৫৮%)। তারা একমত যে আর্থিক নিরাপত্তা (বয়স্ক: ৭০%, যুবক: ৭২%) এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুখী বার্ধক্যের জন্য জরুরি।
• পরিবারের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা খুব বেশি: ৮৮% যুবক বৃদ্ধ বয়সে পরিবারের সঙ্গে থাকতে চান, এবং ৮৩% বয়স্ক এখন পরিবারের সঙ্গে থাকেন বা থাকার পরিকল্পনা করেন, যা পরিবারভিত্তিক জীবনের গুরুত্ব দেখায়।
হেল্পএজ ইন্ডিয়ার সুপারিশসমূহ:
• স্কুলে প্রশিক্ষণ: স্কুলের পাঠ্যক্রমে ‘বয়স সংবেদনশীলতা’ বা ‘এজ সেনসাইটাইজেশন’ প্রোগ্রাম যোগ করা উচিত, যাতে ছোটবেলা থেকেই বয়স্কদের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতির ভিত্তি তৈরি হয়। সরকারের উচিত এজন্য একটি জাতীয় আন্তঃপ্রজন্মীয় সংযোগ মিশন শুরু করা।
• আন্তঃপ্রজন্মীয় যত্ন: যুবকদের নেতৃত্বে সম্প্রদায়ভিত্তিক যত্ন প্রোগ্রাম চালু করা উচিত, যাতে বয়স্কদের যত্নের ব্যবস্থা ও নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হয়। শহর ও গ্রামে যুব স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে বয়স্ক যত্ন কেন্দ্র তৈরি করা উচিত। কোম্পানিগুলোর সিএসআর প্রোগ্রামের মাধ্যমে তরুণ কর্মীদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিতে উৎসাহ ও পুরস্কার দেওয়া উচিত এবং এইচআর নীতির মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক যত্নকারীদের সমর্থন করা উচিত।
• সচেতনতা অভিযান: জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যবহার করে সচেতনতা অভিযান চালানো উচিত, যাতে বয়স্কদের প্রতি সংবেদনশীলতা, যত্ন এবং তাঁদের উৎপাদনশীল অবদানের মূল্য বোঝা যায়। বয়সবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা অভিযান খুব কার্যকর হবে।
• ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি: যুবকদের নেতৃত্বে প্রোগ্রাম শুরু করা উচিত, যেখানে প্রযুক্তি-দক্ষ যুবকরা বয়স্কদের ডিজিটাল শিক্ষায় সাহায্য করবে, প্রজন্মের মধ্যে বন্ধন ও শেখার সুযোগ তৈরি করবে। কোম্পানিগুলোর উচিত আন্তঃপ্রজন্মীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা, ডিজিটাল ডিভাইস সরবরাহ করা এবং তাদের দলকে বয়স্ক-বান্ধব ফিচার যুক্ত ডিভাইস ও অ্যাপ তৈরি করতে উৎসাহ দেওয়া।
About HelpAge India
HelpAge India is a leading non-profit organization working with and for older people in India for the past 46 years. It runs healthcare, agecare, livelihood, disaster response and digital empowerment programs throughout the country & advocates strongly for the elder cause working collaboratively with stakeholders. It became the first and only Indian organization to be honored with the ‘UN Population Award 2020’ for its exemplary work in the field of ageing and population issues, and earlier in 2014, has been the recipient of ‘Vayoshreshtha Samman’ by Government of India as an institution working for senior citizens.
Be First to Comment