সৃজিৎ চট্টরাজ : কলকাতা, ১৩ এপ্রিল ২০২২। ২১শতাব্দী বিশ্ব স্টাইল ও ফ্যাশনের সুনামি ঘটাচ্ছে। ফ্যাশন শব্দটির সঙ্গে স্টাইল ও ডিজাইন শব্দ দুটির এক যোগসূত্র আছে। আজ থেকে বহু বছর আগেই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, স্টাইল হচ্ছে ব্যক্তির স্বাতন্ত্র আর ফ্যাশন হচ্ছে গড্ডালিকা প্রবাহ। ফ্যাশনের উৎপত্তি স্টাইল থেকে আর স্টাইলের পূর্ণ প্রকাশ হয় ফ্যাশনের মাধ্যমে। ফ্যাশন তৈরি হয় কারখানায় আর স্টাইল বনেদি কারু শিল্প। ফ্যাশন ও স্টাইল একটি ছাড়া অন্যটি অর্থহীন।
অস্বীকার করার উপায় নেই, সৌন্দর্য বিকাশের গুপ্ত রহস্য হলো স্টাইল। স্টাইল ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা ও সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ। সেই স্টাইল যখন বৃহত্তর সমাজ অনুকরণ করে তখনই তা হয়ে যায় ফ্যাশন। বাংলায় একটা সময়ে উনিশ শতকের শেষ ও বিশের শুরুতে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ধুতি, পাঞ্জাবি ও পাজামা পড়ার নতুন স্টাইল প্রচলন করেন। পার্সি মেয়েদের কুচি দিয়ে শাড়ি পরার স্টাইলকে বাংলায় উপহার দেন দেশের প্রথম আই সি এস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। যা ব্রাহ্মীকা স্টাইল নামে পরিচিত ছিল। পোশাক আজ বিশ্বজনীন সম্পর্কের বার্তা বহন করে।
স্বীকার করতেই হয় মধ্য যুগে ইসলামিক প্রবাহেই ভারতে সেলাই করা পোশাকের প্রচলন শুরু। এখন বেশ কিছু শৈল্পিক চিন্তার পেশাদার স্টাইলের পরিকল্পনা করছেন । এমন কিছু পোষাক তৈরি হচ্ছে, যার অস্তিত্ব শুধুক্যাট ওয়াকের মঞ্চে। ফ্যাশন আজ আর উচ্চবিত্তের সমাজে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে গেছে আম জনতার কাছে। তাই রাজ্যে তথা কলকাতা জুড়ে বহু সংস্থাই ফ্যাশন ও স্টাইল শো করছেন। তাতে যোগ দিচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত বাঙালি ও অবাঙালির সন্তানেরা। কলকাতার এক এমনই এক পেশাদার সংস্থা স্টাইল আইকন। সংস্থার কর্ণধার সুজয় পাল পূর্ব কলকাতার নজরুল তীর্থ অঙ্গনে বেশ কিছু ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে গত ১০এপ্রিল অনুষ্ঠিত করলেন স্টাইল আইকন নববর্ষ সম্মান ২০২২। সংবর্ধিত হন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার রাজনৈতিক নেতা নবকুমার বেতাল, রাহুল মুখার্জি, ফ্যাশন ডিজাইনার অরিজিৎ মাইতি, অরিজিৎ দত্ত, তেজস গান্ধী, মডেল পারমিতা ব্যানার্জি ও আকাশ বসাক ও অভিনেত্রী মৌবনি সরকার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের তরুণ মডেলরা যেমন ছিলেন, তেমনই ছিল অসংখ্য কচিকাঁচা। এই প্রসঙ্গে ফ্যাশন ডিজাইনার অরিজিৎ মাইতি বললেন, বড়দের মডেল হিসেবে গ্রুমিং করাটা একরকম, সবচেয়ে কঠিন ছোটছোট ছেলেমেয়েদের মঞ্চে উপস্থাপন করা। তবে আজকালকার অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের ছোট থেকেই ফ্যাশন ও স্টাইল সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান দিচ্ছেন। তাই বিনোদনের দুনিয়ায় বহু পেশাদার ডিজাইনার আসছেন। সবাই ভালো কাজ করছেন ।
অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অভিনেত্রী মৌবনী সরকার। তিনি বললেন,গত দুটো বছর আমরা হারিয়েছি জীবন থেকে। যা কোনোদিনই ফিরে পাবো না। এখন সেই ঝড় কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছি। আমি ২০১৮তে মিস্ ইন্ডিয়া, মিস্ ইউনিভার্স হয়েছি। কিন্তু সেই আনন্দ উপভোগ করার সময় পাইনি। বাঙালির উৎসবে সব পুজোই সমান। আমার কাছে ছোট বড় নেই। আনন্দটাই বড় কথা। ফ্যাশন ও স্টাইলের দুনিয়ায় যোগ দিয়ে আনন্দ উপভোগ করাতেই তৃপ্তি।
অনুষ্ঠানের আয়োজক সুজয় পাল বলেন, যুগের দাবিতেই স্টাইল এখন বাঙালির সঙ্গী।আমরা করোনা পরিস্থিতি জয় করে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছি।আজকের এ্ই অনুষ্ঠান আমাদের উৎসাহিত করছে।
Be First to Comment