শতরূপা সান্যাল : বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক।
আশ্চর্য কন্ঠ ছিল তাঁর
যখন যেখানে শুনতাম, মন্ত্রমুগ্ধের মত দাঁড়িয়ে যেতাম
মনে হত, স্বর্গ থেকে নেমে আসছে পুষ্পবৃষ্টি
জুড়িয়ে দিচ্ছে আমার শ্রবণ
আমার জীবন মরণ।
তাঁকেই মনে হত ঈশ্বর।
আমি তাঁকে দেখিনি তখনও
এমন কি ছবিও নয়।
বয়স তখন কম ছিল
সেই সময়ে পথ ভোলা পথিকেরা আসত
ঘর ছাড়া পাগলরা ডাক দিয়ে যেত
দিনের শেষের ঘোমটা পরা ঘুমের দেশের ছায়ারা মন ভোলাতো
সে সব দিনই ছিল অন্যরকম।
একদিন আমার জীবন জুড়ে তুমি এলে
যে দিকে তাকাই শুধু তুমি
মনে ভাবলাম, এই তো তোমার প্রেম, ওগো হৃদয়হরণ!
তোমায় মুগ্ধ করার জন্যই আমার দেবতাকে
টেনে আনলাম ঘরে।
সে ছিল ক্যাসেটের যুগ!
আমি হাজার বার শোনা প্রিয় গানগুলি
ততোধিক প্রিয় কন্ঠের অনুরণনে নামিয়ে আনলাম।
তুমি ক্যাসেট প্লেয়ার বন্ধ করে বললে,
এ লোকটার বিষয়ে কতটা জানো?
জানতামনা কিছুই, ঐ কন্ঠখানি ছাড়া।
যেমন, কোনো নিবেদিত ভক্ত জানেনা,
তাঁর আরাধ্য দেবতা তাঁর পত্নীকে কটুকথা বলেন কিনা
ক্রুদ্ধ হলে তাঁর মুখশ্রী কি একই রকম প্রশান্ত থাকে?
তুমি আমার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করলে,
সেই কন্ঠের অধিকারী দেবতার অজানা কালো দিক দেখালে
আমার মনের ভিতর অসাধারণ এক কষ্টের জন্ম হলো।
তোমাকে খুশি করতে আমি প্রিয় গানগুলি কে নির্বাসন দিলাম।
আমি নিজে অখুশি রইলাম বছরের পর বছর।
একসময় মনে হল,
আমি শুধু তোমাকেই খুশি করতে চেয়ে
কোনোদিন যাচাই তো করিনি সে সব কথা।
ভালোবেসেছি বলেই সবটা বিশ্বাস করেছি।
এখন বিশ্বাস করছিনা, সে কি ভালোবাসা ফুরিয়েছে বলে?
আমি আবার খুঁজে বের করলাম
আমার সব পুরোনো আকবরী মোহর।
আজ দেখছি, সব খসে গেছে
তুমি, তোমার দাপট,
প্রেম ,অধিকার ,কুৎসা ,খুশি করা ,সব সব..
সাথে রয়ে গেছে সেই কন্ঠ
বহু যুগের ওপার হতে বেজে ওঠে, বেজে উঠছে
আমার সারা অস্তিত্বে।
Be First to Comment