স্মরণঃ বু দ্ধ দে ব দা শ গু প্ত
“আসলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই একটা জার্নি। সেটা কেউ বোঝে, কেউ বোঝে না। একজন সৃষ্টিশীল মানুষের বিশেষত্ব হলো- এই জার্নিটা তুলে ধরা।”
[ বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ]
বাবলু ভট্টাচার্য : সিনেমা থেকে কবিতা, নাকি কবিতার মধ্যেই সিনেমা? কিছু ক্ষেত্রে দুই, বা তিন বহু শিল্পের সংমিশ্রণে ঘনীভূত হয়ে ওঠে নতুন এক শিল্প। তাকে কি কবিতা বলা যায়? নাকি সিনেমা? নাকি দু’টোই বা কোনওটাই নয়! এমনই নতুন এক মাধ্যমের সঙ্গে যিনি আমাদের পরিচয় করিয়েছিলেন তিনি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।
১৯৪৪ সালের ১১ফেব্রুয়ারি বুদ্ধদেব জন্মেছিলেন পুরুলিয়ার নিকটবর্তী আনারা গ্রামে।
কবি না চলচ্চিত্র নির্মাতা? নাকি দুই সত্ত্বাই একই মানুষের? নিজে অবশ্য মনে করেন তাঁর কাছে এই দুই শিল্পই বড় আপন, চলচ্চিত্র বা কবিতা তাঁর কাছে আলাদা কিছু না।
তবু যদি ভাবতেই হয়, ‘লাল দরজা’, ‘উত্তরা’, ‘চরাচর’, ‘তাহাদের কথা’ থেকে শুরু করে ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘আনোয়ার কা আজব কিসসা’র যে পথ তৈরি করেছেন যে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, তার অগ্রভাগে বসে রয়েছে তাঁর কবি সত্ত্বা।
সিনেমার ঠিক সমান্তরালে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘রোবটের গান’, ‘গভীর আড়ালে’, ‘ছাতা কাহিনী’ বা ‘কফিন কিম্বা স্যুটকেস’-এর মতো একের পর এক কবিতার বই। আসলে একই জীবনে সমান্তরালে চলা দুই যাপন যেন।
হয়তো কবি আর চলচ্চিত্রের দ্বৈত সত্ত্বাতেই মানুষের বেঁচে থাকাগুলো প্রকট হয়ে উঠেছে তাঁর সিনেমায়। যদিও কবি বুদ্ধদেব মনে করেন, কবি হলেও, শিক্ষক হলেও, সুর বুঝলেও তেমন কোনও লাভ হয় না। সুবিধা হয় তবেই যদি অন্য কোনও মানুষের বেঁচে থাকাও আমাদের জীবনকে স্পর্শ করে।
যতদিন মানুষের বেঁচে থাকা স্পর্শ করবে শিল্পী বুদ্ধদেবকে, শহর ও মানুষের যাপনের ঘাত-প্রতিঘাত অথবা নতুন কোনও খাতের সন্ধানে অপেক্ষা করে থাকবেন বাঙলার সিনেমাপ্রেমী মানুষ, কবিতাপ্রেমী নাগরিক অথবা জীবনপ্রেমী যাপন।
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত নির্মিত উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্রঃ ‘সময়ের কাছে’, ‘দূরত্ব’, ‘নিম অন্নপূর্ণ’, ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘আন্ধি গলি’, ‘ফেরা’ ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘তাহাদের কথা’, ‘চরাচর’ ‘লাল দরজা’, ‘উত্তরা’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘স্বপ্নের দিন’, ‘আমি, ইয়াসমিন আর আমার মধুবালা’, ‘কালপুরুষ’, ‘জানালা’।
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ২০২১ সালের আজকের দিনে (১০ জুন) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment