Press "Enter" to skip to content

পঞ্চমুখী শিব- শিব বা মহাদেবের পাঁচটি কাজ সৃষ্টি করা,পালন করা, বিশুদ্ধ করা,আচ্ছাদিত করা এবং উন্মুক্ত করা…. ৷

Spread the love

ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫। আমাদের হিন্দুদের অন্যতম প্রধান মন্ত্র ” ওঁ নমঃ শিবায় ” ৷ বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টির আগে মহাশূণ্যে যে শব্দতরঙ্গ ছিল তাই “ওম ” ৷ যুগ যুগ ধরে হিন্দু সাধক মুনিরা ওম উচ্চারণ করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তপস্যায় নিমগ্ন থেকেছেন ৷ এই মন্ত্রের শক্তি মানব মনের বিশুদ্ধ অন্তঃসত্ত্বাকে জাগ্রত করে ৷” ন, ম, শি, বা, য় ,” এই মন্ত্রে আমরা মহাদেবের জপ করি ৷ ন মানে মাটি , ম অর্থে জল , শি হলেন প্রতিভূ , বা মানে বায়ু বা বাতাস এবং য় হলেন সবকিছুর প্রতিনিধিস্বরূপ ৷ আমাদের জীবনে এই পাঁচ অক্ষর পাঁচ অঙ্কের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে ৷ আমাদের পাঁচ ইন্দ্রিয় , পাঁচ আঙুল শুধু নয় জীব দেহ পঞ্চভূতে তৈরী ৷ শিব বা মহাদেবের পাঁচটি কাজ ৷ সৃষ্টি করা , পালন করা , বিশুদ্ধ করা , আচ্ছাদিত করা এবং উন্মুক্ত করা ৷পঞ্চভূতে আমরা তাঁর পাঁচটি কৃত্য দেখি ৷সৃষ্টি ভূমিতে , স্থিতি জলে , সংহার আগুনে , তিরোভাব বাতাসে এবং অনুগ্রহ আকাশে ৷ এই মন্ত্রে আমরা মাটির শক্তি , জলের তারল্য , বায়ুর গতি এবং অগ্নির উত্তাপ অনুভব করতে পারি ৷ সঠিক ভাবে ওঁ নমঃ শিবায় উচ্চারণ করে জপ করলে সবরকম অশুভ প্রভাব দূরে থাকে ৷ পাঁচ ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণে থাকে ৷শিবের পাঁচ মুখের সদ্যোজাত সৃষ্টিকর্তা হলো পৃথিবী বা ভূমি তত্ত্ব , বামদেব হলেন পালন কর্তা যা জল তত্ত্ব , রুদ্র মুখূ তিনি সংহারকারী বা অগ্নি তত্ত্ব , মহেশ্বর মুখে তিনি তিরোভাব করেন যাকে বলা বায়ু তত্ত্ব আর সদাশিব মুখে তিনি আমাদের অনুগ্রহ করেন যা আকাশ তত্ত্ব ৷ শিব, যিনি আমাদের সবার মধ্যে রয়েছেন ৷ নম শব্দে তাঁকে প্রণাম জানাই ৷Om = Soul , Na= Earth , Mah = Water , Si = Fire ,
Va= Pranic Air , Ya = Sky . Its total meaning is that universal consciousness is ONE . শিব= শ+ই+ ব ৷ তিনি সত্য ও সুন্দর ৷ যাঁর আরেক নাম “হর” ৷ “হ” আকাশের বীজতত্ত্ব (হং) আর “র” হলো ক্রিয়া শক্তির বীজ ৷ যিনি সবকিছু গ্রহণ করেন আবার বের করে দেন ৷
“শিব” হলেন ওঁকার নাথ বা ওঁকারেশ্বর – যিনি রক্ষা করেন বা ঈশ্বর ৷ অ- ঋক্ , জাগ্রত ,ব্রহ্মা ( সৃষ্টি) ৷ উ- যজুঃ , স্বপ্ন , বিষ্ণু( স্থিতি) , তৈজস ৷ ম- সাম( বেদ) , রুদ্র ( লয় ) , সুষুপ্তি ৷ এই তিন অক্ষর মিলে ” ওঁ” ৷যা দিয়ে সগুণ ও নির্গুণ দুই উপাসনাই করা হয় ৷ সংসারের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও নির্মল রঙ হলো সাদা ৷ তাই হিমালয়ের তুষার শুভ্র বরফের মত শিবের রঙ সাদা ৷ উঁচু পর্বতের উপর সঞ্চরণশীল মেঘমালা তাঁর জটা ৷ সেই মেঘমালা থেকে বৃষ্টি ঝরে নদীর ( গঙ্গা) সৃষ্টি ৷ তাঁর চোখ দুটি ধ্যানমগ্ন ৷ যাঁর