Press "Enter" to skip to content

‘নাটক’ হয়ে গেল আর্ট, আর ‘ম্যাজিক’ বা ‘ঐন্দ্রজাল বিদ্যা’ হয়ে গেলো–‘ঘেচু কলা’ !! বা বা বা!!! কি সুন্দর যুক্তি !!! আসলে ওনারা সে সব দৃশ্য করে দেখাতে পারেন না, তাই এড়িয়ে গেছেন।
আমরা দক্ষ জাদুশিল্পীরা তা পারি……..।

Spread the love

পি. সি. সরকার : বিশ্বখ্যাত ম্যাজিশিয়ান ও বিশিষ্ট লেখক। ১৪, নভেম্বর, ২০২০। ‘ঋগ্বেদ’-এ নাটকের প্রথম প্রকাশ নাকি মর্তের রাজা ‘পুরুরূবা’র সঙ্গে স্বর্গের অপ্সরা ‘ঊর্বশী’র প্রেমের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে। রাজা তাঁকে স্পর্শ করতে যাচ্ছেন, কিন্তু উর্বশী ধরা দিচ্ছেন না, অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছেন।
আমাদের মাননীয় নাট্যকার দাদাদের কাছে প্রশ্ন, ঐ দৃশ্যে নাটকের প্রথম প্রকাশ তো হলো, কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে ‘অদৃশ্য’ হয়ে ‌গিয়ে কি ম্যাজিক ব্যবহারের প্রমাণটাও কি হলো না ? ‘নাটক’ হয়ে গেল আর্ট,আর ‘ম্যাজিক’ বা ‘ঐন্দ্রজাল বিদ্যা’ হয়ে গেলো–‘ঘেচু কলা’ !! বা বা বা!!! কি সুন্দর যুক্তি !!! আসলে ওনারা সে সব দৃশ্য করে দেখাতে পারেন না, তাই এড়িয়ে গেছেন।
আমরা দক্ষ জাদুশিল্পীরা তা পারি।
এই রকম জাদুর সাহায্য নিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে নাটক উপস্থাপন করাকে চরক মুনির নাট্যশাস্ত্রে , বৈদিক নাম হিসেবে, বলা হয়েছে ‘ডিম’ ধর্মী নাটক।


বৈদিক শাস্ত্রে আছে, ব্রহ্মার লেখা প্রথম নাটক হচ্ছে দুটো – ‘ত্রিপুরদহ’ এবং ‘অমৃত-মন্থনম্’ । এসব মঞ্চস্থ হতেই , এতো সত্যি সত্যি মুণ্ডচ্ছেদ, অদৃশ্য হওয়া, ইত্যাদি দেখে দর্শক মণ্ডলীস্থ ‘অসুরেরা’ হৈ হট্টগোল শুরু করে। তখন ‘প্রডিউসার’ ইন্দ্র এসে নাকি বলেন – “এগুলো সত্যি নয়, ইন্দ্রজাল! কৌশল, মায়া!” দর্শকেরা শান্ত হন।
তখন থেকেই ইন্দ্রধ্বজ পতাকা
পুঁতে নাকি “মন্ঞ্চে যা দেখছেন, তা সত্যি নয়, মায়া, অভিনয়” এই কথাটা জানান দেবার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল।
ক’জন এ কথা জেনে ‘ম্যাজিক’ আর্ট নয়, এমন আনতাবরি মন্তব্য করেছেন? আরও বুঝতে গেলে কবিগুরুর “ম্যাজিসিয়ান” কবিতাটা পড়ে নিতে পারেন। ‘সাহিত্য’ গ্রন্থেও আর্টের বর্ণনাটা পড়তে পারেন।
লর্ড ম্যাকলে ভারতীয় সভ্যতাকে ছোট দেখাবার জন্য নাকি ম্যাক্সমূলরকে প্রচুর টাকা দিয়েছিলেন।উনি অনেক ক্ষতি সাধন করেছিলেন। পরে (বিবেকের তাড়নায়?) অন্যান্য পণ্ডিতদের চাপে কথা ফেরত নেন। সত্যি মিথ্যে জানিনা। ইতিহাস তো তাই বলে । এটা কি ভারতের রোম্যান্টিজম’কে
নষ্ট করার ধান্ধা ?


প্রাচীন ভারতে স্টেজে শো করার রেওয়াজ ছিলো না। রাজসভায়, রাজাদের আর্থিক সাহায্যে হোতো। চারদিকে থাকতেন দর্শক। রাজা-মহারাজাদের জমানা শেষ হতেই শিল্পীরা অনাথ হয়ে যান।
জাদুকরদের স্থান হয় পথের ধারে, গাছতলায়। তখন পাশ্চাত্যে ম্যাজিকের কোনও অস্তিত্বই ছিলো
না। বলুন দেখি জাহাঙ্গীরের আমলের পাশ্চার্যের এক জাদুকরের নাম?
ওরা ‘জাদুর দেশ’ বলে দেখতে ভারতবর্ষে আসে। পথের মাদারিদের দ্যাখে। পয়সার টোপ দিয়ে শেখে । দেশে ফিরে অতিরঞ্জিত করে গপ্পো করে। সেই গপ্পোকে বাস্তবে আনতে অনেক বিজ্ঞান, চাতুরী, ব্যবহার করে তৈরি হয় রোড শো, পার্লারের শো,


স্টেজ শো, তারপর টেলিভিশনের শো— এখন এসেছে শো-নেই কিন্তু শো-নিয়ে আঁতলামি করার
মোবাইলের শো…ম্যাজিকের যন্ত্র বিক্রী করার শো, ইত্যাদি। বড় ম্যাজিকের জন্য দরকার রাজসিক খরচ। সেরকম মানসিকতা, কল্পনা,পরিবেশ।

আমি রাস্তায় মাদারি দেখলেই ওদের অনুষ্ঠান রেকর্ড করে রাখি। ওদের গায়ে ঐতিহ্যময় পরিষ্কার পোষাক দিই, ইজ্জত দিই। ভালোভাবে দেখাতে পারার জন্য শো পাইয়ে দিই। ওঁরাও আমার জন্মদিনে উপহার দেয়। আমাদের ইন্দ্রজাল ভবনের এক তলায় মাদারি মঞ্চ বানিয়েছি ঐতিহ্য রক্ষার খাতিরে। বাবা বলতেন ওরা আমাদের চেয়ে চার গুণ ভালো শিল্পী। আমরা তিন দিক ঢাকা মঞ্চে শো করি, ওরা চারদিক খোলা অবস্থায় শো করেন।ভারত সরকার বা পঃবঙ্গ সরকার কি করলেন, দরকার নেই।

পি সি সরকারেরা জান-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে লড়ে যাও। আর্টের মৃত্যু হয়না। হতে দেব না।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *