জন্মদিনে স্মরণঃ ক বি আ জী জু ল হ ক
“আমারো প্রার্থনা ছিলো উচ্চারিত হৃদয়ের কাছে,
মেঘমুখী ফুল তুমি সূর্যমুখী হও,
সূর্যই আমাদের প্রথম নায়ক…”
বাবলু ভট্টাচার্য : পঞ্চাশের দশকে আবির্ভূত কবি আজীজুল হক সাহিত্যানুরাগী, প্রকৃতি প্রেমী, শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক এবং গবেষক।
তাঁর পিতার নাম মুন্সী মোহাম্মদ জবেদ আলী এবং মাতা রহিমা খাতুন।
আজীজুল হকের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় নিজ গ্রাম থেকে। ১৯৫১ সালে আজীজুল হক ঢাকা কলেজ থেকে বি. এ এবং ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৫৭ সালে সাতক্ষীরা ডিগ্রী কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে কবি আজীজুল হকের কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৫৮ সালে তিনি যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন এবং সুদীর্ঘ দিন শিক্ষকতা করার পর ১৯৮৮ সালে অবসরগ্রহণ করেন।
আজীজুল হক একজন আত্মসচেতন কবি। ভাষা ও সাহিত্যের মধ্য দিয়ে তিনি অবিরল ধারায় মনের চর্চা করেছেন। তাঁর কবিতার উপজীব্য বিষয় মানুষ, সমাজ, সময়, দেশ, প্রকৃতি প্রেম, নদ ও নারী। আর শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে, তিনি ছিলেন অসাধারণ নিপুণ শিল্পী।
১৯৬৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝিনুক মুহূর্ত সূর্যকে’। ১৯৭৬ সালে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘বিনষ্টের চিৎকার’ ১৮৮৯ সালে তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ঘুম ও সোনালী ঈগল’ এবং ১৯৯৪ সালে ‘আজীজুল হকের কবিতা’ নামক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে তাঁর নিরীক্ষাধর্মী চিন্তা-চেতনা পাঠক সমাজকে করেছে বিমুগ্ধ-অবহিত। সংখ্যার আধিক্যতায় নয়, বিষয় বৈচিত্রে ও চিন্তা-চেতনায় তিনি ছিলেন অনন্য।
১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত ‘অস্তিত্ব চেতনা ও আমাদের কবিতা’ প্রবন্ধটি বাংলা সাহিত্যের একটি স্মরণীয় প্রয়াস।
সাহিত্যাঙ্গনে বিভিন্ন ধারায় রচয়িতা আজীজুল হক বেশ কিছু নাটক, গীতিনাট্য ও ছায়ানাট্য রচনা করে মঞ্চস্থ করেছেন।
কাজী নজরুল ইসলামের জীবনাবলম্বনে ‘অগ্নিবীণা’ ছায়ানাট্য রূপায়ণের সার্থক রূপকার আজীজুল হক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ‘কৃষ্ণ চূড়ার তৃষ্ণা’ কবি আজীজুল হকের সমাজ সচেতনতার ও শিল্প রূপায়নের অপূর্ব বহিঃ প্রকাশ।
বরেণ্য কবি আজীজুল হক সাহিত্য ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্যে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে ‘সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার’, ‘যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার’, ১৯৮৯ সালে ‘বাংলা একাডেমী’ পুরস্কার ও ‘মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার’ এবং ১৯৯৬ সালে ‘চাঁদের হাট পদক’ অন্যতম।
শব্দ ও ছন্দ ও বিষয়ের পরিমিতি বোধ সম্পন্ন প্রিয়ভাষী কবি আজীজুল হক দেশ, মাটি ও মানুষের কাছে তাঁর দায়বদ্ধতা পরিশোধ করে ২৭ আগস্ট ২০০১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
আজীজুল হক ১৯৩০ সালের আজকের দিনে (২ মার্চ) মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার তারাউজাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment