জন্মদিনে স্মরণঃ গিরিজা দেবী
বাবলুু ভট্টাচার্য : যাঁরা মঞ্চে তাঁর সৃষ্টি শোনার সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরা জানেন গিরিজা দেবী শুরু করতেন রাগ যোগকোষে বিলম্বিত বন্দিশে- “এ ঝাঁঝরিয়া বানাকে এ মায়ি ক্যায়সি কর আও তেরে পাস” দিয়ে। তারপরেই দ্রুত বন্দিশে ধরতেন “বহুত দিন বিতি আজহুনা আয়ে মোরি শাম।”
এরপর মিশ্র তিলোকামোদ… এবং একের পর এক শুধু ভেসে যাওয়া। এরই মাঝে কখনও হয়তো স্বরচিত দাদরা “পুরব দেশসে আয়ে গোরিয়া যাদুয়া ডর গ্যয়ি রে..”
কণ্ঠশিল্পী ও সারেঙ্গিবাদক সারজুপ্রসাদ মিশ্রর কাছে তিনি প্রথমে খেয়াল ও টপ্পায় প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তী সময় চাঁদ মিশ্রর কাছে বিভিন্ন সংগীত রীতি রপ্ত করেন।
বারাণসি থেকে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। এর পর আমৃত্যু এই শহরেই ছিলেন গিরিজা দেবী।
ধ্রুপদী ও শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি ঠুমরিকে জনপ্রিয় করে তুলতে গিরিজা দেবী যথেষ্ট অবদান রাখেন। এমনকি জীবদ্দশায় তিনি ‘ঠুমরির রানি’ হিসেবে পরিচিতি পান।
১৯৪৯ সালে অলইন্ডিয়া এলাহাবাদ রেডিওতে পরিবেশনার মাধ্যমে গিরিজা দেবীর আত্মপ্রকাশ ঘটে।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে কলকাতা আইসিটি সংগীত রিসার্চ একাডেমিতে সংগীত গুরু ছিলেন তিনি।
ঢাকায় বেঙ্গল ক্ল্যাসিক্যাল উৎসবে তিনবার গিয়েছিলেন দেবী গিরিজা প্রসাদ।
বেনারসের ধুলোয় বড় হওয়া, গঙ্গায় সাঁতার কাটা, ঘোড়ায় চড়া চঞ্চলমতি ছোট্ট গিরিজা বাবা অন্ত প্রাণ ছিলেন। চার বছর বয়সে বাবা রামদেও রাইই বসিয়ে দিয়েছিলেন পন্ডিত সূর্যপ্রসাদ মিশ্রর সামনে। তারপর ইতিহাস।
পরে সরজুপ্রসাদ মিশ্র এবং তারও পরে চাঁদ মিশ্রের কাছে তালিম নিয়েছিলেন। গিরিজা দেবী হয়ে উঠলেন বেনারস ঘরানার কিংবদন্তি শিল্পী। ঠুমরির সম্রাজ্ঞী। আটষট্টি বছরের সঙ্গীত জীবনে গেয়েছেন অসংখ্য খেয়াল-টপ্পা। গেয়েছেন কাজরী, চৈতি, হোলি।
১৯৪৬ সালে ব্যবসায়ী মধুসূদন জৈনের সঙ্গে বিয়ে। তাঁর প্রেরণায় আরও এগিয়ে চলেন গিরিজা দেবী। গিরিজা দেবীর সঙ্গীত সাধনায় ছেদ পড়েছিল একবারই। ১৯৭৫ সালে মধুসূদন জৈনের মৃত্যুর পর ছ মাস সঙ্গীত সাধনা থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন গিরিজা দেবী। আমৃত্যু সঙ্গীতের সাধনাই করে গিয়েছেন।
পেয়েছেন পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ সম্মাননা, সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার।
ঠুমরি সম্রাজ্ঞী ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর ৮৮ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
বিদুষী গিরিজা দেবী ১৯২৯ সালের আজকের দিনে (৮ মে) বেনারসে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment