প্রবীর রায় : প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা। কলকাতা, ২৪ নভেম্বর ২০২২। একটা কথা আজ সবার সঙ্গে শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে এখন প্রচুর তরুণ ছেলে মেয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে আসে কাজের জন্য। বড় পর্দা, ছোট পর্দায় অনেক কাজ হচ্ছে- সেটা যেমন ঠিক, তেমনি কম বয়সী ছেলেমেয়েদের সাঙ্ঘাতিক ভীড়। সবাই কাজ খুঁজছে… সবাই পরিচিতি পেতে চাইছে। তাদের অনেকেই প্রতিভাবান, আবার সবাই যে অভিনয় বা সঙ্গীতে প্রবল পারদর্শী, তা’ও কিন্তু নয়। Visual medium – এ মুখ দেখালে চটজলদি একটা identity তৈরি হয়, সেটাই অন্যতম কারণ।
একটা বিষয় নির্দ্বিধায় বলা যায় – এই প্রজন্মের মধ্যে commitment- এর অভাবটা বড় বেশী স্পষ্ট। Print media, electronic media, social media – এই ত্র্যহস্পর্শের মহিমায় অনেকেই নিজেদের “Celebrity” ভাবতে শুরু করে। ব্যস… ওখানেই তাদের পথ অবরুদ্ধ হয়ে যায়। অথচ, প্রকৃত শিল্পী আজীবন শুধু শিখেই চলেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্মরণাতীত কাল থেকে আজও যাঁদের সামনে আমরা আনত হই, তাঁরা সারাটা জীবন শিক্ষার্থী হয়েই থেকেছেন। জীবনের প্রান্তসীমায় পৌঁছেও তাঁরা নিরন্তর বলেছেন…”এখনও শেখা শেষ হয় নি”। শিল্পমাধ্যমের প্রতি এই অনুরাগ, পূর্বসূরীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, নিজের পেশার প্রতি মমত্ববোধ – তাঁদের #committed করে রেখেছে আজীবন। গ্ল্যামার দুনিয়ার মোহিনী মায়ায় তাঁরা বিভ্রান্ত হন নি।
সেকাল আর একালের এই তফাৎটা আমার মতো প্রবীণ মানুষের চোখে খুব স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। ভীষণ অবাক লাগে যখন দেখি- নিজেদের কাজের প্রতিও তাদের অনুরাগের অভাব। সিনেমা হোক, সিরিয়াল হোক- কাজ পাওয়ার জন্য তাদের অনেক অনুরোধ, অনেক উমেদারী… কাজটা পাওয়া হয়ে গেলে কোনো রকমে কাজ শেষ করেই তাদের দায়িত্ব শেষ। সেই project নিয়ে আর কোনো মাথাব্যথা নেই। কোনো রকম promotional activity নেই। সুদীর্ঘ কর্মজীবনে বহু নতুন মুখকে ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ করে দিয়েছি (সিরিয়াল, ফিল্ম, প্লেব্যাক — তাদের মধ্যে অনেকেই আজ সুপ্রতিষ্ঠিত)।
সম্প্রতি #অগ্নিমন্থন ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করার সুযোগ পেল দুটি মেয়ে, ছবিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করলো কয়েকটি নতুন মুখ … তাদের আর দেখতে পাচ্ছি না। এ ছবি এখনও রিলিজ করে নি (সামনের মাসে রিলিজ ), কিন্তু এইসব নতুন ছেলেমেয়েদের নিজেদের কাজের প্রতি আবেগ, দায়বদ্ধতাও উবে গেছে। যেন ছবিটার ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব শেষ!! Promotional post- এ তাদের reaction পর্যন্ত পাওয়া যায় না।
যত দিন যাচ্ছে, আন্তরিকতার অভাবটা বড় বেশী করে চোখে পড়ছে। এমন একটা ভাব… যেন দায়টা আমার।
Audio-visual –এর মতো গণমাধ্যমে যতোদিন এই #আমিত্ববোধ শেষ হয়ে #আমাদের সবার – এই মানসিকতা না তৈরি হবে, ততোদিন ভালো শিল্পী তৈরী হবে না… ভালো “সৃষ্টি” হবে না… হতে পারে না ।
Be First to Comment