জ্যোর্তিময় কপালের তৃতীয় নয়নবরফের উপর রোদ পরার মত জ্বল জ্বল করে ৷শিব হলেন জ্ঞানরূপী আত্মা ৷ ঋক্ , সাম , যজুঃ , অর্থব ও আয়ুর্বেদ তাঁর পাঁচ মুখ ৷ যা থেকে সৃষ্টি হয়েছে সদ্ ধর্ম , গীতবিদ্যা , নৃত্যবিদ্যা , ভেষজবিদ্যা ও যোগ বিদ্যা এই পঞ্চমহাবিদ্যা ৷কেদার , মধ্য মহেশ্বর , তুঙ্গনাথ , রুদ্রনাথ ও কল্পেশ্বর – কেদারনাথ পর্বতের এই পাঁচ শৃঙ্গ ৷ পঞ্চ কেদার তাঁর পঞ্চমুখ ৷ যা আসলে ক্ষিতি , অপ ,তেজ , মরুৎ ও ব্যোম এই পঞ্চভূত ৷ হাতের ত্রিশূল দিয়ে তিনি আমাদের অন্ধবিশ্বাস ও বিভেদ দূর করেন ৷ যার তিনটি ফলা – স্বর্গ , মর্ত্য ও পাতাল ৷ যোনীপীঠ স্থিত শিবলিঙ্গ পুং ও স্ত্রী লিঙ্গের সংযোগের প্রতীক ৷ আসলে সৃষ্টির দ্যোতক ৷ পরম পুরুষ শিব বিশ্বের সব জীবের অন্তরাত্মারূপে অধিষ্টিত ৷ একই পরমা প্রকৃতি সব দেহেন্দ্রিয় ও মনোবুদ্ধির জননী ৷ মনোবুদ্ধিতে আত্মার যে রমন তাই শিব-শক্তির নিত্য মৈথুনলীলা ৷ যাকে কৃষ্ণ যজুঃবেদে বলা হয়েছে অর্ধনারীশ্বর রূপ ৷ লিঙ্গ মানে চিহ্ন ৷ চক্ষু, কর্ণ , নাসিকা , জিহ্বা , ত্বক এই পাঁচ জ্ঞানেন্দ্রিয় ৷ বাক , পাণি , পাদ , পায়ু , উপস্থ এই পাঁচ কর্মেন্দ্রিয় ৷ প্রাণ , আপান , সমান , ব্যান , উদান এই পঞ্চবায়ু এবং মন ও বুদ্ধি এই ১৭ টি পর্দাথ হলো আত্মার লিঙ্গ শরীর ৷ এই লিঙ্গ শরীর পুজো আসলে ব্রহ্মের পূজা আবার আত্মপুজো ৷ এরই প্রতীক “শিবলিঙ্গ” ৷ যার সাথে পুরুষত্ব ব্যঞ্জক ইন্দ্রিয় ও যৌন মিলনের কোন সম্পর্ক নেই ৷ পরম
ব্রহ্মকে সহজে বোঝার জন্য তিনি এভাবে পাথরের প্রতীকে লিঙ্গিত ৷ জ্যোর্তিরূপ শিব বিশ্বের প্রাণ বা আত্মা ৷ শিবলিঙ্গ উপাসনা তাই আত্মবিলাস , আত্মরমণ , আত্মোপলব্ধি ও আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্র৷”ত্রয়ীং , তিস্রো বৃত্তীস্ত্রিভুবনমথো ত্রীনপতি সুরান্ / অকারাদ্যৈর্ণৈস্ত্রিভিরভিদধত্তীর্ণ বিকৃতি ৷/
তুরীয়ং তে ধাম ধ্বনিভিরবরূদ্ধানমপূভিঃ /সমস্তং
ব্যস্তং ত্বাং শরণদ গৃণাত্যোমিতি পদম্ “( অর্থাৎ , হে শরণদাতা শিব ! শঙ্করাচার্য তাঁর বেদসার শিবস্তোত্মে লিখেছিলেন ” অজং শাশ্বতং কারণং কারণানাং / শিবং কেবলং ভাসকং ভাসকানাম্ ৷/ তুরীয় তমঃপারমাদ্যন্তহীনং / প্রপদ্যে পরং পাবনং দ্বৈতহীনম্ “৷অর্থাৎ শিব জন্মরহিত , শাশ্বত ,সব কারণের কারণ ৷ তিনি স্বস্বরূপে বিদ্যমান ৷ সব জ্যোতির জ্যোতি বা আলো ৷ তিনি তুরীয় , অন্ধকারের অতীত ৷ আদি ও অন্তহীন ৷ঋগ্বেদ, যর্জুবেদ ও সামবেদ তোমারই মূর্তি ৷ জাগ্রত , স্বপ্ন ও সুষুপ্তি তোমারই তিন অবস্থা ৷ পৃথিবী , অন্তরীক্ষ ও স্বর্গলোকও তুমি ৷ “নমস্তে নমস্তে বিভো বিশ্বমূর্তে , নমস্তে নমস্তে চিদানন্দমূর্তে ৷ নমস্তে নমস্তে তপোযোগগম্য নমস্তে নমস্তে শ্রুতিজ্ঞানগম্য “৷ তাই আমরা শিব গায়ত্রী জপ করি ,” ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি ৷ তন্নো রুদ্র প্রচোদয়াৎ “৷ওঁ নমঃ শিবায় ৷

ছবি -কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চমুখী শিবের ৷

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.