Press "Enter" to skip to content

কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক মৃণাল সেন। নিয়ম ভেঙে চলচ্চিত্র নির্মাণে বেশি উৎসাহী ছিলেন। তিনি পাল্টে দিয়েছেন বাংলা ছবির ধারা…….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ মৃণাল সেন

বাবলু ভট্টাচার্য : উপমহাদেশীয় বাংলা চলচ্চিত্রের ট্রিলজিতে সত্যজিৎ, ঋত্বিক ঘটকের পাশেই রয়েছেন তিনি। কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক মৃণাল সেন। নিয়ম ভেঙে চলচ্চিত্র নির্মাণে বেশি উৎসাহী ছিলেন। তিনি পাল্টে দিয়েছেন বাংলা ছবির ধারা।

বাংলা চলচ্চিত্রের আধুনিক রূপরেখা দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর প্রতিটি ছবিতে ক্ষুদ্র গলি থেকে রাজপথ, বস্তি থেকে অট্টালিকার চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন, যা পেয়েছে বৈশ্বিক রূপ। আর এখানেই তিনি অনন্য, সবার থেকে আলাদা। তিনি সমাজ বাস্তবতাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর ছবিতে নকশাল আন্দোলন যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে শ্রেণি দ্বন্দ্ব, এসেছে দরিদ্র আদিবাসীদের কথাও।

মৃণাল সেন পড়াশোনার জন্য কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন; কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পদার্থবিদ্যায় পড়াশোনা করেন।

ছাত্রাবস্থায় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত হলেও কখনও ওই দলের সদস্য হননি।

চল্লিশের দশকে মৃণাল সেন আইপিটিএ’র (ইন্ডিয়ান পিপ্‌লস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন) সঙ্গে যুক্ত হন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার পর তিনি সাংবাদিক, ওষুধ বিপণনকারী এবং চলচ্চিত্রে শব্দকুশলী হিসাবে কাজ করেন।

১৯৫৫ সালে মৃণাল সেন পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘রাতভোর’ মুক্তি পায়। তার আগে ১৯৫০ সালে ‘দুধারা’ নামে একটি সিনেমা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যদিও সিনেমাটির পরিচালক হিসেবে নাম রয়েছে ‘অনামী’।

এই ছবিটির কাহিনি মৃণাল সেনের। বিশিষ্ট সিনেমাটোগ্রাফার বিদ্যাপতি ঘোষ এই সিনেমার ক্যামেরাম্যান ছিলেন। চলচ্চিত্রের অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন গীতা সোম, পরবর্তীতে মৃণাল সেন গীতাকে বিয়ে করেন।

দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘নীল আকাশের নীচে’ মৃণাল সেনকে আপামর দর্শকের সঙ্গে সুপরিচিত করে তোলে। তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘বাইশে শ্রাবণ’ তাঁকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়।

১৯৬৯ সালে তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ভুবন সোম’ মুক্তি পায়।

‘ইন্টারভিউ’ (১৯৭১), ‘কলকাতা ‘৭১’ (১৯৭২) এবং ‘পদাতিক’ (১৯৭৩) চলচ্চিত্র তিনটির মাধ্যমে মৃণাল সেন তৎকালীন কলকাতার অস্থির সময়কে তুলে ধরেছিলেন।

মধ্যবিত্ত সমাজের নীতিবোধকে মৃণাল সেন তুলে ধরেন তার চলচ্চিত্র ‘একদিন প্রতিদিন’ (১৯৭৯) এবং ‘খারিজ’ (১৯৮২) এর মাধ্যমে। ‘খারিজ’ ১৯৮৩ সালের কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার পায়।

১৯৮০ সালে মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র ‘আকালের সন্ধানে’ মুক্তি পায়। ‘আকালের সন্ধানে’ ১৯৮১ সালের বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার জয় করে।

মৃণাল সেনের পরবর্তীকালের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৯২) এবং ‘অন্তরীণ’ (১৯৯৪)।

তাঁর শেষ চলচ্চিত্র ‘আমার ভুবন’ মুক্তি পায় ২০০২ সালে।

মৃণাল সেন বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।

১৯৬৬ সালে ওড়িয়া ভাষায় নির্মাণ করেন ‘মাটির মনীষ’, যা কালীন্দিচরণ পাণিগ্রাহীর গল্প অবলম্বনে নির্মিত।

১৯৬৯ এ বনফুলের কাহিনি অবলম্বনে হিন্দি ভাষায় নির্মাণ করেন ‘ভুবন সোম’। ১৯৭৭ সালে প্রেমচন্দের গল্প অবলম্বনে তেলেগু ভাষায় নির্মাণ করেন ‘ওকা উরি কথা’।

এই মহান চলচ্চিত্র নির্মাতা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের আজকের দিনে (১৪ মে) বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *