Press "Enter" to skip to content

ডঃ ভূপেন হাজারিকা এই রকম একজন শিল্পী জীবনের প্রতিটি পদে পদে ব্যথা পেয়েও গানকে ছাড়েনি। তিনি গানকে ধরেই বেঁচে রইলেন……।

Spread the love

স্মরণঃ ভূপেন হাজারিকা —

বাবলু ভট্টাচার্য : ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়’ কিংবা ‘আমি এক যাযাবর’, ‘শরৎ বাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানে মিশে আছেন কিংবদন্তি সংগীত ব্যক্তিত্ব ভূপেন হাজারিকা। পিতা নীলকান্ত হাজারিকা ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মা ছিলেন সুগৃহিণী। পিতার সরকারি চাকরি হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বদলী হওয়ায় অসম’র ধুবড়ি, গৌহাটি, তেজপুরে লেখা-পড়ার পাশাপাশি বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ১৯৪০ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। এবং ১৯৪৬ সালে বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন। এরপর পিএইচডি লাভ করেন। ছবি, গান নিয়ে জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়েছেন। বাড়িতে ছিল অনেক ভাইবোন। বাবা-মা তো ছিল। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন- বাড়িতে তখন অভাব চলছে। আমার নতুন রেডিও’র চাকরিটাই একমাত্র সম্বল। তাছাড়া বাবা-মা ভাইবোনদের ছেড়ে যেতেও মন চাইতো না। বড় ছেলে বলে মা আমায় বেশি খাবার দিতেন, কিন্তু আমি কিছুতেই পুরোটা খেতে পারতাম না।

সহপাঠী, ভর্তির অভিজ্ঞতা, রাজনীতি ও সংগীত বেত্তাদের সম্বন্ধে লিখেছেন নিজের স্মৃতির কথায়। তিনি এও লিখেছেন- ‘শহরে গিয়ে গান শিখতে হয়। রনদা উকিল, সারদা উকিলের কাছে আঁকা শিখতে যেতে হয়। বিএ পড়ার সময়ে ও কণ্ঠে মহারাজ, আনোখে লালের বাড়িতে যাই। বিসমিল্লাহ খাঁনের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁর রেওয়াজ শুনি। আবার আচার্য নরেন্দ্র দেবের মার্কসিট ক্লাসে এ্যাটেন্ড করি। কারণ, কতগুলো ঘটনা পরস্পরায় আমার মনের মধ্যে রি-এ্যাকশন চলেছে। গান্ধীজী বলেছেন- কুইট ইন্ডিয়া। বেনারস আসার পর আমার জীবনের চিন্তাধারাই বদলে গিয়েছিল। এক সময় মারাঠী বা গুজরাটি বা অন্য প্রদেশের মানুষদের দেখলে মনে হতো যেন কত আপনার। আবার যখন আমার সহপাঠী হিসেবে একজন আফ্রিকার ছেলে, একজন ইন্দোনেশিয়ার ছেলে বা একজন জাপানের ছেলেকে দেখতাম কিংবা একজন মুসলমান সহপাঠীকে সংস্কৃত পড়তে দেখতাম তখনই বিশ্বমানবতার প্রকৃত স্বরূপ ক্রমশ: পরিস্কার হয়ে যেত। চোখর সামনে দেখেছি, কাশ্মীরের অধিবাসী আহমেদ হোসেন দানি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিরেক্টর অফ আর্কিওলজি হয়েছেন। কলকাতায় থাকলে আমি পূর্ব-ভারতীয় হয়ে থাকতাম। কিন্তু বেনারসে গিয়ে আমি মহাভারতের সন্ধান পেয়েছিলাম। এই রকম একজন শিল্পী জীবনের প্রতিটি পদে পদে ব্যথা পেয়েও গানকে ছাড়েনি। তিনি গানকে ধরেই বেঁচে রইলেন।

“আমি এক যাযাবর
পৃথিবী আমায় আপন করেছে, ভুলেছি নিজের ঘর।”

এমন করে অসংখ্য গান তাঁর যৌবনের স্মৃতি অম্লান হয়ে আছে। কারণ নিজেই বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বাস্তবতা থেকে গানে গানে খুঁজেছেন প্রকৃতি। বাংলা সাহিত্যের অমর গল্প অংশুমান রায়ের সুরে গাইলেন- ‘শরৎ বাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে/তোমার গফুর মহেশ এখন কোথায় কেমন আছে তুমি জান না।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের কবিতা নিয়ে তাঁর কণ্ঠে পরিবেশন করেন-সুর অনাথবন্ধু দাসের- এখানে বৃষ্টি মুখর লাজুক গাঁয়ে, এসে থেমে গেছে ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা।

বিচিত্র গান তাঁর কণ্ঠে প্রচারিত হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গান গেয়ে বীর সৈনিক মুক্তিকামী লোকদের যুদ্ধে সাহস ও শক্তি যুগিয়েছেন, সেই গানগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ‘হে দোলা হে দোলা’, ‘গঙ্গা আমার মা’, ‘বিস্তীর্ণ দু’পারে’- এই তিনটি গান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলো। তিনি প্রথমে ১৯৭৭ সালে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী সম্মাননা পান। ‘শঙ্করদেব’ পুরস্কার পান ১৯৮৭ সালে। ‘অসম রত্ন’ পুরস্কার পান ২০০৯ সালে। গ্রামোফোন কোম্পানি তাঁকে ‘গোল্ডেন ডিস্ক’ পুরস্কার দিয়েছেন ১৯৭৮ সালে। ‘দাদা সাহেব ফালকে’ সর্বভারতীয় পুরস্কার পান ১৯৯২ সালে। ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার ২০০১ সালে। আজ শুধু এই শিল্পী বাংলা কিংবা ভারতের নয়, তিনি ছিলেন সারাবিশ্বের।

ড. ভূপেন হাজারিকা ২০১১ সালের আজকের দিনে (৫ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.