সুদীপ্ত চন্দ : কলকাতা, ৫ অক্টোবর ২০২২। দূর থেকে মাইকে ভেসে আসছিল কথা গুলো…….
দয়া করে ফুল ছুড়ুন, ফল ছুড়বেন না। মন্ডপে গিয়ে শুনলাম কোনো মহিলার কোলে থাকা বাচ্ছার হাতে একটা পুজোর শশা ছিল। সবাই ফুল ছুড়ছে দেখে সে শশা ছুড়ে ফেলেছিল। যা গিয়ে পুরুতঠাকুরের মাথায় লাগে। তাই এই আবেদন। ভুল করে কেউ যদি নারকেল, তরমুজ ছুড়ে দেন তাহলে কেলেঙ্কারি হবে এই ভেবে।
মন্ডপের ভিতরে….চটি রাখার যায়গা। ১).ওমা,আমার নতুন চটিটা কোথায় গেল! এখানেই তো রেখেছিলাম। ২) .আমি হিলওয়ালা জুতো রেখে গেলাম, তুমি গামবুট ফেরত করছ কেন! আমি কি তিব্বতের মন্ডপে পুজো দিতে এসেছি? ৩) ও মাগো আমার নতুন চটিটা ঝেড়ে, কে একটা ছেড়া চটি রেখে গেছে।
মন্ডপে অঞ্জলির জায়গায়-ঠিক যেন ফুলের শপিং কমপ্লেক্স।
১.এই যে আমায় একটু হাতে জল দিন। একটু ভালো দেখে ফুল দেবেন। ২.এমা আমায় বেলপাতা দেননি।জবা ফুল আছে? থাকলে একটা দিননা। ৩. আরেকটু দিন এটা দিয়ে তিনবার কি করে দেব! এতো শুধু পাতা একটু ফুল দিন না। ৪.আমায় আরেকটু ফুল দিননা। ভুল করে একবারে দিয়ে ফেলেছি।
অঞ্জলি শুরু…কিছুটা মন্ত্র বলার পড় পুরুতঠাকুরের বিকট উচ্চারণ ” যা দেবী ইয়াক্” …. অঞ্জলি দেওয়ারত সবাই বললেন “যা দেবী ইয়াক্”। কেউ, কেউ ফিসফিস করে বলছে… এটা আবার কোন মন্ত্র!! আগে তো কোনোদিন বলিনি। আরেকজন বলল ইয়াক, তার মানে চমরীগাই। দেবী কি চমরীগাইও বধ করেছিলেন!!!একজন বিদেশিনি যিনি এই মন্ত্রের কিছুই বুঝছিলেন না। এই একটা চেনা শব্দ পেয়ে আনন্দে বলেই ফেললেন,”ইউ ওরশিপ ইয়াক ওলসো। আই নেভার নিউ দিস বিফোর। “অন্যদিকে পুরুতঠাকুর বললেন “না,না ওটা ইয়াক্ হবেনা। আমার মাথায় পড়া কুচোফুল মুখে ঢুকে গিয়েছিল। নিন এবার শুরু থেকে বলুন।”
পরের ব্যাচে অঞ্জলি দিতে আসা অপেক্ষমান ভক্তগন। ১.ওমা কি সুন্দর তোর শাড়িটা। কে দিল শাশুড়ি? উওরে -তিনি দেবেন শাড়ি! আমি বাবা নিজের টাকায় কিনেছি।(পুজোর পন্ডপ হোক বা বাজার কিছু মহিলার শাশুড়ির এমন তারিফ করতে প্রায় দেখা যায়।) ২. এই তুমি আমার চটিটা ঠিক করে রাখো। আমার চটির উপর অন্যের চটি চাপিয়ে দিওনা। আমার চটিটা ব্র্যান্ডেড। ৩. এই গত বছর তো তিন টাকা নিয়েছিলে এই বছর পাঁচ টাকা বোলছো কেন? চার টাকা নাও। একটু তো চটিটা রাখবে।(চটি রাখাতেও দরদাম করা মহিলারা)।
ফুলের দোকান-
১.পদ্ম কতো দাদা? – ২০ টাকা। -বাবা এত দাম! আর পাঁচ টাকা দিলে চকোবার হয়ে যাবে। আমায় একটু কুচোফুল দিয়ে দিন। ২. মালা কত?- এটি গড়ে মালা , মোটা আছে । ৮০ টাকা পড়বে।- বাবা ভীষণ দাম বলছো। থাক ৩০ টাকায় হলে দাও। (দামি গাড়ি থেকে নামা মহিলা, পড়নে দামি শাড়ি, সাবেকি গয়না)।
সব মিলিয়ে অষ্টমী এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
মরাল অফ দ্যা গল্প-
নানা মনের মিলনক্ষেত্রে হয় অঞ্জলি।
Be First to Comment