আজ সত্যজিৎ রায়ের “নায়ক” চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছিল
নায়ক আর অভিনেতা এই দুই শব্দের মধ্যে সরু একখানা আলপথ। এই পথ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছেন দীর্ঘদেহী পরিচালক। আসলে নিছক হেঁটে যাচ্ছেন না, আবিষ্কার করছেন। ইতিউতি সুযোগ পেলেই কুড়িয়ে নিচ্ছেন ফ্রেম, ধুলো ঝেড়ে নিচ্ছেন স্টোরিবোর্ডের।
একজন নায়ক আর একজন পরিচালক বস্তুত পৌঁছে যাচ্ছেন এমন এক চলচ্চিত্রের গহনে যেখানে নায়কের পর্দা সরিয়ে আমরা আবিষ্কার করছি একজন অভিনেতাকে। পরিচালকের নাম সত্যজিৎ রায়। আর অভিনেতার নাম উত্তম কুমার। যদিও মানুষের কাছে ‘হিরো’ মানেই উত্তম, মানুষের কাছে তখন উত্তম হিস্টিরিয়াও বটে।
‘নায়ক’ চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায় একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকার মনস্তত্ত্ব উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন। তার ভীতি, একাকীত্ব, অনুশোচনাবোধ এবং নিরাপত্তাহীনতার মতো বিষয়গুলো সুচারুভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এই চলচ্চিত্রে।
অরিন্দম মুখোপাধ্যায় চলচ্চিত্র জগতের একটি সুপরিচিত মুখ। একটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নেওয়ার জন্য বিমানের টিকিট না পেয়ে তিনি কলকাতা থেকে দিল্লী ট্রেনে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে ট্রেনের রেস্তোরাঁয় তার সাথে পরিচয় ঘটে অদিতি সেনগুপ্ত নামের এক শিক্ষিত রুচিশীল তরুণীর।
‘আধুনিকা’ নামে একটি মেয়েদের পত্রিকা সম্পাদনা করে সে। পত্রিকাটিকে জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে সে অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হয়।
কথায় কথায় প্রকাশ পায় অরিন্দমের নানামাত্রিক অনুভূতির কথা। মূলত অরিন্দমের এই মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধানই ‘নায়ক’ চলচ্চিত্রের কাহিনির ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। পাশাপাশি সমান্তরালে সৃষ্ট আরও কিছু চরিত্রের মাধ্যমে সমাজের সুযোগসন্ধানী নোংরা রূপটির প্রতি ঘৃণা প্রকাশিত হয়েছে।
কাহিনিভিত্তিক বা ঘটনাভিত্তিক না হয়ে সত্যজিৎ রায়ের এ চলচ্চিত্রটি অনেকটা বিষয়ভিত্তিক। কোন ঘটনা বা গল্প এই নির্মাণটিকে এগিয়ে নেয়নি, বরং একটি মনস্তাত্ত্বিক অনুভব বা বিষয় দ্বারা তাড়িত হয়ে সত্যজিৎ রায় তার ‘নায়ক’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন।
বাবলু ভট্টাচার্য : কাহিনির প্রয়োজনে এখানে চরিত্র সৃষ্টি হয়নি, বরং চরিত্র থেকেই টুকরো টুকরো গল্প বের করে এনেছেন পরিচালক।
১৯৬৬ সালে বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ডে’র পাশাপাশি ‘শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম’ এবং ‘শ্রেষ্ঠ কাহিনি ও চিত্রনাট্য’ বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে ‘নায়ক’।
১৯৬৬ সালের আজকের দিনে (৬ মে) মুক্তি পেয়েছিল ‘নায়ক’।
চলচ্চিত্রটিতে নায়ক অরিন্দমের চরিত্রে অভিনয় করেন মহানায়ক উত্তমকুমার এবং অদিতির চরিত্রে শর্মিলা ঠাকুর।
Be First to Comment