Press "Enter" to skip to content

‘কাশ্মীর ফাইলস’ পার্ট অব দ্য গেম। দেখুন, সমালোচনা করুন, বিরোধিতা করুন। কিন্তু ব্যান করার দাবি তুলবেন না……।

Spread the love

মধুমিতা শাস্ত্রী : কলকাতা, ২০ মার্চ ২০২২। কাশ্মীর ফাইলস ছবিটি নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক হচ্ছে। অনেকেই বলছেন ছবিটি বিজেপির প্রোপাগান্ডামূলক। এই প্রসঙ্গে বলার কথা এটাই যে, এই ঘটনা নতুন নয়। সিনেমা অত্যন্ত শক্তিশালী একটি মাধ্যম এবং যুগে যুগে দেশে দেশে শাসকশ্রেণি একে নিজেদের প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমাদের দেশের কথাই আগে বলি। ১৯৬৫ সালে বলিউডের হিরো মনোজকুমার ওরফে ভরতকুমার ওরফে হরিকৃষেন গিরি গোস্বামী ‘শহিদ’ নামে ভগৎ সিংয়ের জীবনী অবলম্বনে একটি ছবি বানিয়েছিলেন। তখন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী জয় জওয়ান জয় কিষান স্লোগান দিয়েছেন। শহিদ সিনেমার সাফল্য দেখে তিনি ধরলেন গিয়ে মনোজকুমারকে। অনুরোধ, তাঁর জয় জওয়ান জয় কিষান স্লোগান নিয়ে একটা সিনেমা বানাতে হবে। মনোজকুমার বানালেন ‘উপকার’। মুক্তি পেল ১৯৬৭ সালে। ছবি সুপারহিট। এরপর মনোজকুমার ‘পূরব আউর পশ্চিম’, ‘রোটি কাপড়া আউর মকান’ প্রভৃতি দেশভক্তিমূলক ছবি বানিয়েছিলেন।
প্রোপাগান্ডা মূলক ছবি বানানোর কাজটা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে শুরু হয়েছিল নাজি জমানায়, জার্মানিতে। গোয়েবলসের অধীনে ‘রাইখস চেম্বার অব সিনেমা’ নামে একটি দপ্তর ছিল। সেখানে জার্মানির প্রথিতযশা পরিচালকরা হিটলারের গুণকির্তন করে ছবি বানাতেন। জার্মানির পরিচালক ও টেকনিশিয়ানরা ছিলেন খুব উচ্চমানের। ফলো ছবিগুলিও হতো উন্নতমানের। একজন পরিচালকের কথা বলাই যায়। তিনি লেনি রুফানস্টল নামে এক মহিলা। ছিলেন অভিনেত্রী। পরিচালক হয়ে ‘ট্রায়াম্ফ অব উইলি’ নামে নাজি প্রচারমূলক একটি ছবি বানিয়েছিলেন। ছবিটি এতই ভালো হয়েছিল যে, আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুরস্কৃত হয়েছিল। হিটলারের কথা বাদ দিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসকরা ভিয়েতনামে নিজেদের লজ্জাস্কর হার ঢাকতে হলিউডের হিরোদের দিয়ে মার্কিন সেনার প্রশস্তিমূলক একের পর এক ছবি বানাতে শুরু করল। সিলভস্টার স্টালোনের ফার্স্ট ব্লাড, গুডমর্নিং ভিয়েতনাম প্রভৃতি ছবির নাম করাই যায়। এইসব ছবিতে মার্কিন সেনাদের মহৎ এবং ভিয়েতকংদের বর্বর নৃশংস হিসেবে দেখানো হতো।
জেমস বন্ডের একাধিক ছবিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও কম্যুনিস্ট ব্লকের দেশগুলিকে মানবতার শত্রু আর ব্রিটেন ও আমেরিকাকে বিশ্বের রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখানোই ছিল রেওয়াজ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও কমুনিস্ট দেশগুলির পতনের পর স্বভাবতই হলিউডের ছবির ভিলেনও পাল্টে গিয়েছে। হয় তারা উত্তর কোরিয়া, চীনের লোক। না হলে আফগানিস্তান কিংবা ইরান অথবা পশ্চিম এশিয়ার কোনও শত্রু দেশের।
আমাদের দেশে মনে করুন জে পি দত্তার বর্ডার, অক্ষয়কুমারের মিশন মঙ্গল, কেশরী কিংবা ভিকি কৌশল অভিনীত উরি প্রভৃতি ছবির কথা। সেগুলিও এই গোত্রেরই।
সব শেষে আমার প্রিয় পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের কথা বলি। তিনি কিন্তু নিজেকে খোলাখুলি প্রোপাগান্ডিস্ট বলতে দ্বিধা করতেন না। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘সিনেমার প্রেমে আমি পড়িনি মশাই। যেদিন এর থেকে বেটার মিডিয়াম আসবে, সেদিন সিনেমার মুখে লাথি মেরে চলে যাব। তিনি মনে করতেন, সিনেমার দ্বারা একসঙ্গে অনেক মানুষের কাছে নিজের বক্তব্য পৌঁছে দেওয়া যায়। তবে বাকিদের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য হল, তাঁকে কোনও দেশের শাসক শ্রেণি খাতায়কলমে বা বকলমে দায়িত্ব দেয়নি। তিনি নিজের তাগিদে শাসকের বিরুদ্ধে সিনেমাকে হাতিয়ার করেছিলেন।
অতএব ‘কাশ্মীর ফাইলস’ পার্ট অব দ্য গেম। দেখুন, সমালোচনা করুন, বিরোধিতা করুন। কিন্তু ব্যান করার দাবি তুলবেন না। না হলে গণতান্ত্রিক পরিসর এখনও যেটুকু আছে সেটা নষ্ট হবে।

More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *