জন্মদিনে স্মরণঃ রু মা গু হ ঠা কু র তা
বাবলু ভট্টাচার্য : তাঁর ডাক নাম ছিল রুমা, ভালো নাম ‘কমলিকা’। অনেকেই জানেন না, এই ‘কমলিকা’ নামটি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাই এই নামটি রেখে দিয়েছিলেন বুকের মধ্যে, একান্ত নিজের করে। ডাক নামেই বিখ্যাত হয়েছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা।
বাবা সত্যেন ঘোষ। মা সতী দেবী ছিলেন সেই যুগের বিখ্যাত গায়িকা। তিনি আলমোড়ায় উদয়শঙ্কর কালচার সেন্টারের মিউজিক এন্সম্বলের সদস্য ছিলেন ও পরে মুম্বাইয়ে পৃথ্বী থিয়েটারে মিউজিক ডিরেকটর (দেশের প্রথম মহিলা সংগীত পরিচালক) হন। তাই রুমার ছেলেবেলা কেটেছে আলমোড়া ও মুম্বাইয়ে।
সতী দেবীর পিসতুতো ভাই হলেন বরেণ্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়। বিজয়া রায় হলেন আপন ছোটবোন। ১৯৫২ সালে কিশোর কুমারকে বিবাহ করেন ও তাঁদের পুত্র সুগায়ক অমিত কুমার। ১৯৫৮ সালে তাঁর দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদ হয় এবং ১৯৬০ সালে অরূপ গুহঠাকুরতা’কে বিবাহ করেন।
দেবব্রত বিশ্বাসের ছাত্রী রুমা সুগায়িকা ছিলেন। গান গেয়েছেন, ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’, ‘বাঘিনী’, ‘পলাতক’-সহ আরও বেশ কিছু বিখ্যাত ছবিতে। অভিনেত্রী হিসাবেও অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন রুমা। সত্যজিৎ রায় থেকে তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার থেকে রাজেন তরফদার প্রত্যেকের ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন রুমা।
‘গঙ্গা’, ‘শাখাপ্রশাখা’, ‘আরোগ্য নিকেতন’, ‘আশিতে আসিও না’, ‘অভিযান’, ‘পলাতক’, ‘বাঘিনী’, ‘নির্জন সৈকতে’, ‘বালিকা বধূ’, ‘পার্সোন্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘হংসমিথুন’, ‘ত্রয়ী’, ‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’-সহ বহু বাংলা ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রুমা।
‘জোয়ার ভাটা’, ‘মশাল’, ‘আফসর’, ‘রাগ রং’-এর মতো হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
‘অভিযান’ ছবিতে যেমন অত্যন্ত সিরিয়াস একটি চরিত্রে তাঁকে দেখা গিয়েছে, তেমন আবার ‘আশিতে আসিও না’ কিংবা ‘পলাতক’-এ একেবারে ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রুমা।
‘বিস্তীর্ণ দু’ পারে অসংখ্য মানুষের’ কিংবা ‘ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম’ গানগুলি শুনলেও ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যারে রুমার সংগীত পরিচালনার কথাও মনে পড়ে বাঙালির।
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘আশিতে আসিও না’ ছবিতে ‘তুমি আকাশ এখন যদি হতে’ গানটির দৃশ্যায়নে রুমার অভিনয় আজীবন মনে রাখবেন দর্শকরা।
৩ জুন ২০১৯ সালে বার্ধক্য জনিত কারণে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন এই শিল্পী।
রুমা গুহঠাকুরতা ১৯৩৪ সালের আজকের দিনে (২১ নভেম্বর) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment