অশোক দে: কেঁদুলি থেকে ফিরে ২১শে জানুয়ারি ২০২০ “দেহি পদপল্লবমুদারম্” এই ধ্রুব পদটি উচ্চারিত হলেই অতীত থেকে ভেসে ওঠেন কবি জয়দেব ও পদ্মাবতী। গীতগোবিন্দম্ রচয়িতার জন্মস্থান, এমনকী রাজা লক্ষণ সেনের সংগে গভীর যোগাযোগ ছিল কি না তা নিয়েও নানা মতভেদ আছে। কথিত আছে, কবি প্রতিদিন গঙ্গাস্নান সেরে পূজার্চনা করতেন। কেঁদুলি থেকে কাটোয়ার গঙ্গার ঘাট, এই দূরত্বে নিত্যদিন গঙ্গাস্নানে যাওয়ার মধ্যে ঐতিহাসিক সত্যতা না থাকলেও অজয় নদ এখনকার মতো ম্লান ছিল না।সেই সময় জোয়ারে গঙ্গার জল অজয়ে উঠে আসতো। যার শেষ সীমা ছিল কদমখন্ডী ঘাট। যেখানে প্রত্যেক দিন জয়দেব স্নান করতেন এবং গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন তাঁকে দেখা দিতে। এক পৌষ সংক্রান্তিতে তাঁর মনোবাসনা পূর্ণ করেন। সেই থেকে আজও লোকে ‘অজয় গঙ্গা’ বলে। এবং সেই প্রবাহমান বিশ্বাসে লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ পৌষ সংক্রান্তির পুণ্যদিনে অজয়ের জলে ডুব দিয়ে মনোবাঞ্ছা পূরণ করে। ‘অজয় গঙ্গা’র কাহিনি ধর্মমঙ্গল গ্রন্থে উল্লেখ আছে। পোড়ামাটি কারুকার্য শোভিত রাধাবিনোদ মন্দির অনেকটাই অক্ষত। এছাড়া রয়েছে কুশেশ্বর শিবমন্দির ও অষ্টদল পদ্মাসন, শ্রীশ্রী রাধাবল্লভ মন্দির, বেদনাশা বটাশ্রম ইত্যাদি। ঘুরে ঘুরে দেখা হল বাউল মঞ্চ,আখড়া-আশ্রমগুলো। নদী যত শীর্ণ হচ্ছে ততো বাড়ছে কীর্তনের আখড়া বা মঞ্চ। উচ্চকিত বাউল গানে (ডিজের প্রয়োগ) কান পাতা দায়! গতবারের তুলনায় লোক সংখ্যা কিছুটা কম। তিনদিনই হুড়াহুড়ি তেমন ছিল না। নদীর ধারে মহিলা-পুরুষের জন্য সারি সারি শৌচাগার রয়েছে অথচ পরিচ্ছন্ন নয়। এরজন্য আগত মানুষজনকেই বেশি দায়ী করা যায়! ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি এই দুদিনই সন্ধেবেলায় জমে উঠেছিল বাউল গানের আসর। তমালতলি, ভবা পাগলা, জয়দেব পদ্মাবতী বাউলমঞ্চ,মনেরমানুষ,শ্যামসখা, সত্যানন্দ-র আখড়া, সহজ মানুষ লালন মঞ্চ ইত্যাদি। বাউল তথা লোক গান পরিবেশন করেন রীনা দাস, সত্য।নন্দ দাস, লক্ষণ দাস (তমালতলি), সত্য দাস, গৌতম দাস, লক্ষণ দাস প্রমুখ বাউল। এছাড়া গেয়েছেন বাসুদেব বাগদি,রামপ্রসাদ বাগ, স্বরাজ ঘোষ- এর মতো শিল্পীরা। জয়দেব পদ্মাবতী বাউল মঞ্চে শেষদিন সকালে দেখা হল ১২৪ বছরের শিবানন্দ বাবার সংগে । এক বিরল অভিজ্ঞতা। কৌতুহলি হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম এত দীর্ঘ আয়ু পেলেন কী ভাবে? হেসে জানালেন সবই গুরুর কৃপা! এও জানালেন জীবনে মাছ-মাংস আহার করেননি! শেষে একটা অদ্ভুত ঘটনার কথা উল্লেখ করতেই হচ্ছে! মুম্বইতে চিকিৎসারত গীতিকার সুব্রত চৌধুরী যিনি এই প্রতিবেদকেরও বন্ধু। মুম্বই থেকে বাউল প্রেমী অর্চনা মন্ডলকে ফোনে জানান আমার সংগে যোগাযোগ করতে। অর্চনা এসে আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন তাদের জয়দেব পদ্মাবতী বাউল মঞ্চে। আশ্চর্য! সেই সময় সুব্রত-র লেখা ‘প্রাণগোবিন্দ প্রাণ সঁপেছেন রাধারানীর পায়ে’। গাইছিলেন বাসুদেব বাগদি। তিনিও সুব্রত-র মতো বর্ধমানে থাকেন এবং গানটিও পেয়েছিলেন ওর কাছ থেকে!
তিনদিনের জমজমাট জয়দেব মেলা….
More from GeneralMore posts in General »
- পরিবারে একত্রিত, বয়সে বিভক্ত: হেল্পএজ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন আন্তঃপ্রজন্মীয় বন্ধন কে জোরদার করার আহ্বান জানায়…।
- নতুন সংসার শুরু করার স্বপ্ন স্বামী স্ত্রীর চোখে, ভালোবাসার হাসি, প্লেনে চড়ার আনন্দ, বিদেশ যাত্রা সব কিছু কেমন যেন আকাশ এই মিলিয়ে গেল আর হঠাৎ করে হয়ে গেল সবাই আকাশের-তারা…।
- Lupin Receives Tentative Approval from U.S. FDA for Oxcarbazepine ER Tablets….
- ইংরেজি দৈনিক ইকো অফ ইন্ডিয়া গ্রুপের বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন…।
- Cycling is Faster than Perceived – Beats Cars in Congested Corridors….
- দুপুর বেলায় খাওয়া দাওয়ার পর্ব হল শেষ, বাংলাদেশে এই দিনটার গুরুত্ব অশেষ…।
Be First to Comment