Press "Enter" to skip to content

কাইয়ুম চৌধুরী– যাকে শিল্প-সমালোচকরা অভিহিত করেন ‘রঙের রাজা’ হিসেবে…..।

Spread the love

স্মরণ : কা ই য়ু ম চৌ ধু রী

বাবলু ভট্টাচার্য : কাইয়ুম চৌধুরী– যাকে শিল্প-সমালোচকরা অভিহিত করেন ‘রঙের রাজা’ হিসেবে। রং নিয়ে তিনি দীর্ঘকাল তাঁর স্বপ্নকে রাঙিয়েছেন। আমাদের প্রকাশনা শিল্পকেও তিনি সমানভাবে সমৃদ্ধ করেছেন।

১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনীতে কাইয়ুম চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে অর্থের জৌলুস না থাকলেও শিক্ষা ও উদার মানসের জোরদার অবস্থান ছিল।

স্কুলজীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিল তার। তেল রং, জল রং, কালি-কলম, মোম রং, রেশম ছাপ ইত্যাদি নানা মাধ্যমে কাইয়ুম চৌধুরী কাজ করেছেন। বস্তুত তার ছবি ছিল নকশাপ্রধান। বর্ণিল পটভূমিতে মোটাদাগের নকশা তার প্রধানতম অঙ্কনশৈলী।

কাইয়ুম চৌধুরী সবুজ শ্যামল নদীমাতৃক বাংলার প্রকৃতি থেকে রঙ নিয়ে হৃদয়ের মাধুরী দিয়ে যে ছবি এঁকেছেন সে ছবি কথা বলে। রঙের ভাষা দিয়ে তিনি এ দেশের মানুষের সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, মান-অভিমান, জীবনযুদ্ধে প্রতিদিনের বেঁচে থাকার লড়াই, দেশ বিজয় ও ভালোবাসা আর প্রকৃতির বর্ণাঢ্য গদ্য-পদ্য রচনা করে গেছেন।

কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৫৪ সালে ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে ফাইন আর্টসে ডিগ্রি নেন। জহির রায়হানের ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ আঁকার মধ্য দিয়ে এই শিল্পে তার পদচারণা শুরু। কবি শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’র প্রচ্ছদশিল্পীও তিনি। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম দিককার অনেক গ্রন্থের প্রচ্ছদও আঁকেন তিনি।

কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৫৭ সালে আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৬০ সালে তিনি আর্ট কলেজ ছেড়ে যোগ দেন কামরুল হাসানের নেতৃত্বে নবগঠিত ডিজাইন সেন্টারে। এরপর ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজাভার হাউজে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে আবার আর্ট কলেজে ফিরে যান কাইয়ুম চৌধুরী।

চারুকলা ইনস্টিটিউট হওয়ার পর এর অধ্যাপক হিসেবে ১৯৯৭ সালে অবসর নেন তিনি। দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশিত হওয়ার পর এর সঙ্গে যুক্ত হন কাইয়ুম চৌধুরী। তার একটি প্রবণতা জ্যামিতিক আকৃতির অনুষঙ্গ।

ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি শিল্পচর্চায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন (১৯৬১-৬২)। স্বীকৃতি অর্জনের এই ধারায় তিনি লাভ করেন শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৭), একুশে পদক (১৯৮৬)। ২০১০ সালে সুফিয়া কামাল পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন।

সংস্কৃতির সব শাখায় ছিল তার সহজ বিচরণ। সাহিত্য, সংগীত ও চলচ্চিত্র নিয়ে তার আগ্রহের অন্ত ছিল না এবং এই সব ক্ষেত্রের শুদ্ধ ও পরিশীলিত চেতনাকে ধারণ করেই তার শিল্প-সৃজন হয়ে উঠেছিল গহন ও গভীর।

কাইয়ুম চৌধুরী কবিতা ও ছড়া লেখায় ছিলেন পরদর্শী। তার অসংখ্য কবিতা-ছড়া জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। কাইয়ুম চৌধুরী এদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয় অংশিদার।

কাইয়ুম চৌধুরী ২০১৪ সালের আজকের দিনে (৩০ নভেম্বর) ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.