Press "Enter" to skip to content

চার দশক আগে পথ নাটক করতে গিয়ে কংগ্রেসি গুন্ডাদের হাতে চরম ভাবে নিগৃহীত হয়েছিলেন সফদার হাশমি তারই জেরেই পরেরদিন মৃত্যু হয়েছিল…..।

Spread the love

স্মরণঃ স ফ দা র হা শ মি

বাবলু ভট্টাচার্য : মার্কসীয় ভাবনায় উদ্দীপ্ত নাট্যব্যক্তিত্ব সফদার হাশমি একসময় অনুুুভব করেন তার নাটককে প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়।‌ নাটকের মাধ্যমে মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। ফলে সেখান থেকে একেবারে বেরিয়ে পথে নেমে আসাটা জরুরি।

অর্থাৎ তার কাছে জনগণের চলাচলের রাস্তাটায় যেন হয়ে ওঠে নাটকের মঞ্চ। সেই ভাবনা বাস্তবায়িত করতে ঘুরে ঘুরে নানা জায়গায় পথ নাটিকা করা শুরু করেন তিনি। অবশ্য এর পরিণতি ভালো হয়নি। পথে নাটক করতে গিয়েই নিহত হয়েছিলেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব।

চার দশক আগে পথ নাটক করতে গিয়ে কংগ্রেসি গুন্ডাদের হাতে চরম ভাবে নিগৃহীত হয়েছিলেন তিনি৷ তারই জেরেই পরেরদিন মৃত্যু হয়েছিল সফদার হাশমি’র।

১৯৫৪ সালের ১২ এপ্রিল জন্ম তার৷ তিনি ১৯৭৫ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম. এ. পাশ করেন। তার আগে দিল্লির সেন্ট স্টিফেনস কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন তিনি৷

ছাত্রাবস্থা থেকেই এই নাট্য ব্যক্তিত্ব জড়িয়ে পড়েছিলেন সিপিএমের রাজনীতির সঙ্গে। প্রথমে তিনি এসএফআই-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন পরে অবশ্য তিনি দলীয় ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন ‘সিটু’র হয়ে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কাজ করতেন।

হাশমি ছিলেন ভারতীয় জননাট্য মঞ্চ বা জনমের আহবায়ক। প্রচলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহে নাটক অভিনয় করাটা সফদারের এলাকা ছিল না৷ আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে তিনি বেছে নিয়েছিলেন পথনাটককে৷ মাত্র ৩৫বছরে তার মৃত্যু হলেও, তার আগে বিভিন্ন ধরনের মানুষের কথা জানাতে ২৪টি পথ নাটিকা প্রায় চার হাজার বার শো করেছিলেন৷

১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি গাজিয়াবাদ পৌরসভার নির্বাচন উপলক্ষে দিল্লির অদূরে ঝান্ডারপুরের শাহিবাবাদ অঞ্চলে সফদারের দল ‘হল্লাবোল’ পথ নাটকটি অভিনয় করছিলেন। তখন সেখানে অতর্কিতে সেই নাটককে বাধা দিতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেসের মদদপুষ্ট একদল গুন্ডাবাহিনী তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে৷

সেদিন ওই আক্রমণে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরের দিন ২ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়।

তার মৃত্যুতে থেমে থাকেনি তাদের নাট্য আন্দোলন বরং আরও জোরে প্রতিবাদের জন্য গর্জে উঠেছিল সফদারের সঙ্গীরা৷ এরফলে ২জানুয়ারিতে তার মৃত্যু হলেও ঠিক তার দুদিন পরেই ৪ জানুয়ারি ওই একই স্থানে তার স্ত্রী মলয়শ্রী হাশমি আবার ‘হল্লাবোল’ নাটকের অভিনয়ের আয়োজন করেছিলেন। আর সেদিন যেন কোনও শোক নয় একেবারে ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠেছিল গোটা এলাকা।

নাটকে যুক্ত সফদার হাশমির অনুগামীদের দুঃসাহস আর প্রতিজ্ঞার কাছে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল গুন্ডাগিরিও। তার মৃত্যুতে তোলপাড় হয়েছিল তখন গোটা দেশ। বিরোধীদের কাছে চাপের মুখে পড়ে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।

ওই ঘটনার ১৪ বছর পরে গাজিয়াবাদ আদালত সফদার হাশমি হত্যার জন্য ১০জনকে অপরাধী গণ্য করে যার মধ্যে একজন ছিলেন কংগ্রেস নেতা মুকেশ শর্মা, যিনি ছিলেন ওই সময় ভোটের মেয়র পদপ্রার্থী৷ এমন ঘটনার পর থেকে বামমনস্ক সংস্কৃতি জগতের প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে ওঠেন সফদার হাশমি ৷

১৯৮৯ সালে বিখ্যাত শিল্পী এম এস হুসেন, সফদার হাশমিকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি পেইন্টিং বানিয়েছিলেন, তখন নিলামে যেটির দাম উঠেছিল এক মিলিয়ন ডলার। সেটাই ছিল নিলামে প্রথম কোন ভারতীয় শিল্পীর পেন্টিংয়ের এতটা দাম ওঠা।

More from LifestyleMore posts in Lifestyle »
More from PoliticalMore posts in Political »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.