Press "Enter" to skip to content

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে আসার পর ঠাকুর ডাকতেন ‘নরেন’ বলে৷ বি.এ.পাশ করে আইন পড়বার সময় পিতৃবিয়োগ হওয়ায় অর্থাভাবে তাঁকে অনাহারে পর্যন্ত দিন কাটাতে হয়েছিল….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ স্বা মী বি বে কা ন ন্দ

বাবলু ভট্টাচার্য : বারাণসীর বীরেশ্বর শিবের প্রসাদে জন্ম হওয়ায় মা ভুবনেশ্বরী দেবী পুত্রের নাম রেখেছিলেন ‘বীরেশ্বর’। আদরের ডাকনাম- ‘বিলে’ এবং পোশাকি নাম হল ‘নরেন্দ্রনাথ দত্ত’৷

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে আসার পর ঠাকুর ডাকতেন ‘নরেন’ বলে৷ স্বামীজি তাঁর পরিব্রাজক জীবনে প্রথমে ‘বিবিদিষানন্দ’ ও পরে ‘বিবেকানন্দ’ ও ‘সচ্চিদানন্দ’ নাম গ্রহণ করেন৷

তিনি নবজাগরণের বাণী শুনিয়ে ও নতুন কর্মপন্থার নির্দেশ দিয়ে ভারতের আত্মাকে সমগ্ররূপে উদ্বোথিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন সাম্যের বার্তাবহ, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত। ধর্ম ও সমাজের যুক্তিহীন চাপে জাতি কর্মশক্তি হারাবে এটা ছিল তার কাছে অসহ্য।

তাঁর বাবা কলকাতার সিমুলিয়া পল্লীর বিশ্বনাথ দত্ত এবং মা ভুবনেশ্বরী দেবী। তিনি মা- এর কাছে শেখেন স্বধর্ম, বাবা পরিচয় করিয়ে দেন এক উদার সংস্কৃতির সঙ্গে।

সাধারণ বিদ্যাশিক্ষার সঙ্গে তিনি সঙ্গীত ও যোগব্যায়ামেও পারদর্শী হন। যৌবনে তিনি ব্রাহ্মসমাজ ও পাশ্চাত্য দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। পরে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

বি. এ. পাশ করে আইন পড়বার সময় পিতৃবিয়োগ হওয়ায় অর্থাভাবে তাঁকে অনাহারে পর্যন্ত দিন কাটাতে হয়েছিল। ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে শ্রীরামকৃষ্ণের দেহত্যাগের পর গৃহী ভক্তদের অর্থানুকূল্যে তিনি অন্য গুরুভাইদের সঙ্গে বরানগরে প্রথম শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ স্থাপন করেন।

১৮৯০ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি পরিব্রাজনায় বেরিয়ে ভারত ও ভারতবাসীদের প্রত্যক্ষ পরিচয় লাভ করেন। এই সময়ে তিনি নানান শাস্ত্রও অধ্যয়ন করেন।

১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসে তিনি শিকাগো ধর্ম মহাসভায় হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মাদ্রাজবাসী ও অন্যান্য বন্ধুদের সাহায্যে আমেরিকায় যান। সেপ্টেম্বরে এই সভার অধিবেশনে স্বামীজির বক্তৃতার ফলে ভারতের ধর্মমত ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে বিদেশীদের শ্রদ্ধা বহুগুণে বেড়ে যায়।

কিছুদিন ইউরোপে ও আমেরিকায় থেকে তিনি বক্তৃতা, শাস্ত্র ব্যাখ্যা, বইলেখা ও ব্যক্তিগত আলোচনার মধ্যে দিয়ে ভারতীয় জীবন ও চিন্তাধারা সম্বন্ধে বিদেশিদের ভ্রান্ত ধারণা দুর করার কাজে নিযুক্ত থাকেন।

১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দে ভগিনী নিবেদিতা বিবেকানন্দকে সর্বপ্রথম দেখেন। স্বামীজির বাণী তাঁর হৃদয়ে অসামান্য প্রভাব বিস্তার করে। ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে তিনি স্বামীজির আহবানে ভারতে আসেন।

স্বামী বিবেকানন্দ সমাজসংস্কারের বিরোধি না হলেও ভাঙবার পথে চলতে চাইতেন না। শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাহায্যে নবীন জীবন গড়ে তোলাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তিনি গতানুগতিকতার বিরোধী ছিলেন কিন্তু ভারতের শাশ্বত আত্মাকে অস্বীকার করেননি।

তাঁর মতে ভারতের সমাজ ধর্মভিত্তিকা কিন্তু সে ধর্ম আচারগত নয়; এটা সর্বসমাজের, সর্বকালের, সর্বমানবের অন্তর্নিহিত চরম সত্য-দেশকাল পাত্রানুযায়ী এর বিকাশ বিভিন্ন।

তিনি বুঝেছিলেন, বাল্যবিবাহ, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে শক্তিক্ষয় করার চেয়ে শিক্ষা ও সংস্কৃতির দিয়ে মানবমনকে পরিশীলিত করে উদারভুমিতে তুলে নিলে নীচতা ও ক্ষুদ্রতা সহজেই দূর হবে। শিক্ষার ফলে নারীসমাজ স্বাধীনভাবে নিজেদের সমস্যার সমাধান করবে। সে শিক্ষা হবে সর্বতোমুখী-দৈহিক, মানসিক, আখ্যাত্মিক এবং তা মানবের অন্তরাত্মাকে বিকশিত করবে।

বিবেকানন্দের মতে জাতীয় জীবনে উপনিষদের ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত রেখে বাইরের জগত থেকে ভাবধারা ও কর্মকৌশল আহরণ করতে হবে। বিজ্ঞান, সংঘবদ্ধভাবে কার্যপরিচালনা, উদার সামাজিক দৃষ্টি ইত্যাদি আধুনিক জগতের অবদানকে অস্বীকার করলে চলবে না।

বিবেকানন্দের মতে ত্যাগ ও বৈরাগ্যই ভারতের চিরন্তন আদর্শ। তিনি ভারতের ইতিহাসে সমাজ সেবার এক নতুন অধ্যায় রচনা করেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রদর্শিত শিবজ্ঞানে জীবসেবার উদ্দেশ্যে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন (১৮৭৯ খ্রী) প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যে সফল কথ্যভাষায় তিনি অন্যতম প্রথম প্রচারক। তাঁর মূল ইংরেজী ও বাংলা রচনাবলী বহু অনুদিত হয়েছে।

১৮৯৯ খ্রীষ্টাব্দের জুন মাসে তিনি আবার পাশ্চাত্য দেশে যান এবং আগের বারের মতই প্রচারে সফলতা লাভ করেন। বিদেশে কয়েকটি স্থায়ী বেদান্ত কেন্দ্র স্থাপন করে ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দের শেষে তিনি ভারতে ফিরে আসেন।

স্বামীজি ১৯০২ খ্রীষ্টাব্দের ৪ জুলাই বেলুড় মঠে দেহত্যাগ করেন।

স্বামী বিবেকানন্দ (নরেন্দ্রনাথ দত্ত) ১৮৬৩ সালের আজকের দিনে (১২ জানুয়ারি) কলকাতার শিমলায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »
More from InternationalMore posts in International »
More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.