Press "Enter" to skip to content

কলকাতায় গ্রিক!!……

Spread the love

উজ্জ্বল ঘোষ / রামশঙ্কর ভট্টাচার্য : ৭, মে ২০২১।

Ο αγαπημένος φίλος μας του ΚΎΚΛΟΥ Dilip Chakraborty έφυγε χθες για την Κορόνα.

১৯৮৮ সাল। দমদম নাগেরবাজার অঞ্চলে তখন বহুভাষাবিদ অসিত চক্রবর্তীর (১৯৩৫–২০০৩) নেতৃত্বে একটু একটু করে ‘গ্রিক ক্লাব কিক্লস’ নামে একটি সংগঠন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। পরের বছরের শেষের দিকে এক সভায় ১৬ জন সদস্যের স্বাক্ষরে সংগঠনটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এই সময়ে দিলীপ চক্রবর্তী নামের এক যুবক যোগ দেয় কিক্লস-এ। দরিদ্র পরিবারের সন্তান। গৃহশিক্ষকতা করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু তার অধ্যাবসায় ও নিষ্ঠা ক্রমে তাকে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য করে তোলে। সে হয়ে ওঠে গুরু অসিত চক্রবর্তীর বিশেষ স্নেহভাজন। কিক্লসের সভা-সমিতিতে তারই নিতে হয় অগ্রণী ভূমিকা। এমনকি নতুন সদস্যদের গ্রিক পড়ানোর দায়িত্বও পড়ে তার ঘাড়ে। ১৯৯৭ সালে গ্রিসের বিদেশমন্ত্রকের ডাকে সে পাড়ি জমায় গ্রিসে। পড়াশোনা করে সেখানকার পাত্রাস বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফিরে এসে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে সংগঠনের কাজে। ইতিমধ্যে সে শিখে নিয়েছে ব্রাহ্মীলিপি ও মিশরীয় চিত্রলিপির পাঠোদ্ধার। কিক্লসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে পাঠ করে শোনাত নানান শিলালেখ-কাহিনী। ব্রাহ্মীলিপিতে লেখা তিন ছত্রের ‘যোগীমারা গুহালিপি’ ছিল তার বিশেষ প্রিয় একটি শিলালেখ। এটি নিয়ে ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি প্রধান ভাষায় অসংখ্য গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক প্রভৃতি লেখা হয়েছে। শিলালেখটি এরকম:

“সুতনুকা নাম দেবদাশিক্যি
তং কাময়িথ বলনশেয়ে
দেবদিনে নাম রুপদখে”

( সুতনুকা নামে এক দেবদাসী ছিল
তাকে ভালোবেসেছিল বারানসীর
দেবদিনে নামে এক শিল্পী )

কলকাতায় ‘গ্রিক ক্লাব কিক্লস’ গড়ে তোলার এক অনন্য সহযোগী রূপদক্ষ বা শিল্পী দিলীপ চক্রবর্তী গতকাল তার ৫৭তম জন্মদিনে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হারিয়ে গেল চিরতরে। রেখে গেল স্ত্রী ও দুই কন্যাকে। আমরা তার পরিবারবর্গকে সমবেদনা জানাই।

[ ছবিতে গ্রিক স্কলার মিলতিয়াদিস্ স্পিরুর (১৯৩৪–২০১৯) সঙ্গে দিলীপ চক্রবর্তীকে দেখা যাচ্ছে। ছবিটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে পার্ক স্ট্রিটের এক হোটেলে তোলা। ]


(দিলীপ চক্রবর্তী অনূদিত একটি গ্রিক ছোটগল্প এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো।)

ΔΙΗΓΗΜΑ : ΟΙ ΚΑΡΑΜΕΛΕΣ
Ζαχαρούλα Γαϊτανάκι
Bengali translator: Dilip Chakraborty

চকোলেট

জাখারুলা গাইতানাকি

( পটভূমি : গ্রিসের গ্রাম, সময় : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগ )

গ্রিসের একটি গ্রাম। আলো ঝলমল সোনালি সকাল। ট্রাক-ভর্তি জার্মান সৈন্য এসে থামল গ্রামে ঢোকার ঠিক মুখে, বড় মাঠটাতে। সৈন্যরা একে একে তড়িৎ গতিতে ট্রাক থেকে নেমে ছড়িয়ে পড়ল গ্রামের মধ্যে। তারা প্রতিটা বাড়ি থেকে নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ সকলকে টেনে বার করতে লাগল। শুধুমাত্র বাচ্চাগুলোকে তারা ছেড়ে দিল খেলার জন্য। গ্রামের রাস্তাগুলো গিজগিজ করছিল সৈন্য আর গ্রামবাসীতে।

কেউ যাতে এড়িয়ে না যায়, তাই সেনাপ্রধান স্বয়ং হাজির হলেন গ্রামে। গাড়ি থেকে তার সঙ্গে নেমে এলো কালো আর নোংরা জুতো পরা একটা লোক। মুখটাও তার কালো কাপড়ে ঢাকা। তবে দেখার জন্য দুটো ছিদ্র আছে চোখের উপরে। যেন মৃত্যুর দূত। অল্প সময়ের মধ্যে তারা গোটা গ্রামকে টেনে আনল মাঠে। একজন অফিসার এগিয়ে গিয়ে তার নীল-ধূসর চোখে সবাইকে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। কালো পোশাকের সেই লোকটা গাড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। আর নিঃশব্দে মাথা ঘোরাচ্ছিল এদিক-‌ওদিক। বাচ্চারা হঠাৎ খেলা ছেড়ে দল বেঁধে হাজির হলো মাঠে। তারা অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগল তাদের আপন জনদের। একটা বাচ্চা মেয়ে হঠাৎ তার পুরোনো পুতুলটাকে জড়িয়ে ধরে ভেউ-ভেউ করে কাঁদতে শুরু করল। তার চেয়ে একটু বড় একটা মেয়ে
চেঁচিয়ে বলল, “চুপ কর।” “আমি মায়ের কাছে যাব”, বলেই একছুটে মায়ের কোলে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাচ্চাটা। কয়েকজন সৈন্য বন্দুক উঁচিয়ে তাকে ধরার জন্য তেড়ে গেল। অফিসার ইশারায় তাদের থামতে বলল।

কালো পোশাক পরা লোকটা এবার এগিয়ে গেল গ্রামবাসীদের দিকে। প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের কোল থেকে বাচ্চা মেয়েটা অনিমেষ দেখছিল বিশ্বাসঘাতকটাকে। যেন সে বুঝতে পারছে না তার চারদিকে কী হতে চলেছে। গ্রামবাসীদের মধ্যে যাদের যাদের ধরতে হবে লোকটা তাদের চিনিয়ে দিচ্ছিল। সৈন্যরা এক, দুই, তিন… করে গোটা দশেক লোককে ট্রাকে তুলল। কালো পোশাকের বিশ্বাসঘাতকটা আবার প্রথম সারিতে চোখ বোলালো। মেয়েটা তখন‌ও তার দিকে‌ই তাকিয়ে ছিল। লোকটা বাচ্চাটার মায়ের দিকে এগিয়ে গেল। মা ভয়ে কেঁপে উঠল। সে ভাবল, তার বাচ্চাকে বুঝি কেড়ে নেবে। সে শক্ত করে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরল।

মেয়েটা একদৃষ্টে লোকটার কালো মুখোশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ হেসে ফেলল। “আমাকে চগলেদ দাও” বলে সে নেমে পড়ল মায়ের কোল থেকে। লোকটা মেয়েটাকে দেখছিল, আর গ্রামবাসীরা দেখছিল লোকটাকে। লোকটা তার জ্যাকেটের ডান পকেটে হাত ঢোকাল। আকস্মিক সম্ভাবনায় ভীত সকলেই। কিন্তু লোকটা দু’ তিনটে চকোলেট বের করে মেয়েটার হাতে দিল। খানিক পরে বন্দিদের নিয়ে ট্রাকটা চলে গেলে গ্রামবাসীরা মাঠ ছেড়ে পালাল। অফিসারের গাড়িতে বসে লোকটা মুখোশ আর জ্যাকেট খুলে নিজের পাশে রাখল। আর ঠিক তখনই জ্যাকেটের ডান পকেট থেকে গাড়ির মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল একটা চকোলেট।


( The story was published first in the monthly periodical PURNIMA SAMMELAN, November 1994 and republished in the digital periodical NEERBASONA, December 2018.)

[ লেখক পরিচিতি: কবি গল্পকার জ়াখারুলা গাইতানাকি (Ζαχαρούλα Γαϊτανάκι) জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৬ সালে, গ্রিসের রাজধানী আথেন্স নগরীতে। সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়েই তাঁর জীবনচর্যা। তিনি আমাদের তিন দশকের বন্ধু। ২০০১ সালে গ্রিস ইউরো জোনে প্রবেশ করার পর থেকেই ধীরে ধীরে গ্রিসের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে শুরু করে। এই সংকট চরমে পৌঁছায় ২০১০-এ। চাকরি হারান বহু মানুষ। যাঁরা রইলেন তাঁদেরও বেতন যায় কমে। পেনশন প্রাপকদের সন্তুষ্ট হতে হয় অর্ধ-পেনশন পেয়েই। এই পরিস্থিতিতে জ়াখারুলা ফিরে গেলেন দেশের বাড়ি, দক্ষিণ গ্রিসের আর্কাদিয়াতে। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে তিনিও হাত মেলালেন কৃষিকাজে। মাঝে মাঝেই তাঁর কৃষক-জীবনের নানা ছবি আমরা দেখতে পাই তাঁর ফেসবুক পোস্টে।
কবিতার পাশাপাশি ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদিতেও তাঁর অনায়াস বিচরণ। অনুবাদক হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। পেয়েছেন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বহু সম্মান। World Congress of Poets সংস্থা তাঁকে দিয়েছে সাম্মানিক D.Lit উপাধি। তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, আলবানিয়ান, রাশিয়ান, পর্তুগিজ, জাপানিজ, চাইনিজ, স্প্যানিশ, কোরিয়ান, বাংলা প্রভৃতি ভাষায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ “Dissimilar Landscapes” গ্রিসের সারস্বত সমাজে যথেষ্ট সমাদর পায়। গ্রিক ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত তাঁর ওয়েবসাইট হলো: zaharoulagaitanaki.wordpress.com ]

সহায়তা — প্রবীণ কথা।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *