Press "Enter" to skip to content

জহরত্নাবলী….। জাদুবিদ্যাকে এখনও ‘রূপকথার এক বিজ্ঞান-ভিত্তিক-মঞ্চরূপ’ ব’লে কেউ বুঝবে না। সবাই কু-সংস্কারবদ্ধ! চেতনাও জাগতে দেরী হবে। কষ্ট পাবি….।

Spread the love

•••••••••••••••••[ পর্ব=চিরন্তন + ১ ]•••••••••••••••••

[ Dr. প্রদীপ চন্দ্র সরকার M. Sc., Ph. D.(Cal) ] প্রকাশিত বিগত চিরন্তন পর্বের পরবর্তী অংশ ~
Directly home delivered from the Desk of জীবন পথের মাদারি , যিনি *চাটুকারিতায় ডাহা ফেল* তাবেদারিতে গোল্লা * ইলেকশনে হেরো*
*পরকীয়ায় মুরোদ হীন * স্ত্রৈণ্য হিসেবে ন্যাকা* একই বৌকে নিয়ে পঞ্চাশ বছরের ওপর অত্যধিক আদিখ্যেতা এবং ঘ্যাতনামির রেজাল্ট মাত্র তিনটি ফাটাফাটি কণ্যে *মানেকা *মৌবনি *মুমতাজ।

********প্রতিটি বাবারও একটা বাবা**********
•••••••••••••• আছেন/ছিলেন/থাকেন••••••••••••••

আমি অবাক হ’য়ে দেখছি, আমার গতবারের এই “চিরন্তনী..” লেখার শেষে আমি একজন “বেশি বয়সের শিশুর”-র ফোকলা দাঁতের প্রাণখোলা হাসি মুখের ছবি দিয়ে লেখাটা শেষ ক’রেছিলাম। কিন্তু কেউই প্রশ্ন তুললেন না যে, কাঁপা কাঁপা হাতে তোলা ওই অস্বচ্ছ ছবিটা, কার..?
বা রস-কষহীন, আত্মপ্রশংসায় ঠাসা এই লেখাটার শেষে ওই ছবিটা আমি কেন রাখলাম ?! ওনার পরিচয়টা কী, কিভাবে, কোন দৃষ্টিকোন থেকে উনি এই জাদুগরী “জহরৎ-খানা”য় প্রাসঙ্গিক ?..ইত্যাদি।

আর না ফেনিয়ে, সরাসরি ব’লছি, ওটা হ’লো আমার পরম শ্রদ্ধেয় ঠাকুর্দা, স্বর্গগতঃ ভগবান চন্দ্র সরকারের , নাতিদীর্ঘ জীবনের, শেষ এবং খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছবি। এই প্রথম আমরা তাঁকে হাসতে দেখি। ছবি তুলি। আমি তখন ক্লাস সিক্সের ছাত্র। বাবা, জাদুবিদ্যাকে তাঁর ধ্যান, জ্ঞান, পরিচয় এবং জীবিকা হিসেবে শুরু করার সময় থেকেই, ঠাকুর্দা নাকি শুধু কেঁদেই এসেছেন। ব’লতেন “সমাজ এখনও পিছিয়ে আছে। জাদুবিদ্যাকে এখনও ‘রূপকথার এক বিজ্ঞান-ভিত্তিক-মঞ্চরূপ’ ব’লে কেউ বুঝবে না। সবাই কু-সংস্কারবদ্ধ! চেতনাও জাগতে দেরী হবে। কষ্ট পাবি। এজন্যই আমি নিজে একজন জাদু-শিল্পী হওয়া সত্ত্বেও, পরিচয় লুকিয়ে রেখেছি। ”
তার বিস্ফোরণ ঘটে দেশ বিভাগে কথা শুনতেই। বিশেষ ক’রে, পূর্ববঙ্গ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে, সব কিছু বিসর্জন দিয়ে আসতে হবে শুনে। “ধর্ম ভিত্তিক দেশ-বিভাগ ??!! এ তো কুশিক্ষার এক   চূড়ান্ত উদাহরণ!! দেশবিভাগের যে কি জ্বালা, তা ওই দু-দিন আগে আসা সামান্য কয়েকজন আরব, তুর্কি ইত্যাদি ভিন দেশের নির্দয় বেদুইন গোত্রের মানুষেরা কী বুঝবে? আকাশ, বাতাস, চেনাশোনা আপন প্রকৃতি, গাছপালা, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, চেনা বা অচেনা লোকজন, চাষ- আবাদ, অভাব, সুখ, উৎসব, সহায়তা, সম্পত্তি, স্মৃতি, আবেগ, রক্তের টান, সবেরই দিতে হ’বে জলাঞ্জলি ? ধর্ম নিয়ে ফাল্তু বিভাজন? আবার যদি তোমাদের মধ্যে কেউ , আবার ধর্ম পাল্টাও , তো,আবারও বাকি সবাইকে চ’লে যেতে হবে নাকি সেখান থেকে? আগে তো আমরা সবাই একই ধর্মের, একই জাতির ছিলাম। কিছু মানুষ, কিছু কারণে ধর্ম পাল্টেছে। সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেজন্য আগের ধর্মের, আগের লোকদেরকে ভিটে-মাটি ছেড়ে চ’লে যেতে হবে কেন? এটা কেমন যুক্তি! এতো দিনের এতো নৈকট্য, ভ্রাতৃত্ব, প্রেম, সাহিত্য, সবই ভূয়ো!!?? তুমি নিজের ধর্ম এখন পাল্টাচ্ছো, তো পাল্টাও না, কে না ক’রেছে? সেজন্য ‘আ-মা-কে’ দেশান্তরী হ’তে হবে কেন?কোন যুক্তিতে?…তুমি আজকে সৃষ্টিকর্তাকে ভিন্নভাবে ভিন্ন ভাষায় চেনার জন্য, বরাবরের বাসিন্দা আমাকে চ’লে যেতে ব’লছো কেন? তোমার দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন বা চোখের পাওয়ার পাল্টেছো ব’লে, আমাকে চ’লে যেতে হবে, এ তো জড়বুদ্ধি সম্পন্ন দস্যুবৃত্তি !!??

ছবিটা আমার প্ররোচনায় আমার ছোটভাই ‘প্রভাস’- এর তোলা। সেও একজন উঁচু মাপের শিল্পী। বহুমুখী প্রতিভা। এ রকম দুষ্টুমি আমরা দু-ভাই মিলে অনেক ক’রেছি। কানমলাও খেয়েছি। আপনারা প্রভাসকে পি সি সরকার ইয়ং ব’লে চিনেছেন, দেখেছেন। সেকথা অন্য।
ও তখন কতো ছোট! বাবা তখন আফ্রিকা সফরে ছিলেন। হঠাৎ খবর এলো, বাবা ফিরছেন। একমাসের মধ্যেই আসবেন। শুনেই আমরা আনন্দে লাফিয়ে উঠেছি। আমি সদা বিষন্ন মুখে ব’সে থাকা দাদুকে গিয়ে ব’ললাম, “বাবা ক’য়েকদিনের মধ্যেই বাড়ি আসছেন, চিঠি লিখেছেন। অ্যাত্তো আ্যাত্তো প্রাইজ পেয়েছেন।” শুনে, দাদুর মুখে সে কি হাসি! নিঃশব্দে, আপনমনে কেঁপে কেঁপে, ভূরি ঝাঁকিয়ে হাসছেন তো হেসেই চ’লেছেন। এ দৃশ্য আমরা আগে দেখিনি। তখন যে বুদ্ধি ক’রে, বাবার অনুমতি ছাড়া ক্যামেরায় অনভ্যস্ত হাতে ছবিটা আমরা তুলেছিলাম, তা পরে দেখে বাবার চোখেও আমি জল দেখেছিলাম। বকুনির ভয়ে প্রভাস পালিয়ে গেছিলো। আমি মাথা নিচু ক’রে কান মলা খেতে প্রস্তুত হ’য়ে ছিলাম। তবে বাবা সেই ছবি দেখে হাসার বদলে কেন যে ফুঁপিয়ে কাঁদলেন, তা আমি বুঝিনি।
অদ্ভুত ব্যাপার। ছবি তোলার সেই রাত্তিরেই, আমাদের ঠাকুর্দা অমরলোকে চ’লে যান। শুনে বাবা আরও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসেন। তখন সব শেষ। ফাঁকা। তারপর শুরু হয়, ছবি নিয়ে সে কি কান্না। সরকার পরিবারের ইতিহাসের একটা পাতা ওল্টানো। শুরু হ’লো নতুন অধ্যায়।

