শতরূপা সান্যাল : অভিনেত্রী, প্রযোজক ও চিত্রপরিচালক।
ওদিক দিয়ে আমার যাতায়াত ছিল কম
উত্তর কলকাতার মানুষ আমি
বিয়ে হয়ে দক্ষিণে এসেছি।
গড়িয়াহাটার মোড় ছাড়া কিছুই তেমন চিনিনা।
তুমি আসতে বাসে করে উত্তর থেকে দক্ষিণ
রোজ আসতে হত তোমায় চাকরির দায়ে।
তখন প্রায় দু ঘন্টা লাগতো উত্তর দক্ষিণ করতে।
কত বছর এভাবে উত্তর দক্ষিণ করেছ
হিসেবও রাখেনি স্বার্থপর সংসার।
গড়িয়াহাটার মোড় থেকে বাসে উঠতে হত তোমাকে।
সেদিন হঠাৎ ই আমার ঐ পথ দিয়ে যাওয়া।
মেঘ করেছে কালবৈশাখীর আগে যেমন হয়।
আমাদের গাড়ি সিগন্যাল খুলতেই সাঁই সাঁই ছুট।
দেখলাম, তুমি দাঁড়িয়ে আছো ক্লান্ত মুখ ক্লান্ত চোখ দূরে নিবদ্ধ
যেদিক থেকে তোমার বাস আসবে
তোমায় নিয়ে যাবে উত্তরের গন্তব্যে।
সাদা জমিতে বেগুনি ছোট ছোট ফুল তোমায় জড়িয়ে
তোমার পরিপাটি কালো চুলে সারাদিনের শ্রম
নিরুত্তাপ মুখে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা।
মনে হল, তোমায় ডাকি।
তুলে নিই তোমায় আমাদের যাত্রায়।
ততক্ষণে পেরিয়ে এসেছি অন্তবিহীন পথ।
ত্রিশ বছর কি খুব বেশি সময়?
উত্তর থেকে দক্ষিণ কতবার যাওয়া আসা করেছি
হিসেব রাখেনি কেউ, হিসেব রাখেনি মহাকাল।
তোমার সুতনু দেহ অনিন্দ্য মুখশ্রী কবে মিলিয়েছে চিতার আগুনে।
গড়িয়াহাটার মোড় বদলেছে রূপ
বদলেছে শহর কলকাতা।
এখন উত্তর থেকে দক্ষিণে আসতে আধা ঘন্টাও লাগেনা।
উড়াল পুলের পিঠে সওয়ার হয়ে সেদিন ঠিক অমনি বিকেল!
মেঘ করেছে যেন ঝড় উঠবে এখনই।
গড়িয়াহাটার মোড়ে সিগন্যালে দাঁড়াতেই হল।
দেখলাম, তুমি দাঁড়িয়ে আছো।
সাদা জমিতে বেগুনি ফুল ছাপ শাড়ি
কাঁধে ভারি ব্যাগ।
দৃঢ় কোমল মুখে শেষ বিকেলের আলো।
একটু যেন বিষন্ন সেই মুখ।
তুমি কি ভালো নেই, মা?
তোমায় ডাকতে গেলাম, আর সিগন্যাল সবুজ হয়ে গেলো।
Be First to Comment