মোল্লা জসিমউদ্দিন : কলকাতা, ১৪ জুলাই ২০২১। গত ১২ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের অফিস থেকে জানানো হলো – ‘নন্দীগ্রাম বিধানসভার পুন গননা চেয়ে মামলাটির শুনানি হবে এবার বিচারপতি শম্পা সরকারের বেঞ্চেঃ। চলতি সপ্তাহে এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে এই মামলার শুনানি ঘিরে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক মহল ছিল সরগরম। গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে উঠেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়ের করা পুন গননা চেয়ে মামলাটি।ওইদিন এই মামলা থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ।তিনি এই মামলাটি পুনরায় প্রধান বিচারপতির এজলাসে পাঠিয়ে দেন।ওইদিন বিচারপতি কৌশিক চন্দ এই মামলার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন – ‘ মামলাকারী অভিযোগ তোলার জন্য তিনি এই মামলা থেকে সরছেন না, সরছেন এই মামলায় বহু সুবিধাবাদীদের তৈরি করা বিতর্ক থেকে অবসান করাতে।এই মামলার শুনানির প্রথম দিনেই এজলাসের আপত্তির কথা জানাতে হত তাঁকেই।তা না করে সরাসরি প্রধান বিচারপতির কে চিঠি লিখে আপত্তি জানানো আইনগত ঠিক নয়’। এই মামলায় মামলাকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে বিচারব্যবস্থা কে কলুষিত করার জন্য ৫ লক্ষ টাকার আর্থিক জরিমানা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাস।এই জরিমানার অর্থ জমা দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিল কে বলে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। বার কাউন্সিল এই অর্থ করোনা মোকাবিলায় খরচ করবে বলে আদেশনামায় উল্লেখ রয়েছে। ওইদিন বিচারপতি পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন – ‘ আদালতের ভেতর ও বাইরে প্রকাশ্যে যেভাবে আমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তা সঠিক নয়।মামলাকারীর এই ব্যবহারের জন্যই আদালত তাঁকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক জরিমানার নির্দেশ দিলো। এই টাকা জমা করতে হবে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলে।তারা এই টাকা দুস্থ আইনজীবীদের করোনা মোকাবিলায় কাজ করবে।’ বিচারপতি এই মামলার পর্যবেক্ষণে আরও জানিয়েছিলেন – ‘সংশ্লিষ্ট মামলায় আমি দুতরফের কাউকে ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা।তা সত্বেও আদালতের বাইরে এবং ভেতরে পরিকল্পিত ভাবে প্রতিবাদ সংগঠিত করা হয়েছে। এই ধরনের কাজ সঠিক নয়। আমার বিচারপতি পদ স্বায়ীকরণ নিয়ে প্রকাশ্যে এনে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর শপথগ্রহণ এর শর্ত ভঙ্গ করেছেন’। যদিও কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হবে দল বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর নন্দীগ্রাম বিধানসভার নির্বাচনে নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান।একদিকে যেমন সুপ্রিম কোর্টে বিতর্ক এড়াতে দুই বাঙালি বিচারপতি বাংলার মামলা থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন অনেক আগেই। ঠিক অপরদিকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দ কে বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে বারবার তোপ দেগে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবীরা।কখনো প্রধান বিচারপতি কে লিখিত আবেদন করে নন্দীগ্রাম মামলায় এজলাস বদলের আবেদন। আবার কখনো সরাসরি বিচারপতি কে তাঁর এজলাসেই রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা।সাম্প্রতিককালে কোন বিচারপতি ঘিরে এমন রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ সেভাবে শোনা যায়নি।তবে বিচারপতিও আগের শুনানিতে মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে চলেছিল নন্দীগ্রাম সংক্রান্ত দুটি পিটিশনের শুনানি। সেসময় ভার্চুয়াল হাজিরায় ছিলেন মামলাকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাছাড়া সশরীরে হাইকোর্ট চত্বরে উপস্থিত ছিলেন নন্দীগ্রাম বিধানসভার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান।গত মাসে হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সরাসরি বিচারপতি কে বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ তোলে ছিলেন।তাই এই মামলায় নিরপেক্ষতা এবং রাজ্যের পক্ষে সুবিচার পাওয়া সম্ভব নয় বলে দাবি ছিল অভিষেক মনু সিংভির।বিচারপতি কৌশিক চন্দ পেশাগত আইনজীবী জীবনে বহু মামলা লড়েছেন এবং লিগ্যাল সেলের সাথে যুক্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবীর অভিযোগ। বিচারপতি তখন এজলাসে জানিয়েছিলেন – ‘ নিদিষ্ট কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে মামলা করলেই তাঁকে সেই দলের কর্মী সমর্থক হতে হবে? তা আমার জানা নেই!’ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে তিন আইনজীবীর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন খোদ বিচারপতি। অভিষেক মনু সিংভি জাতীয় কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা, তবে তৃণমূলের ভোটে রাজ্যসভার সাংসদ। অপরদিকে গোপাল মুখোপাধ্যায় এবং সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নামে দুজন আইনজীবীর রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরেন বিচারপতি। গত শুনানিতে বিচারপতি এজলাসে সওয়াল-জবাব পর্বে জানান – ‘ গত ১৬ জুন প্রধান বিচারপতির কাছে এই মামলার বেঞ্চ বদলের আবেদন জানানো হয়েছিল।১৮ জুন এই মামলার যখন শুনানি হয়েছিল আমার এজলাসে তখন কেন বেঞ্চ বদলের আবেদন জানানো হলোনা? ‘ এরপর অবশ্য বেঞ্চ বদলের আবেদন জানানো হয়েছিল এই এজলাসেই।তাই দুটি আবেদন একই সাথে চালানো যায়না বলে মতপ্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি। সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান – ” সাধারণত কোন বিচারপতি ঘিরে মামলাকারীর কোন প্রশ্ন থাকলে তা সরাসরি সেই এজলাসেই লিখিতভাবে জানাতে হয় “। একুশে বিধানসভা নির্বাচনে সবথেকে হাইপ্রোফাইল আসন ছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম বিধানসভা।ফলাফল প্রকাশের দিন ছিল টানটান উত্তেজনা। প্রথম পর্বে তৃনমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১২০০ ভোটে জেতার ঘোষণা করা হলেও একটু রাতে জানানো হয়েছিল – ‘ তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয় , জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। তাও ১৯০০ এর বেশি কিছু ভোটে’। সেইদিনই গননায় কারচুপির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন মমতা।তিনি আদালতে যাওয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের দারস্থ হন মুখ্যমন্ত্রী। বিচারপতি বিতর্ক মিটলো সোমবার। চলতি সপ্তাহে এই মামলার শুনানি রয়েছে বিচারপতি শম্পা সরকারের বেঞ্চে।
চলতি সপ্তাহে নন্দীগ্রাম মামলার শুনানি বিচারপতি শম্পা সরকারের বেঞ্চে…..।
More from GeneralMore posts in General »
- TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ‘ভোটযুদ্ধ, দেশের লড়াই’, পর্ব – ২…।
- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট চারটি সেলাই করতে হলো…।
- Identification of gap where cooperative societies are less across country will prove helpful in cooperatives’ expansion through National Database: Union Minister for Home and Cooperation Amit Shah….
- আন্ত:জেলা ফুটবল ১৪ মার্চ থেকে শুরু বালুরঘাটে….।
- কলকাতার আনন্দপুরে বস্তিবাসীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল ভারত সেবাশ্রম সংঘ…
- অবৈধ বালিচুরি রুখতে তৎপর মঙ্গলকোটের পুলিশ….।
Be First to Comment