বাবলু ভট্টাচার্য : বিশাল আকারের কুমির কিংবা বিষধর সাপের সামনে যে দুঃসাহসী মানুষকে দেখা যেত তার নাম অনেকেরই জানা আছে। বিখ্যাত এই ব্যক্তি স্টিভ আরউইন। তিনি কুমির, সাপ এবং মাকড়সার মতো বিষাক্ত প্রাণী নাড়াচাড়ায় বেশ দক্ষ ও সাহসী ছিলেন। পাশাপাশি ছিলেন বেশ জনপ্রিয় এবং দুঃসাহসী টিভি ব্যক্তিত্ব। ১৯৯২ সালে ডিসকভারি চ্যানেলে জনপ্রিয় সিরিজ ‘ক্রোকোডাইল হান্টার’ প্রদর্শিত হওয়ার পর অনবদ্য উপস্থাপনের কারণে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিলেন আরউইন। জনপ্রিয় এবং দুঃসাহসী স্টিভ আরউইন মাত্র ৪০ বছর বয়সে সমুদ্রতলে ‘ওশানস ডেডলিয়েস্ট’ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্রের শ্যুটিংয়ের সময় স্টিং রে মাছের লেজের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলে কুইন্সল্যান্ডের পোর্ট ডগলাসে গ্রেট ব্যারিয়ার পর্বত শ্রেণীতে প্রামাণ্য চিত্রটির শ্যুটিং হচ্ছিল। স্টিভ আরউইনের মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নিউ ক্যাসলের মেটার হাসপাতালের বিষ বিশেষজ্ঞ জিওফ ইসস্টির বলেছিলেন- ‘বুকে ছুরি মারলে যেমন হয়, স্টিভের মৃত্যু হয়েছে ঠিক সেভাবে। বিষ ঢুকলে তাকে ওষুধ দিয়ে বাঁচানো যেত। কিন্তু স্টিং রে মাছের লম্বা লেজের করাতের অংশটি তার হৃৎপিন্ডের এপাশ-ওপাশ ছিদ্র করে দেয় এবং এর ফলেই তার অকাল মৃত্যু হয়েছে।’

ছোটবেলা থেকেই স্টিভ আরউইন ছিলেন ভীষণ সাহসী। বিপদ শব্দটি তার মনে কোনদিন ঠাঁই পায়নি। তার বাবা-মা কুইন্সল্যান্ডে সরীসৃপ পার্ক পরিচালনা করতেন। মাত্র নয় বছর বয়স থেকেই স্টিভ কুমির ধরতেন। ১৯৯১ সালে এই পার্কটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন স্টিভ। এবং পার্কটির নাম দেন ‘অস্ট্রেলিয়া জু।’ ১৯৯২ সালে মার্কিন তরুণী টেরির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৯২ সালে ‘ক্রোকোডাইল হান্টার’-এর পর কুমির শিকারের ওপর প্রায় ৫০টি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করেছিলেন তিনি।তবে প্রশংসার পাশাপাশি তার কিছু কর্মকাণ্ড নিন্দাও কুড়ায়। একবার স্টিভ তার এক মাসের ছোট ছেলে বব ক্লারেন্সকে কোলে নিয়ে ১৮ ফুট দীর্ঘ একটি কুমিরকে মাংস খাওয়ান। টিভিতে এ দৃশ্যটি দেখে দর্শকরা আঁতকে ওঠে। বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সংস্থা, শিশু উন্নয়ন সংগঠন এমনকি স্টিভের ভক্তরাও এর প্রতিবাদ করেন।

আরেকবার এন্টার্কটিকায় শ্যুটিং করতে গিয়ে তিনি বিরল প্রজাতির সিল, তিমি ও পেঙ্গুইনদের বিরক্ত করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। ২০০৪ সালে ‘অস্ট্রেলিয়া জু’ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্রে তাঁকে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। প্রামাণ্য চিত্রটিতে স্টিভ তাঁর এক হাতে নিজের এক মাস বয়সী সন্তানকে রেখে অন্য হাতে একটি বিরাট সাপ নাড়াচাড়া করে সমালোচনার মুখোমুখি হন।
স্টিভ আরউইন ২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment