জন্মদিনে স্মরণঃ জুনকো তাবেই
বাবলু ভট্টাচার্য : এভারেস্টজয়ী বিশ্বের প্রথম নারী তিনি। প্রথম নারী হিসেবে সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ আরোহণের অনন্য বিশ্ব রেকর্ডও তার দখলে।
১৯৭৫ সালে প্রথম এই নারী আরোহণ করেছিলেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থানে। কালের সাক্ষী এই দুর্দান্ত পর্বতারোহী উত্তর জাপানের ছোট শহরের এক পরিবারের ৫ জন বোনের একজন তিনি। সাবার কাছে খুবই দূর্বল হিসেবে পরিচিত তাবেই স্কুলে পাঠরত অবস্থায় প্রথম গিয়েছিলে মাউন্ট নাসু’তে। তখন তিনি মাত্র দশ বছরের বালিকা। শুরু হয় সে সময় থেকেই।
পর্বত যেন পেয়ে বসল তাকে, তখনই তার মনে হয়েছিল দুর্বল (!) শরীরটাকে নিয়েই জয় করতে হবে পর্বত। এটা এমন এক খেলা যাতে কেবল নিজেই অংশগ্রহণ করা যায় পুরোপুরি ভাবে। অনেকের সাথে থাকলেও নিজের গতি নিজেকেই ঠিক করে নিতে হবে। এটা তিনি বুঝেছিলেন অনেক আগেই।
সোওয়া ওমেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর তাঁর গুরুতর পর্বতারোহণের শুরু হয়। নিজে আরোহণ করার সাথে সাথে ১৯৬৯ সালে মহিলাদের জন্যে প্রথম পর্বতারোহণ ক্লাবের জন্ম দেন জাপানে। যার নাম এলসিসি। সে সময় এভারেস্ট আরোহণের জন্য জাপানী টিভি এবং সংবাদপত্রে সম্ভাব্য অভিযাত্রীদের যে ট্যালেন্ট হান্ট হচ্ছিল তিনি তাতে আবেদন করেন।
এটা ১৯৭২ সালের ঘটনা। সারা দেশ থেকে সেরাদের মাঝ থেকে বেছে নেয়া হয় মাত্র ১৫ জনকে। তাদের মাঝে জুনকো সেরা হিসেবে বিবেচিত হন। অধিনায়কত্ব দেয়া হয় তাকেই।
৩২ বছরের গৃহবধু সবে মাত্র মা হয়েছেন সেসময়, চলে গেলেন পর্বতারোহণে। এভারেস্ট এর মতো বড় পর্বতারোহণে তাঁর নিজেরও খরচের পাঁচ হাজার আমেরিকান ডলার জোগাড় করতে গিয়ে তাকে অনেক রকমের কাজ করতে হয়েছিল।
তিন বছরের কষ্ট সাধ্য পরিশ্রমের পর প্রথম মহিলা এভারেস্ট অভিযানের উপযুক্ত হয়ে উঠলেন তিনি। এর আগে ব্যক্তিগত ভাবে কয়েকজন এভারেস্ট আরোহণের চেষ্টা চালালেও দলগত ভাবে মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল এটাই প্রথম।
১৯৭৫ সালের ঘটনা, কাঠমান্ডুতে আরোহণের পর ৯ জন শেরপা ঠিক করে তারা কাঠমান্ডু ভ্যালি থেকে চলে এলেন সলোকম্ভু এভারেস্ট রিজিয়নে। সাথে শুধু একটাই সংকল্প— শিখর। আরোহণকালে এক ভয়াবহ এ্যভেলাঞ্চের কবলে পড়েছিলেন তারা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন সবাই।
সব কষ্টের ইতি টেনে ১৯৭৫ সালের ১৬ মে, পর্বতারোহণের ইতিহাসে বীরত্বেও একটি পালক সংযোজিত হল। শীর্ষ জয় করলেন তিনি। তার এই আরোহণ শুধু আরোহণ হিসেবে বিবেচিত হয় না, পর্বতারোহণে পুরুষদের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণের মাইল ফলকটা প্রথিত হয়েছিল সেদিন।
কাঠমান্ডুতে তাকে নিয়ে শুরু হয় নানা অনুষ্ঠান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে, নেপালের রাজপরিবার— কেউ বাকি ছিল না, তাকে সংবর্ধনা জানাতে। এরপর তার অভিযানের সমাপ্তি এখানেই হয়নি।
চার ফুট নয় ইঞ্চি উচ্চতার এই ক্ষুদ্রাকার ক্লাইম্বিং জায়েন্ট একে একে আরোহণ করেন সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বত। মহিলা হিসেবে তিনিই ছিলেন প্রথম। এছাড়া নানা দেশের সর্বোচ্চ পাহাড়গুলোতেও তার পদচিহ্নি পড়েছে।
২০ অক্টোবর ২০১৬ সালে তিনি জাপানে মৃত্যুবরণ করেন।
জুনকো তাবেই ১৯৩৯ সালের আজকের দিনে (২২ সেপ্টে) জাপানের ফুকুশিমায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment