জন্মদিনে স্মরণঃ ফা রু ক শে খ
বাবলু ভট্টাচার্য : বলিউডের রুপোলি পর্দায় তখন জাঁকিয়ে রাজত্ব করছেন অমিতাভ বচ্চন থেকে রাজেশ খন্না। একেবারে সাদামাটা চেহারা আর আচার-ব্যবহারে যেন পাশের বাড়ির ছেলেটি; এই ব্যক্তিত্ব নিয়েই তিনি বলিউডে পা রাখলেন। প্রথম দর্শনেই মাত। আর তার পর সাফল্যের লম্বা দৌড়। তিনি ফারুক শেখ।
১৯৭৩ সাল। সে বছরই মুক্তি পেয়েছিল ‘জঞ্জির’, ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’, ‘ববি’ থেকে ‘অভিমান’। মুক্তি পায় আরও একটি ছবি, ‘গরম হাওয়া’। অভিনয়ে ফারুক শেখ। আর পাঁচটা বাণিজ্যিক ছবির মতো বিষয়বস্তু নয়। দেশভাগের পটভূমিতে দেশ না ছাড়ার পণ। অনেকের মতে এটি-ই ছিল বলিউডে ভিন্ন ধারার ছবির পথপ্রদর্শক।
এখনকার ফারহান আখতার, বা একটু পিছিয়ে গেলে নাসিরুদ্দিন শাহ, ওম পুরী যে ঘরানার অভিনয়ে পরিচিত, তা তো এক সময় শুরু হয়েছিল অমল পালেকর, ফারুক শেখের হাত ধরেই।
‘গরম হাওয়া’-র পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ফারুককে। একের পর এক হিট ছবি। সমসাময়িক ছবির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে থাকে তার সমান্তরাল ছবির ধারা। সত্যজিৎ রায় থেকে শ্যাম বেনেগাল, কিংবা হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় সকলেরই পছন্দের তালিকায় ছিল তার নাম।
‘গরম হাওয়া’য় ফারুকের অভিনয় দেখেই সত্যজিৎ রায় তাকে বেছে নিয়েছিলেন ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’তে। তার জনপ্রিয় ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ ‘উমরাহ জান’, ‘নুরি’, ‘চশমে বদ্দুর’, ‘কিসি সে না কেহনা’, ‘কথা’ ও ‘বাজার। একদিকে যখন ‘চশমে বদ্দুর’-এর মতো ছবিতে ‘পাশের বাড়ির ছেলে’, একই সঙ্গে ‘উমরাহ জান’-এ রাজার চরিত্রে অনবদ্য।
ফারুক, বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। ছবির পর্দায় কিন্তু আসার কথা ছিল না ফারুকের। বাবাকে অনুসরণ করে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। বাবা ছিলেন বরদার ডাকসাইটে উকিল মোস্তফা শেখ। পসার জমাতে সপরিবার মুম্বই চলে আসেন তিনি।
বড় হয়ে বাবার পেশাকেই বেছে নিয়েছিলেন ফারুক। কিন্তু কিছুদিন পরেই বুঝতে পারেন, এ কাজ তার নয়। চলে আসেন মঞ্চে। অভিনয়ে তার হাতেখড়ি হয়েছিল কলেজ জীবনে। যেখানে তার প্রথম দেখা হয় রূপার সঙ্গে। আলাপ হয়েছিল শাবানা আজমির সঙ্গেও। প্রথম জনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন ফারুক। আর দ্বিতীয় জন ছিলেন তার আজীবন বন্ধু।
ফিল্ম, নাটক ছাড়াও বেশ কিছু টিভি সিরিয়াল করেছিলেন ফারুক শেখ। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য শাবানা আজমির সঙ্গেই ‘তুমহারি অমৃতা’। জনপ্রিয় হয়েছিল ফারুকের টক শো ‘জিনা ইসিকা নাম হ্যায়’।
ফারুক শেখের আর একজন কাছের বন্ধু-সহকর্মী ছিলেন দীপ্তি নাভাল। এক সময় তাদের জুটি খুব নাম করেছিল। ফারুকের বেশির ভাগ ছবিতে তিনিই ছিলেন নায়িকা। সে ‘চশমে বদ্দুর’, ‘কিসি সে না কেহনা’, ‘কথা’ কিংবা সাম্প্রতিক ছবি ‘লিসেন আমায়া’।
২০১৪ সালে শেষ ছবি করেন ‘ইয়ঙ্গিস্তান’। সে ছবি মুক্তি পাবার আগেই মারা যান ফারুক শেখ।
ফারুক শেখ ১৯৪৮ সালের আজকের দিনে (২৫ মার্চ) গুজরাটের বরদায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment