Press "Enter" to skip to content

কোভিড-১৯ ছড়ানো থেকে ম্যাজিকের রহস্য ফাঁস করা, সব কিছুর পেছনেই আছে বিদেশি নোংরা হাত। আমি সেটা ধরে ফেলেছি। সুতরাং আমাকে… …।

Spread the love

////////[প্রদীপের সঙ্গে আলাপ=প্রলাপ]\\\\\\\
((((((((((((((((((((((((পর্ব-০৭১))))))))))))))))))))))
*জাদু শিল্পী, মঞ্চ মায়াবী পি সি সরকার জুনিয়র*
[Dr.Prodip Chandra Sorcar, M. Sc., Ph. D.]
কলকাতা : ২৩ জুন ২০২১।
(রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের M.A. 4th semester এ MAGIC এর ILLUSION পাঠ্যক্রমের এক আংশিক আলোচনা।)

—-“বাচ্চা লোগ, এক দফে হাততালি বাজা দো”—-

শিক্ষিত, সচেতন লোক মাত্রেই জানেন, ডাক্তার হতে গেলে, পাঁচ-ছ বছরের মতো ডাক্তারি কোর্সে লেখাপড়া করে পাশ করতেই হবে। সেই ডাক্তারি পড়ার কলেজটাও আবার আলতু- ফালতু হলে চলবে না। সেটা , গভর্ণমেন্টের স্বীকৃতি পাওয়া প্রতিষ্ঠিত কলেজ হওয়া চাই। নইলে পুলিশ এসে শিক্ষক, ছাত্র-সব শুদ্ধু পাকড়াও করে, জালিয়াতি করার দায়ে হাজতে ঢোকাতে পারে। ডিগ্রী ছাড়া ডাক্তারি করা, ওষুধ দেওয়া নিষেধ।
শুধু ডাক্তারি নয়, জীবনের প্রতিটি বিজ্ঞান সম্মত শিক্ষা বা কর্ম ক্ষেত্রে, এরকমই কড়া নিয়ম আছে । ঠিকমতো না জেনে, বা শিক্ষা না নিয়ে, পাস না করে বা সার্টিফিকেট না নিয়ে, সেই কাজ করাটা আইন বিরুদ্ধ বলে ভাবা হয়। ইন্জিনিয়ার হতে গেলে, ইন্জিনিয়ারিং পাশ করতে হবে ; উকীল ব্যারিস্টার হতে গেলে ওকালতি পাশ করতেই হবে; হিসেব-নিকেশের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টেন্সি পাশ করতেই হবে, এভাবে “প্রায়” সব ক্ষেত্রেই একটা পাশ করে, দক্ষতার স্বীকৃতির মাপকাঠিতে যোগ্যতা মাপার ব্যবস্থা আছে। তাকে বলে ‘ডিগ্রী’। ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত না থাকলে, তাকে বলে ‘ডিপ্লোমা’ ।পৃথিবীর সব জায়গায় এই একই আইন।
“প্রায়” সব ক্ষেত্রে বলেছি, তার কারণ, চিন্তা করে দেখলাম, ‘সবক্ষেত্রে’ বললে, বলাটা ভুল হবে। কারণ, তিনটে ব্যাতিক্রমী সাবজেক্ট তো এখনই পরিষ্কার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, যেগুলো লোকেরা নির্লজ্জভাবে করেই চলেছেন ! লেখা-পড়া বা সোজা কথায় ‘বিদ্যে’ বা যোগ্যতা না থাকলেও , বা জনগণের কাছে অপমানিত হয়েও, সেগুলো দেখছি লোকে বেশ ‘স্বীকৃতি ছাড়াই’ প্রয়োগ করে চলেছেন। সে গুলো হচ্ছে, (১) রাজনীতি করা, (২) জাদুকর হওয়া। (৩) না জেনে, না বুঝে ফোড়ন কাটার সমালোচক হওয়া।
পলিটিক্স করতে কিছু পাস- টাস করতে হয় না। গো-মূর্খ হলেও চলবে। বরঞ্চ বিদ্যে বুদ্ধি বিবেক থাকলে বাজে রাজনৈতিক নেতা বলে গণ্য হতে পারেন। আমি নিজে দেখেছি, একজন ‘টুকে পাশ করা’ ছাত্র, ধরা পড়ার পরও কেমন মুখ মুছে ‘শিক্ষা-মন্ত্রী’ হয়ে শপথ নিচ্ছেন ; লাইব্রেরি থেকে বই চুরির দায়ে ধরা আর এক ব্যক্তি, পরে আইন মন্ত্রী হয়েছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য খুবই খারাপ, পরিবহন মন্ত্রীর পায়ে গোলমাল আছে, ইত্যাদি।
আর, দ্বিতীয়টা (২) অর্থাৎ জাদুকর হতে গেলেও, কোনও বিদ্যে ,বুদ্ধি, চেতনা, রেওয়াজ, সংস্কৃতি– কিস্যুর প্রয়োজন নেই। দরকার শুধু বেশ কিছু টাকা আর নির্বোধ অথবা অপারগ অভিভাবক বা পরিবার, আর অবশ্যই দরকার একজন,. (অন্ততঃপক্ষে একজন )– জীবনে বিফল হওয়া এক জাদুকর ‘গাইড’ বা ‘যন্ত্র সাপ্লাই-এর ‘গুরু’।

সেই গুরু তিনি নিজেই কিন্তু জাদু জীবনে পরাজিত, ফ্লপ্ । দাঁড়াতে পারেন নি। তিনি দর্শক পরিত্যক্ত, সমাজের প্রতি দায়-দায়িত্বহীন, শুধু কৌশলটা জেনে ফেলা এক নির্বোধ দুষ্কৃতী। তিনি হয়তো কোনও প্রতিষ্ঠিত জাদুকরের দলে ‘কাটা সৈনিক’-এর পার্ট করেছিলেন; শিল্পী হয়ে উঠতে পারেন নি,তবে সঙ্গে থেকে থেকে কৌশল কিছু শিখে ফেলেছেন। কোনও অনিবার্য কারণে সেখান থেকে বিতাড়িত; তারপর ধার-দেনা করে শেখা সেই কৌশলের যন্ত্রপাতিগুলো বানিয়ে, নিজেই একটা দল বানিয়ে জাদুকর সেজে মঞ্চে অবতরণ করেন। অনিবার্য কারণে দর্শকদের মন জয় করতে না পেরে সেই যন্ত্রপাতি আবার উঠতি অন্য কাউকে বেঁচে, ধার দেনা শোধ করার চেষ্টা করেন। অভাবে জীবন কাটান। এই ধরণের ‘জাদুকর’দের আমি নাম দিয়েছি ‘X-type’ জাদুকর’। এঁরা এঁদের ‘ছাত্র’দের নিয়ে একটা গোষ্ঠী তৈরি করেন। এবং নিজেদেরকে ‘ম্যাজিকের-গুরু’ বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। সাধারণতঃ তাঁদের একটা ম্যাজিকের যন্ত্র তৈরি করার বা বিক্রি করার দোকান থেকে থাকে। যে কোনও লোককে যন্ত্র ভাড়াও দেন। নিজে পর্দার পাশে দাঁড়িয়ে ‘ছাত্রকে’ সহায়তা করেন। পরবর্তী কালে তিনি এই ‘ছাত্র’দের নিয়ে কনফারেন্স, কম্পিটিশন ইত্যাদির আয়োজন করেন। ইত্যাদি। অন্তঃসারশূন্যতার কারণে লোক হাসান, ম্যাজিকের প্রতি দর্শকের কৌতুহল, আগ্রহকে নষ্ট করে, কৌলীন্য , আভিজাত্য হারিয়ে এলেবেলে বাজারে নষ্ট শিল্প বানিয়ে দেন। এরা ক্ষমারও অযোগ্য।
‘Y-type’ জাদুকরেরাও জীবনে দাঁড়াতে না পারার আরেক শ্রেণীর জাদুকর, কিন্তু তাঁদের অবদান জাদু শিল্পের প্রতি অসামান্য। তাঁরা হেরে গেছেন শুধু মাত্র তাঁদের ভুল দৃষ্টিকোণের জন্য। তাঁরা জন্মেছেন ভারতীয় হিসেবেই, কিন্তু তাঁঁরা ভাবেন যে তাঁরা এক-একজন নর্ডিক্স- ইউরোপীয়ান , মানে নীল চোখ, সাদা চামড়ার ,দীর্ঘ-দেহী , সোনালী চুলো সাহেব। তাঁরা টেইল-কোট গায়ে, মাথায় ‘সিল্ক টপ’ টুপি, হাতে সাদা গ্লাভস্ পরে ‘জনি-ওয়াকার’ স্মার্ট সেজে ওয়াকিং স্টিক হাতে ম্যাজিক দেখান। ওই পোষাকে আমাদের বাঙালি জামাই-বাবু মার্কা দেহের গঠন যে হাস্যকর রকমের বে-মানান, সেটা বোঝেন না। মুখের মেক-আপ শুধু মুখের সামনে টুকু করেন, গলায়, কানে বা ঘাড়ের দিকে নয়। ফলে আমাদের নিজস্ব রঙের মুখের ওপর একটা সাদা মুখোশ পড়ে আছেন বলে যে মনে হচ্ছে, সেটা বোঝেন না। ইত্যাদি।

ম্যাজিকের মধ্যে নানা রকম শ্রেণী বিভাগ আছে। আমি সেগুলোর নাম দিয়েছি, (১) কথার জাদু; (২) আন্তরিক হস্ত-লাঘব জাদু; (৩) বৈঠকী জাদু;(৪) বিচিত্রানুষ্ঠানের অঙ্গ-জাদু,;(৫) মঞ্চমায়ার পূর্ণাঙ্গ জাদু; (৬) মুক্ত-মঞ্চে প্রাকৃতিক রঙ্গ-জাদু ; (৭) ইতিহাস মুখী জাদূ; (৮) চ্যালেঞ্জ ধর্মী জাদু;(৯) ফিল্ম জাদু; (১০) টেলিভিশনে রেকর্ড ধর্মী জাদু;(১০) হিপ্নোটিজম বা মোহগ্রস্থের জাদু; (১১) রাসায়নিক জাদু; (১২) বৈনয়িকী বিদ্যার সাহায্যে জাদু; (১৩) সুপারসনিক বা আল্ট্রাসোনিক শব্দের প্রভাবের জাদু; (১৪) 3-D Projection এর জাদু।

আমার মনে হয় ওপরে লেখা ১৪ টা বিভাগের মধ্যে আবার নানা রকম স্তর আছে। তা ছাড়াও আছে, হলো নাটকীয়তা ডিঙিয়ে জাদু-বাস্তবতার স্তর; তারপর আসছে জাদু-কল্পের স্তর আর সব শেষে হলো দৃশ্যকাব্যে বাস্তব এবং কল্পনার মিশে যাওয়ার স্তর। যেন দুটো সমান্তরাল, সম-দুরত্ব বজায় রাখা রেল লাইনের, অনন্তের কাছে,দূ-রে গিয়ে একই বিন্দুতে মিশে যাওয়ার স্তর। সেটাই ম্যাজিকের চরম প্রাপ্তি, ‘মোক্ষ’। পাশ্চাত্যের জাদুকরদের এই নিয়ে কোনও কথা বলতেই শুনিনি। যা শুনি, তা হচ্ছে নতুন যন্ত্রের খবর। আবেগের কোনও স্থানই নেই। আমি মুখ খুললে, রাশিয়া, জার্মানি, ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকা সশ্রদ্ধ ভাবে শোনে। প্রশ্ন করে। কিন্তু আমাদের, ভারতীয় পণ্ডিতেরা এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, ইন্দ্রিয়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করে মানুষের মনোরঞ্জন করাটা ঠিক আর্ট কিনা।
এই নিয়ে আমি গবেষণা করছি। নিঃসঙ্গ। একাকী।

পলিটিক্স আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আমরা আলোচনা করছি জাদু-জগতের অনোলোচিত কিছু বিষয় নিয়ে। এসব আলোচনা এর আগে আর কেউ করছেন কিনা জানিনা। আমার অন্তত জানা নেই। তবে, সব কিছু তো আর এখানে বিস্তারিতভাবে বলা সম্ভব নয়, কিন্তু আবার কিছু না বললেও নয়। নইলে ‘জাদু-চেতনা’ ঘটবে না। মানুষ অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াবে। সেটা ঠিক নয়।

এর উল্টো দিকটাও আছে। একটা সময় ছিল, যখন ইংল্যান্ডে জাদুর খেলা ঠিক মতো উপস্থাপন করতে না পেরে, মানে, আসর জমাতে না পেরে বিফল জাদুকরেরা একের পর এক বিভিন্ন জাদুর কৌশল সবাইকে ফাঁস করে দিয়ে বাহাদূরী নিচ্ছিলেন। তখন David Devant নামে এক প্রথম সারির জাদুকর, অন্যান্য জাদুকরদের সঙ্ঘবদ্ধ করে একটা সংগঠন বানান। নাম দেন London Magic Circle. খুব সম্মানের সঙ্গে সমাদৃত হয়। তিনি হন প্রথম সভাপতি। ঠিক করা হয়, কেউ যদি ম্যাজিকের কৌশল ফাঁস করেন, তাহলে তাকে বয়কট করে দেওয়া হবে। এভাবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি কন্ট্রোলে আসে। বেশ কয়েক বছর পর, ডেভিড ডিভ্যান্ট সাহেব একটা বই লিখে নিজেই তাতে নিজের আবিষ্কৃত কিছূ কৌশল প্রকাশ করে বসেন। ব্যাস্, ফোঁশ্ করে ওঠে বিরূদ্ধে পক্ষ। ফলে, নিজের তৈরি সংগঠন থেকে, নিজের তৈরি আইন অনুযায়ী, তিনি নিজেও বহিষ্কৃত হন। তখন তাঁর জীবনের শেষ বেলা। হাসপাতালে শুয়ে উনি দুঃখের সঙ্গে বলেছিলেন, ” ওগুলো আমার নিজের আবিষ্কার। প্রকাশ না করে গেলে, আমার সঙ্গেই ওই কৌশল গুলোর সহমরণ হতো। ”
কয়েকদিন পরই উনি মারা যান। সংগঠনও তাঁকে Inner Circle -এ ফিরিয়ে নিতে পারেন নি। এখন সংগঠনের মূল কক্ষের বাইরে তাঁর একটা আবক্ষমূর্তি বানিয়ে রাখা আছে। আমি যতবার যাই, প্রণাম করি। এখনও অন্দরকক্ষে তাঁর প্রবেশ নিষেধ।
আমি আমাদের ভারতীয় সংগঠন AIMC (বাবার প্রতিষ্ঠিত All India Magic Circle)এবং আমার মানস জাত “Illusion or Reality, Magic Research Society,”-র নিউক্লিয়ার কমিটি (জাদু-কুণ্ডলীনী),স্থির করেছি একটা সমঝোতায় আসতে। মানুষ কে সচেতন করতে আমরা কিছু প্রাথমিক কৌশল সবার কাছে প্রকাশ করবো। তাতে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সুবিধা হবে। সেই কৌশলগুলো চিহ্ণিত করবেন একটা বিশেষ নির্বাচিত কমিটি। আর বাকীগুলোর কৌশল থাকবে রাখা ঢাকা। কেউ প্রকাশ করলে সেটা হবে আইনত অপরাধ। কাজ চলছে। কিন্তু অসফল শিল্পীর তো জ্বালা অনেক, তারা নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য ফাঁস এবং অপবাদ তো করবেই। করেও চলেছেন। কেউ বেনামে, কেউ মুখোস পড়ে। আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন কিভাবে ওরা রোম্যাণ্টিসিজ্মকে ধ্বংস করছে । ওদের মদত দিচ্ছে বিদেশী কূটনৈতিক বদমায়েশের দল, আর বোকার মতো তাদের আস্কারা দিচ্ছে, অন্যের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খাবার মতো আত্মঘাতী কিছু দিশী দালাল। ওদের সমর্থন করবেন না। ওরা মায়াদেবীকে সস্তা বাজারী নৌটঙ্কি বানাতে চাইছে। ওরা কেন করতে চাইছে, তা নিয়ে এর পরের পর্বে (পর্ব-০৭২) বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো। কোভিড-১৯ ছড়ানো থেকে ম্যাজিকের রহস্য ফাঁস করা, সব কিছুর পেছনেই আছে বিদেশি নোংরা হাত। আমি সেটা ধরে ফেলেছি। সুতরাং আমাকে… … .জয় হিন্দ।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.