Press "Enter" to skip to content

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কবিতা যেমন লিখেছেন, তেমনই গান, নাটক, প্রহসন, প্রবন্ধ— সাহিত্যের নানা শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন……..।

Spread the love

স্মরণঃ দ্বিজেন্দ্রলাল (ডিএল) রায়

বাবলু ভট্টাচার্য : বহুমুখী প্রতিভা বাংলা বড় একটা কম দেখেনি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাদ দিলে দ্বিতীয় নামটি অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বয়সে দু’বছরের ছোট দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন।

পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন বহুগুণান্বিত- সাহিত্যিক, সংগীতবিশারদ, গীতরচয়িতা ও বহুভাষাবিদ। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হরলাল রায়ও সুগায়ক ছিলেন। কনিষ্ঠ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ও। সংগত কারণেই নানাভাবে কৃষ্ণনগরের এই পরিবার একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।

কৃতী ছাত্র ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। এমএ পাশ করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। কৃষিবিদ্যা বিষয়ে শিক্ষা অর্জনের জন্য সরকারি বৃত্তি নিয়ে গিয়েছিলেন বিলেতও। সাহিত্যচর্চাও শুরু তখন।

দেশে ফিরে সরকারি চাকরিতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের গ্রেড লাভ করেন এবং বিভিন্ন বিভাগে রাজপুরুষের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। স্বদেশাত্মক ও স্বাধীনচেতা মনোভঙ্গির কারণে চাকরি-জীবন তাঁর সুখকর হয়ে ওঠেনি।

১৮৮৭ সালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বিয়ে করেন সুরবালা দেবীকে। বিলেত যাওয়া আর ব্রাহ্মকন্যা বিয়ের জন্য সামাজিক অসহযোগিতার শিকারও হতে হয় তাঁকে। বাঙালি সমাজের কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতা তাঁকে বিব্রত করে। কারণ, তিনি মনেপ্রাণে বাঙালি ছিলেন এবং সাহেবিয়ানার প্রতি তাঁর কোনো আকর্ষণ ছিল না। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কর্মজীবন মসৃণ ছিল না।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের দাম্পত্য জীবনের দৈর্ঘ্যও ছিল স্বল্প পরিসরের। ১৯০৩ সালে একটি পুত্র ও একটি কন্যা রেখে মারা যান। সেই পুত্রই খ্যাতকীর্তি দিলীপকুমার রায়।

স্ত্রীর মৃত্যু তাঁকে বেশ শোকগ্রস্ত করে রেখেছিল। এই শোকব্যুহ ছিন্ন করার জন্য তিনি ‘পুনর্মিলন’ নামে একটি ভ্রাম্যমাণ মাসিক ইষ্টগোষ্ঠী সভা চালু করেন। এখানে তিনি নিয়মিত কবিতা পাঠ করতেন, হাসির গান পরিবেশন করতেন।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কবিতা যেমন লিখেছেন, তেমনই গান, নাটক, প্রহসন, প্রবন্ধ— সাহিত্যের নানা শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার গানও গণমানুষের চিত্তের চিত্রায়ণ হয়ে উঠেছিল। কৌতুকরসের গীত-রচনায় সমকালে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। দেশাত্মবোধ জাগরণে তার সংগীতের ভূমিকা ছিল অসাধারণ।

তার নাটকগুলি শিল্পোত্তীর্ণ, সাহিত্য হিসেবে পাঠযোগ্যতা উন্নতমানের। রবীন্দ্র-সমকালে রবীন্দ্রনাথের পরেই তাঁর অবিসংবাদিত স্থান।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কবিতা বা গীত রচনা ছাড়াও নাটক-প্রহসন রচনার মধ্য দিয়ে তার প্রতিভার যে-পরিচয় পাওয়া যায়, তা কেবল প্রশংসনীয়ই নয়, তা সময়োপযোগী এবং তাৎপর্যমন্ডিত।

উনিশ শতকে কাব্য-সংগীতসম্পদের একটি বিশিষ্ট শাখা নাট্যসংগীতরূপে বিকশিত হয়েছিল। দ্বিজেন্দ্রলালই মঞ্চনাটকের সংগীতের বিশিষ্টতাকে আশ্চর্যভাবে বদলে দিয়েছিলেন, যদিও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ-রবীন্দ্রনাথের নাট্যসংগীত এক্ষেত্রে দ্বিজেন্দ্রলালের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটকে প্রেমবিষয়ক, দেশপ্রীতিমূলক এবং পরিহাসভাবমূলক— মূলত এই তিন ধরনের গানই লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে, প্রেমসংগীতের তুলনায় দেশাত্মবোধক ও জাতীয়তাবাদমূলক গানগুলির ভাষা-ছন্দ-সুরে দ্বিজেন্দ্রলাল এমন একটি মৌলিকতা প্রকাশ করেছেন যা দুর্লভ। উনিশ শতকের সংগীতকারগণ কথা ও সুরের অপূর্ব সমবায়ে বাংলা গানকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৯১৩ সালের আজকের দিনে (১৭ মে) ৫০ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *