স্মরণঃ না রা য় ণ সা ন্যা ল
বাবলু ভট্টাচার্য : সিভিলের স্নাতক নারায়ণ সান্যাল আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি সুপরিচিত ও বহুমুখী লেখক। সান্যাল একজন ঔপন্যাসিক হিসেবেই বেশি পরিচিত হলেও, তিনি পেশায় একজন বিশিষ্ট সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।
নারায়ণ সান্যাল ১৯২৪ সালের ২৬ এপ্রিল নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন।
নারায়ণ সান্যালের আদি নিবাস দিয়া, কৃষ্ণনগর। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা। ১৯৪৮ সালে শিবপুর বি. ই কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। তিনি ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (ইন্ডিয়া )-এর ফেলো ছিলেন। তিনি ছিলেন সরকারি বাস্তুকার। ১৯৮২ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন৷
নারায়ণ সান্যাল নানা বিষয়ে বহু বই লিখেছেন। তাঁর বেশ কিছু বই থেকে সিনেমা তৈরি হয়েছে। শিশু সাহিত্য থেকে সায়েন্স ফিকশন, শিল্প সমালোচনা, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, মনস্তত্ত্ব, প্রযুক্তি, উদ্বাস্তু সমস্যা, ইতিহাস বিষয়ক বই থেকে সামাজিক উপন্যাস পর্যন্ত ছিল তাঁর অবাধ বিস্তার।
তাঁর লেখা গোয়েন্দা কাহিনি ‘কাঁটা সিরিজ’ নামে পরিচিত। যেখানে মূল চরিত্র ব্যারিস্টার পি. কে বাসু। নিত্য নতুন বিষয়বস্তু নির্বাচন তাঁর রচনাশৈলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ৷
সাহিত্য জগতে তিনি ‘বকুলতলা পি. এল. ক্যাম্প’ ও ‘দন্ডক শবরি’ গ্রন্থের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি পি. ডব্লু. ডি – তে চাকরি করাকালীন দন্ডকারণ্য অঞ্চলে তাঁর পোস্টিং হয়। জীবনের অভিজ্ঞতায় এই দুটি উপন্যাস লেখেন যা বিদগ্ধ পাঠক মহলে সমাদৃত হয়।
তাঁর বিখ্যাত রচনাগুলি হল : বিশ্বাসঘাতক, ষাট একষট্টি, হে হংসবলাকা, নক্ষত্রলোকের দেবতাত্মা, আবার যদি ইচ্ছা করো, অরণ্য দন্ডক, অশ্লীলতার দায়ে, না মানুষের পাঁচালি, রূপমঞ্জরী, অজন্তা অপরূপা। আদিম মানুষ থেকে মানুষ সভ্য হয়ে ওঠার ঘটনাক্রম নিয়ে তাঁর কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি ‘নক্ষত্রলোকের দেবতাত্মা’৷
তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা আমেরিকার প্রথম পরমাণু বোমা তৈরির ম্যানহাটন প্রজেক্ট নিয়ে লেখা ‘বিশ্বাসঘাতক’৷ নানা ধারার রচনা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এই ক্ষুরধার লেখনীর অধিকারী মানুষটি বাংলা সাহিত্যে বিশিষ্ট স্থান দখল করে নিয়েছেন৷
নারায়ণ সান্যাল তাঁর সাহিত্যসৃষ্টির স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার (অজন্তা অপরূপা), বঙ্কিম পুরস্কার (রূপমঞ্জরী) এবং সত্যকাম চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ কাহিনির জন্য বি. এফ. জে. এ পুরস্কার।
নারায়ণ স্যানাল ২০০৫ সালের আজকের দিনে (৭ ফেব্রু) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment