জন্মদিনে স্মরণঃ ডি ডা ব লু গ্রি ফি থ
বাবলু ভট্টাচার্য : ডি ডাবলু গ্রিফিথ, ডেভিড ওয়ার্ক গ্রিফিথ– চলচ্চিত্রের আদিপথ প্রদর্শকদের অন্যতম। খুব সম্ভবত শ্রেষ্ঠতম।
বইয়ের দোকানের কর্মচারী, পত্রিকার ফেরিওয়ালা, লিফট বয় ইত্যাদি কাজের পর তিনি সহকারি সাংবাদিক, নাট্যকার, অভিনেতারূপে একদিন শিল্পী জীবন শুরু করেন।
জীবিকার নানা ঘাট পেরিয়ে এডুইন পোর্টারের ছবিতে সাদামাটা এক চরিত্রে অভিনয় করেন।
সেই থেকে ছবির জগতে পদার্পণ। পরবর্তী ছয় বছর ধরে প্রায় সাড়ে চারশো স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি গ্রিফিথ তৈরি করেছেন। এইসব ছবির প্রযোজনা, অভিনয় এবং ক্যামেরা-শৈলীতে বাস্তবতার লক্ষণ ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে ছিল তার স্বভাব সুলভ অতি নাটকীয়তা।
শুধু তার নিজের সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্রে নয়, সারা দুনিয়ায় সাড়া জাগানো গ্রিফিথের প্রথম উল্লেখযোগ্য ছবি ‘বার্থ অব এ নেশন’, তৈরি করলেন ১৯১৫ সালে। টমাস ডিকসনের ‘দ্য ক্ল্যান্সমেন’ উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে, আমেরিকার গৃহযুদ্ধের বিশাল ক্যানভাসে এক মহাকাব্যোচিত ছবি।
আড়ম্বরপূর্ণ সেট, ঐতিহাসিক ঘটনাবলির প্রতি বিশ্বস্ততা, আবার মূল কাহিনির সঙ্গে বহু উপ-কাহিনির যোগ ঘটিয়ে ১৬০ মিনিটের যে ছবি গ্রিফিথ নির্মাণ করেন― তা সে যুগের এক/দুই রীলের ছবির জগতে ছিল একটা রীতিমতো ঘাবড়ে দেয়া ব্যাপার। এই ছবি নির্মাণের মাধ্যমে বলা যায়, তিনি নতুন যুগের সুচনা করেন। এর আগে পর্যন্ত চলচ্চিত্র ছিল সরল ভাবে বর্ণনাত্মক।
গ্রিফিথ বর্ণনা রীতিতে বিভিন্ন স্তরের প্রচলন করলেন। কাহিনিকে ছোট ছোট দৃশ্য-পর্যায়ে (Shot Division) ভাগ করে নিলেন। দৃশ্যাংশের সমবায় ও বিন্যাসের ক্ষেত্রে গল্প, নাটকীয়তা ও বক্তব্যের ওপর গুরুত্ব দিলেন এবং অভিনয়কে চলচ্চিত্র সুলভ করার চেষ্টা করলেন। দৃশ্যের পুরোভূমি (Foreground), পশ্চাদভূমি (Background) এবং পার্শ্বভূমির ওপর মনোযোগ ও ক্যামেরার প্রয়োজন মতো স্থান পরিবর্তন তার ছবিকে চিত্রধর্মী করে তুলল।
চলচ্চিত্র সম্পাদনা (Editing)-এর শক্তি ও সম্ভাবনা তিনিই প্রথম অনুভব করেন এবং তার হাত ধরেই সম্পাদনা হয়ে ওঠে চলচ্চিত্রের প্রধান অঙ্গ।
যিনি চলচ্চিত্র ব্যাকরণের বহু বিষয়ের স্রষ্টা, সুপারস্টার চিত্রপরিচালক, যিনি হলিউডের মুভি মোঘলদের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার মুনাফার সুযোগ করে দিয়েছেন, সেই গ্রিফিথ শেষ জীবনের অপ্রত্যাশিত বেদনায় ক্লান্ত- নিঃসঙ্গ।
তারপরও নিজের মতো করে নতুন ভাবে বাঁচার জন্যই অতি পরিচিত সব জায়গা ছেড়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন পেনসেলভ্যানিয়া রেল স্টেশন সংলগ্ন একটি হোটেলে। হয়তোবা জীবনের শেষ দিনগুলো একান্ত নিজের মতো করে কাটাবেন বলে। প্রিয়তমা স্ত্রী ইভলিনও তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। বড় বেশি স্তব্ধ হয়ে যান জীবনের সব অকল্পনীয় পরিবর্তনে।
নিজের নির্মিত প্রায় পাঁচশো চলচ্চিত্রের কাহিনিগুলোর সঙ্গে নিজের জীবনের কাহিনিল মেলালে আরও বেশি অবিশ্বাস্য ঠেকে গ্রিফিথের কাছে।
হোটেলের নির্জন কক্ষে নিঃসঙ্গ, নিঃস্ব এবং করুণ অবস্থায় ১৯৪৮ সালের ২৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন ডি ডাবলু গ্রিফিথ।
ডেভিড ওয়ার্ক (ডি ডাবলু) গ্রিফিথ ১৮৭৫ সালের আজকের দিনে (২২ জানুয়ারি) আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment