স্মরণঃ অ ধ্য ক্ষ যো গে শ চ ন্দ্র ঘো ষ
বাবলু ভট্টাচার্য : মৃত্যু তাঁকে ম্লান করতে পারেনি, পারেনি অগণিত মানুষের হৃদয়পট থেকে শিক্ষাবিদ, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রবিশারদ ও সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রসায়নবিদ, শহীদ যোগেশচন্দ্র ঘোষ’কে মুছে ফেলতে।
সাধনা ঔষধালয় এবং শ্রী যোগেশচন্দ্র ঘোষ একটি ইতিহাস। তাঁর জীবনের একমাত্র সাধনা ছিল ‘সাধনা ঔষধালয়’। যে প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি দেশ ছাড়িয়েও সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।
শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষের জন্ম ১৮৮৭ সালে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার জলছত্র গ্রামে। বাবা পূর্ণচন্দ্র ঘোষ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু গ্রামের স্কুলে। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী।
১৯০৬ সালে কোচবিহার কলেজ থেকে স্নাতক, ১৯০৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর, এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড। সেখান থেকে এফসিএস। তারপর আমেরিকা থেকে এমসিএস।
দেশে ফিরে ভাগলপুর কলেজে রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯১২ সালে একই পদে চলে আসেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। এ পদে ছিলেন ৩৫ বছর। ১৯৪৭ সালে কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৯৪৮ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পড়ার সময় তিনি প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সান্নিধ্য পান। প্রফুল্লচন্দ্র রায়’ই তাঁকে দেশজ সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে উৎসাহ দেন।
প্রফুল্ল চন্দ্রের দীক্ষা ও নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে ১৯১৪ সালে, ঢাকার ৭১, দীননাথ সেন রোডে গড়ে তোলেন ‘সাধনা ঔষধালয়’। এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কাজে তাঁর নিরলস গবেষণা এ দেশে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতি ও আয়ুর্বেদ ওষুধ প্রস্তুত প্রণালিকে আধুনিক মানে উন্নীত করে।
২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা সূচিত হবার পরদিন, তাঁর পরিবারসহ অনেকে পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর এলাকা ছেড়ে গেলেও যোগেশচন্দ্র থেকে যান। কারণ, তাঁর একমাত্র সাধনাস্থল হলো সাধনা ঔষধালয়ের কারখানা।
৪ এপ্রিল ১৯৭১ সকালে, স্থানীয় পাকিস্তানের দালাল একদল পাকিস্তানী সৈন্য নিয়ে গেণ্ডারিয়ার ৭১, দীননাথ সেন রোডে সাধনা ঔষধালয়ের কারখানায় প্রবেশ করে।
মিনিট দশেকের মধ্যেই পাকিস্তানী সেনা ও স্থানীয় শান্তি কমিটির দালালের দল হত্যাকাণ্ড শেষ করে চলে যায়। পিঠের বাঁ দিকে গুলি এবং পাঁজরে বেয়োনেটের আঘাত নিয়ে অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষের নিথর দেহ উপুড় হয়ে পড়েছিল মেঝেতে।
পাকিস্তানী সৈন্যরা ও গেণ্ডারিয়া এলাকার শান্তি কমিটির সদস্যরা শুধু তাঁকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, লুটে নিয়ে গিয়েছিল যোগেশ বাবুর অর্জিত সমস্ত সম্পদ।
Be First to Comment