শু ভ জ ন্ম দি ন নী না গু প্তা
বাবলু ভট্টাচার্য : স্ট্রং, ফিয়ারসাম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, স্ট্রং পার্সোনালিটি সমৃদ্ধ নারী- এই বিশেষণগুলো নীনা গুপ্তা দারুণভাবে ধারণ করেন। জীবনে যতবারই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন, প্রতিবারই শক্ত হাতে দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন।
মেধাবী এই মানুষটি দিল্লী ইউনিভার্সিটি থেকে সংস্কৃতে মাস্টার্স ও পরবর্তীতে এম ফিল করেন। ছিলেন এন.এস.ডি (ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা) -র গ্রাজুয়েট।
নীনা গুপ্তার ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরুই হয়েছিল ১৯৮৩ সালের একাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার) সেরা মুভি জিতে নেয়া ‘গান্ধী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।
শুরুর দিকে করেছিলেন ‘জানে ভি দো ইয়ারো’ চলচ্চিত্রটি। যে মুভিটাকে বলা হয় অ্যাহেড অফ ইটস টাইম বা সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা চলচ্চিত্র। বলিউডের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র এটি।
যার শুরুটাই এরকম মুভি দিয়ে, তবুও সে তেমন এগোতে পারেনি! আপনার আমার খটকা লাগতে পারে। আর তাই জবাবটা নীনা নিজের মুখেই দিয়েছিলেন– ‘আমার কোন সেক্রেটারি ছিল না, আমি কোন পরিচালককে ব্যক্তিগতভাবে ফোনও করি নি কখনো। কখনো বড় বড় লোকদের সাথে দেখা করে কোন চরিত্রও চাই নি। যার কারনে আমার নামে ‘স্ট্রং উওম্যান’ পার্সেপশান তৈরি হয়। আর আমাদের সমাজে স্ট্রং উওম্যানদের নেগেটিভলিই নেয়া হয়। আর তাই আমি পেয়েছি সব নেগেটিভ, ভ্যাম্প বা ছোটখাট চরিত্র। আমি কখনোই প্লেইন, সিম্পল, ড্রামার চরিত্র পাই নি।’
এসব নেতিবাচক পরিস্থিতি পেছনে ফেলে সমানতালে চলচ্চিত্রের পাশাপাশি টেলিভিশনেও অভিনয় করেছেন। অভিনেত্রীর পাশাপাশি ক্যারিয়ারে যোগ হয়েছিল প্রযোজক ও পরিচালক তাকমাও। যে সময়টা পার করছিলেন গ্রেট বলা না-গেলেও নিজের মর্জিতে উড়ছিলেন বলে খারাপও বলা যায় না।
আর ক্যারিয়ারের সেই সময়ই পরিচয় হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট লিজেন্ড স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের সঙ্গে। পরিচয় থেকে পরিণয়ে পৌঁছাতে খুব একটা সময়ই লাগে নি। তারা লিভ ইনও শুরু করেন। নীনা গুপ্তা গর্ভবতী হয়ে পড়েন।
ভিভ ইন্ডিয়া ছেড়ে চলে যান উইন্ডিজ। আর নীনা এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে একাই লালন-পালন করতে লাগলেন। নীনার অনেক কাছের বন্ধুই তাঁকে সে সময় বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ফিরিয়ে দেন তাদের সবাইকে। নীনার বক্তব্য ছিল কারো করুণার পাত্রী হয়ে বেঁচে থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব না।
এবার পালা ক্যারিয়ারে মন দেয়ার। ব্যাক উইদ ব্যাং একটা কথা আছে না এরকমই বলা যায় নীনার ফিরে আসাকে। ‘woh chokri’ মুভিতে তার চরিত্রটি জিতে নেয় জাতীয় পুরস্কার। ছোট ছোট পদক্ষেপ ফেলে এগচ্ছিল কেরিয়ার।
এরমধ্যে ২০০৮ সালে আড়ালেই দিল্লীর এক চার্টারড অ্যাকাউন্টেন্টকে ভালবেসে বিয়ে করে সংসারীও হন। কিন্তু অভিনয়টা যে রক্তে মিশে আছে। একেই বা ছেড়ে দেন কীভাবে? ২০১৭ সালে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে একটা টুইট করেন। যেখানে লেখা ছিল- ‘আমি মুম্বাই থাকি এবং কাজ করি। আমি মোটামুটি ভাল অভিনয় করতে পারি। যদি কোন কাজ থাকে আমাকে বলো।’
এই সামান্য এক টুইটে বি-টাউন যেন আবারো গরম হয়ে ওঠে। আর এই এক টুইটেই তাঁর কাছে আসে ‘বাধাই হো’। আর এবারের কামব্যাকে প্রথমবারের মতো ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড নিজের ঝুলিতে। এবার যেন নীনা গুপ্তার সত্যিকারের সেকেন্ড ইনিংস শুরু হয়েছে। কাজও পাওয়া শুরু করেছেন।
কিছুদিন আগেই মুক্তি পেল ‘সুভ মাঙ্গাল যিয়াদা সাবধান’। প্রশংসা করা হচ্ছে সেটার পারফর্মেন্সেরও। আর তার সেই ছোট মাসাবা আজ বড় হয়েছে। হয়েছেন একজন সফল ফ্যাশন ডিজাইনারও।
নীনা গুপ্তা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণ করেছেন। তারমধ্যে, ১৯৮২ সালের ‘গান্ধী’ চলচ্চিত্রে তিনি মহাত্মা গান্ধীর নাতনীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও, মার্চেন্ট আইভোরি ফিল্মসের ‘দ্য ডিসিভার্স’ (১৯৮৮), ‘মির্জা গালিব’ (১৯৮৯), ‘ইন কাস্টোডি’ (১৯৯৩), ‘কটন মেরি’ (১৯৯৯) অন্যতম।
নীনা গুপ্তা ১৯৫৯ সালের আজকের দিনে (৪ জুলাই ) দিল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment