মোল্লা জসিমউদ্দিন : ২১, নভেম্বর, ২০২০। বৃহস্পতিবার একাধারে সুপ্রিম কোর্ট এবং অপরদিকে কলকাতা হাইকোর্টে ছটপুজোয় অনুমতি সংক্রান্ত মামলায় জরুরি ভিত্তিতে শুনানি চলে থাকে। কেননা গতকাল শুক্রবার এবং আজ শনিবার বিহারি সম্প্রদায়ের সবথেকে বড় উৎসব ছটপুজো রয়েছে। রবীন্দ্র সরোবরে শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয়েছিল কেএমডিএ।

অপরদিকে সুভাষ সরোবরে আগেকার নির্দেশিকার পুনঃ বিবেচনা চেয়ে দারস্থ হয়েছিল কেএনডিএ। তবে উভয় ক্ষেত্রেই রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। মূলত গ্রিন ট্রাইব্যুনালের গতবছরের নিষেধাজ্ঞা জারী কে মান্যতা দেওয়া হয়। ১৯২০ সালে বৃটিশদের হাতে গড়া রবীন্দ্র সরোবর ‘জাতীয় সরোবর’ হিসাবে চিহ্নিত। মহানগর কলকাতার ‘ফুসফুস’ হিসাবে ময়দানের পাশাপাশি রয়েছে রবীন্দ্র সরোবর। পরিবেশবিদদের লাগাতার আন্দোলনে গ্রিন ট্রাইব্যুনালে গতবছর থেকে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোয় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে টিন দিয়ে ঘেরা হয়েছে খোলা অংশগুলি। ছটপুজোয় বিসর্জন দেওয়া ব্যবহৃত জিনিসপত্র গুলির জন্য রবীন্দ্র সরোবর এবং বেলেঘাটা সুভাষ সরোবরে জলাশয়ে থাকা প্রাণীগুলির অবিরাম মৃত্যুর ঘটনা অতীতে ঘটেছে।

তাই গ্রিন ট্রাইব্যুনাল জাতীয় সরোবর কে রক্ষায় কড়া নিষেধাজ্ঞা জারী করে থাকে। তবে ভোট রাজনীতিতে অনেককিছুই ঘটে। ছটপুজোয় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রশ্ন তোলে। বিহারি সম্প্রদায়ের কাছে ভুল বার্তা যাতে না যায় সেজন্য কেএমডিএর তরফে গত সেপ্টেম্বর মাসে গ্রিন ট্রাইব্যুনালে শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি চাওয়া হয়। সেই আবেদন খারিজ করে দেয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল।এরপর একাধারে সুপ্রিম কোর্টে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোয় অনুমতি চাওয়া হয়।

অপরদিকে কলকাতা হাইকোর্টেও গত ১০ নভেম্বরের নির্দেশিকার উপর পূন বিবেচনা করার পিটিশন দাখিল হয়। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের অর্থাৎ কেএমডিএর শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি চাওয়ার পিটিশন খারিজ করে দেয়। গ্রিন ট্রাইব্যুনালের রায় কে বহাল রেখে কোন শর্তেই অনুমতি নয় বলে জানিয়ে দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। অপরদিকে সুভাষ সরোবরে ছটপুজোয় শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে কেএমডির পূনঃ বিবেচনার আবেদন টি খারিজ করে দেওয়া হয়।

গত ১০ নভেম্বর এই ডিভিশন বেঞ্চেই ছটপুজো নিয়ে মামলায় রাজ্যের পরিকাঠামোগত এবং করোনা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার গাইডলাইন নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। রাজ্য ডিভিশন বেঞ্চ কে জানিয়েছিল – কলকাতায় ৩৮০ টি ঘাট রয়েছে, এছাড়া শিলিগুড়ি – দুর্গাপুর – আসানসোলে ঘাট রয়েছে ছটপুজোয়। তবে ছটপুজোয় অংশগ্রহণকারীদের করোনা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের গাইডলাইন ছিলনা। তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছটপুজোয় করোনা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি কেএমডিএর পক্ষ থেকে ১৩০ টি কৃত্তিম ঘাট সহ পোশাক পরিবর্তন করার পরিকাঠামো গড়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ কে মান্যতা দিয়ে প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় অস্থায়ী জলাশয়ে ছট পূজো সু সম্পন্ন হয়েছে।

Be First to Comment