 

ঠাকুর্দা মানুষ হিসেবে ছিলেন এক অদ্ভুত চরিত্রের মহামানব। নামেও ‘ভগবান , কাজেও ভগবানের মতোমতো’। আশকপুরের গ্রামের বাড়িতে দুপুরে যখন ক্লান্ত পথিক এসে, সময়- অসময়ে বাড়ির দরজা খটখটিয়ে জল খেতে চাইতেন, তখন আমার ঠাকুমা, ‘কুসুম কামিনী’ দেবী হাসি মুখে, অক্লান্ত ভাবে তাঁদের, দাওয়ায় বসিয়ে, কুঁজোর ঠান্ডা জল এবং বাতাসা খেতে দিতেন। ক্লান্ত থাকলেও তা প্রকাশ ক’রতেন না। হাসি মুখে “আবার আসবেন” ব’লে বিদায় দিতেন।
ঠাকুর্দা, ঠাকুমাকে একটু বিশ্রাম দেবার জন্য, সেই পথিকদেরও ‘সুবিধার্থে , জমির দু মাথায় দুটো কূয়ো বানিয়ে দেন। সেখানে একটা ছোট্ট পেতলের বালতি, দড়ি সমেত রাখা থাকতো। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। পথিকেরা এসে দরজাটা আবার খটখটাতেন। কী হয়েছে? বালতিটা নাকি নেই।

“বসুধৈব কুটুম্বকম্”।…নিশি কুটুম্বের কাজ। কাজটা চ’লতো তো চ’লতোই ।আর ঠাকুর্দা হতেন পৌনঃপুনিক “নির্বোধ”। আবার বালতি কিনে আনতেন। অচিরেই তা আবার চুরি হ’তো। ঠাকুর্দা আবারও কিনতেন। এ নিয়ে “এই আছে এই নেই”-এর ম্যাজিকটা চ’লতেই থাকতো।
পাড়ার কালি মন্দিরে এ নিয়ে সবার কতো হাসাহাসি। কতো রকমের ব্যাঙ্গ, কতো ঠাট্টা! অনেকে ভালোবেসে প্রশ্নও করতেন, ” চুরি যখন ওখান থেকে হবেই, তখন আবার নতুন ক’রে বালতিটা আবার দেওয়া কেন?” ক্যানো দ্যান আইপনি? এইডা বোকামি!”
জবাবে ঠাকুর্দা নাকি ব’লে ছিলেন। “পৃথিবীতে মোট তিন ধরনের মানুষ আছেন। একধরণের মানুষ বালতি দ্যান, দ্বিতীয় ধরনের মানুষ হচ্ছেন, যিনি চুরি করেন, আর তৃতীয় জন হচ্ছেন যারা এই নিয়ে হাসি ঠাট্টা, ব্যাঙ্গ করেন। আমার কাজ হচ্ছে বালতি দেওয়া। যতোদিন আমি পারুম, ততোদিন আমি আমার কাজ ক’ইরা যামু। চোরের কাজ চুরি করা। ও ক’ইরবো…ক’রছে। আপনারাও তো একটু আনন্দ পাইলেন। আমিও আমারটা ক’ইরতে থাকুম। আমি বোকা হ’য়েই জন্মেছি। বোকাই থাকি। “.. ইত্যাদি।
আমি নাকি আমার ঠাকুর্দার মতো হ’য়েছি। বোকা।
আজ এই পর্যন্তই থাক। এর পরের বার আরও “দাদুর কীর্তি” লিখবো। ততক্ষণ হাসতে থাকুন। ইতি- জয় হিন্দ
জাদুকর পি সি সরকার জুনিয়র।

More from BooksMore posts in Books »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »
More from Theater/DramaMore posts in Theater/Drama »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.