Press "Enter" to skip to content

পঞ্চাশের দশকে সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার এবং গায়ক হিসেবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নাম আকাশস্পর্শী ছিলো….।

Spread the love

স্মরণ : হে ম ন্ত মু খো পা ধ্যা য়

“বলিউডে একধারে গান গাইছেন, সুর করছেন, সিনেমা প্রোডিউস করছেন, ষাটের দশকে এমন কলার তোলা বাঙালি দেখা যেত না।”

[ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে গুলজার ]

বাবলু ভট্টাচার্য : হাতা গোটানো সাদা বাংলা শার্ট। সাদা ধুতি। কালো ফ্রেমের চশমা। ব্যাক ব্রাশ চুল। নম্র উচ্চারণের আলাপচারিতা। রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে আধুনিক গান। ফিল্মের প্লে-ব্যাক থেকে ফাংশনের ম্যারাপ। খাদ থেকে চড়া— সর্বত্র যাতায়াতে অভ্যস্থ দরাজ গলা। ‘ব্র্যান্ড হেমন্ত’র এ সবই ছিল এক একটা ‘আইকনিক’ চিহ্ন।

মুখোপাধ্যায় দম্পতির চার ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে হেমন্ত ছিলে‌ন দ্বিতীয়। তাঁর ছেলেবেলা কাটে বহুড়াতে। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর কালীদাসবাবু সপরিবার কলকাতায় এসে উঠেন ভবানীপুর। হেমন্ত প্রথমে ভর্তি হন বাড়ির কাছে নাসিরুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুলে। তারপর মিত্র ইনস্টিটিউশন।

প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করে যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন হেমন্ত। এই সময়ে বাবার বন্ধু শান্তি বসুর মাধ্যমে পরিচয় হয় শৈলেশ দত্তগুপ্তের সঙ্গে। তিনি তখন কলম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানির ট্রেনার।

গান শুনে হেমন্তের রেকর্ড করালেন শৈলেশবাবু। পনেরো দিনের মধ্যে রেকর্ড বাজারে এলো। সেটা ১৯৩৭ সালের ডিসেম্বর মাস। ব্যাস, আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হেমন্তকে। দু’মাস অন্তর চারটে রেকর্ড আর রেডিওতে পাঁচটা করে প্রোগ্রাম।

রবীন্দ্র‌নাথের গান সেই অর্থে কোনও প্রতিষ্ঠানে বা গুরুর কাছে শেখেননি। শৈলেশবাবুর কাছেই প্রথম স্বরলিপি ধরে ধরে তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষা। পঙ্কজকুমার মল্লিকের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়ে অনেকেই তাঁকে ‘ছোট পঙ্কজ’ বলে ডাকতে লাগলেন। এতে তিনি অনুপ্রাণিত হতেন।

চল্লিশের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম প্লে-ব্যাক করলেন হেমন্ত, ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবিতে। তার পরে বেশ কিছু ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা। এর মধ্যেই সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে তিনি পর পর কয়েক বছর রেকর্ড করলেন বেশ কয়েকটি গান : ‘কোনও এক গাঁয়ের বধূ’ থেকে ‘রানার’— বাঙালি অন্য ভাবে পেল এই জুটিকে।

একই সময়ে বের হওয়া তাঁর আধুনিক গানের রেকর্ডগুলিও ভীষণ জনপ্রিয় হয়। ১৯৫১-য় মুম্বাই পাড়ি দিলেন হেমন্ত, ‘আনন্দমঠ’ ছবিতে সুর করবেন বলে। হিন্দিভাষীরা পেলেন নতুন এক গায়ক— হেমন্তকুমার। তাঁর কণ্ঠে মুগ্ধ তখন প্রায় সারা ভারত।

পঞ্চাশের দশকে সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার এবং গায়ক হিসেবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নাম আকাশস্পর্শী। তিনি এ বার নিজেকে নিয়ে এলেন চলচ্চিত্র প্রযোজকের ভূমিকায়। প্রথম বাংলা ছবি মৃণাল সেনের পরিচালনায় ‘নীল আকাশের নীচে’। এই চলচ্চিত্র ভারত সরকার কর্তৃক দেশের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র সম্মান রাষ্ট্রপতির স্বর্ণ পদক লাভ করেছিল।

পরের দশকে একের পর এক হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রযোজনা করতে থাকে; যেমন, ‘বিশ সাল বদ’, ‘কোহরা’, ‘বিবি অওর মকান’, ‘ফরার’, ‘রাহগির’ এবং ‘খামোশি’। সব চলচ্চিত্রেই সুর সৃষ্টি করেন হেমন্ত। শুধুমাত্র ‘বিশ সাল বদ’ এবং ‘খামোশি’- এগুলোর মধ্যে অধিক বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল।

কলার তোলা কাকে বলে তা তিনি দেখিয়েছিলেন ১৯৭০ সালে। চিরকাল বাম মনোভাবাপন্ন হেমন্ত পদ্মশ্রী সম্মান নিতে অস্বীকার করেন।

সারা জীবনে অসংখ্য সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৮৫ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি. লিট সম্মান প্রদান করে।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ১৯৮৯ সালের আজকের দিনে (২৬ সেপ্টেম্বর) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.