চলে গেলেন তরুণ মজুমদার
বাবলু ভট্টাচার্য : প্রয়াত তরুণ মজুমদার। আজ সোমবার সকাল ১১.১৭ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বর্ষীয়ান পরিচালক। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

তরুণ মজুমদার ১৯৩১ সালের ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল জমানার মধ্যে থেকেও তরুণ মজুমদার ছিলেন বাংলা সিনেমার ঠিক যেন চিরতরুণ।
‘চাওয়া পাওয়া’ (১৯৫৯) তরুণ মজুমদারের প্রথম ছবি। ন’য়ের দশকে এসে ১৯৯০ সালে তৈরি হয় ‘আপন আমার আপন’। অর্থাৎ তাঁর ফিল্ম কেরিয়ারের গ্রাফটা প্রায় এক। নিজের গণ্ডির বাইরে কখনোই বেরোননি। বাঙালির খুব চেনা রং, গন্ধ, পরিবেশ, মানুষদের সঙ্গে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় পাঁচ যুগ।

সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন ততদিনে নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। এর মাঝেই অন্য একটা ঘরানা– যা দর্শকের ভীষণ কাছের, খুব চেনা অথচ নিছক বিনোদন নয়- এমন কিছুই বলতে চাইলেন তরুণ মজুমদার। ‘পলাতক’, ‘বালিকা বধূ, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘গণদেবতা’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’, ‘আলো’— বক্সঅফিস কখনও মুখ ফেরায়নি।

অথচ বাংলা সাহিত্যকে বুকে করে বেঁচে ছিলেন তিনি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমল কর, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের উপন্যাস নিয়ে ছবি বানিয়েছেন। আর রবীন্দ্রনাথ ছিল তাঁর অন্তরে। সেইসময় বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ‘হিট’ পরিচালক আক্ষরিক অর্থে তিনিই।
শাপলা শালুক ভরা টলটলে পুকুর। নারকেল গাছের সারি, বাঁশবন। মাঝে মাঝে রোদ ঢুকছে, মাঝে মাঝে ছায়া। খড়ের চালের বসতবাড়ির মাঝে মাঝে টিনের চাল। মাচায় লাউ ডাটা ঝুলছে। তাঁর ছবি দেখেই প্রথম জানা বাংলার বুকে ছড়ানো কত রঙের গ্রাম। পলাশবুনি, কীর্ণাহার, মন্দিরা, বাতাসপুর, খণ্ডগ্রাম, বাতিকর, খয়রাশোল…।

অযথা খ্যাতি বা প্রচারের আলোয় ছোটেননি কোনোদিন। বড় বড় ফিল্মি পার্টি চিরকাল এড়িয়ে গেছেন। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বগুড়া শহরে। দেশভাগের পর চলে যান ওপার বাংলার উত্তরবঙ্গে। দে’জ পাবলিশিং থেকে তার লেখা একাধিক জনপ্রিয় বই আছে। তিনি কখনও রং বদলান নি। সার্বদাই ছিলেন বাম মনোভাবাপন্ন।
তিনি পদ্মশ্রী, জাতীয় পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। মহান চলচ্চিত্র পরিচালকের প্রয়াণে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন রাজের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই প্রখ্যাত পরিচালকের প্রয়াণে ফিল্মি দুনিয়া শোকস্তব্ধ।
Be First to Comment