স্মরণ : কা লি কা প্র সা দ ভ ট্টা চা র্য
“আমরা লোকগান গাই। নতুন গান লিখি না বা গাই না। আমাদের গানে পশ্চিমী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার হয় না। সেই জন্যই ‘দোহার’ গানের দল। ব্যান্ড নয়।’’
[ কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য ]
বাবলু ভট্টাচার্য : জন্মেছিলেন এমন এক সময়ে, যখন পপ আর রকের দাপটে বাঙালির আটপৌরে আঞ্চলিক গানগুলো ডুবে যাচ্ছিল অবহেলার আঁধারে। তাঁর একক প্রচেষ্টাতেই সেই অনাদর থেকে মূলধারায় স্রোতে ফেরে লোকগান।
গানের দল ‘দোহার’-এর কাণ্ডারি, কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের জন্ম আসামের শিলচরে ১৯৭০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর।
তাঁর সুরের সুতোয় দুই বাংলাকে একত্রে গাঁথার প্রয়াস যখন সবে শুরু, ঠিক তখনই বর্ধমানের এক সড়ক দুর্ঘটনা থামিয়ে দিল সব।
শিলচরের ভট্টাচার্য পরিবারের সবাই ছিলেন কোনো না কোনোভাবে গানের সঙ্গে যুক্ত। তাই এই পরিবারের ছেলে গানকেই করবেন জীবনের ধ্যান-জ্ঞান, এ ঘটনা বিস্ময় জাগায়নি কারো মনে। তবে বাবা রামচন্দ্র ভট্টাচার্য’র দেখানো ধ্রুপদী সংগীতচর্চার পথে না এগিয়ে কালিকা ঝুঁকেছিলেন কাকার লোকগানের আধ্যাত্মিক দর্শনেই।
কাকা অনন্ত ভট্টাচার্য’র সংগ্রহে ছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি লোকগান। সেসব শুনতে শুনতেই বড় হয়েছেন কালিকা। আর সেইসব গানকে অবলম্বন করেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলিতে বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন গানের দল ‘দোহার’।
নিজেদের মৌলিক গান দিয়ে নয়, ‘দোহার’ পরিচিতি পেয়েছিল আবহমান বাংলার বাউল, কীর্তন, ঝুমুর, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, চটকার মতো ভুলতে বসা লোকগান নতুন করে তুলে এনে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হওয়ার পরও গোঁড়া ধর্মীয় আর সামাজিক বেড়াজালকে ছিন্ন করা বাউলেরা যেভাবে গানে গানেই প্রচার করেছেন নিজেদের দর্শন, ঠিক একইভাবে একালের গণজাগরণের আন্দোলনেও নিজের হাতিয়ার হিসেবে গানকেই তুলে নিয়েছিলেন তিনি।
২০১৩ সালে সেভাবেই তৈরি হয়েছিল ‘শাহবাগ দিচ্ছে ডাক’ গানটি। এ প্রসঙ্গে কালিকা বলেছিলেন, সাধারণত গান না লিখলেও ‘প্রাণের তাগিদে’ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে তিনি লিখেছিলেন গানটি।
সিনেমাতে কালিকাপ্রসাদ-এর গাওয়া গান এর আগে ব্যবহার হয়েছে দু’বার, সৃজিত মুখোপাধ্যায়-এর ‘জাতিস্মর’ আর গৌতম ঘোষ-এর ‘মনের মানুষ’-এ। তবে বাংলাদেশের প্রতি নিজের ‘প্রাণের তাগিদে’ই প্রথমবারের মতো সংগীত পরিচালনা করেন তিনি ‘ভুবন মাঝি’ চলচ্চিত্রে।
গণমানুষের গান একজীবনে যেভাবে তুলে এনেছেন কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য, তাতে করে চিরস্মরণীয় হয়েই তিনি রয়ে যাবেন দুই বাংলাতেই।
কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য ২০১৭ সালের আজকের দিনে (৭ মার্চ) হুগলী জেলার গুরাপ গ্রামের কাছে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment