শুভ জন্মদিন কঙ্কনা সেন শর্মা
বাবলু ভট্টাচার্য : কৃষ্ণকলি বোধহয় এঁকেই বলেছিলেন কবি। কিংবা কৃষ্ণাসুন্দরী! যেমন ছিলেন দ্রূপদ রাজকন্যে-দ্রৌপদী। কিন্তু রূপ বা গুণে খামতি ছিল কি তাতে? একেবারেই না। কৃষ্ণার তেজ, দাপট, বুদ্ধিমত্তা মহাভারত পড়লেই জানা যায়। তেমনই বঙ্গকন্যে কঙ্কনা সেনশর্মা। অনেকেই তাকে বলতে পছন্দ করেন A dusky beauty with immense talent. কঙ্কনার তাতে লাগে না মনে! তিনি জানেন, তিনি কী। তাই হাঁস যেমন ডানা ঝাপটে ঝেড়ে ফেলে বাড়তি জল, দুধ-জলের মিশেল থেকে বেছে নেয় খাঁটি দুধ– কঙ্কনাও নিজের মতো করেই বাঁচেন।

অভিনেতা-পরিচালক অপর্ণা সেনের দুই মেয়ে কমলিনী আর কঙ্কনা। ছোট মেয়ে কঙ্কনা মায়ের ছায়া। মায়ের মতোই ক্যামেরা সাবলীল। আলাদা করে অভিনয় করতে হয় না তাকে। আসলে রক্তে নিয়ে জন্মেছেন যে! কিন্তু কোনোদিন তিনি মায়ের নাম নিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেননি। একের পর এক ছবি তার মুঠোবন্দি হয়েছে তার কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর অভিনয় প্রতিভার জোরে।

‘ইন্দিরা’ (১৯৮৩) সিনেমায় শিশু শিল্পী হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ। প্রাপ্ত বয়স্ক অভিনেত্রী হিসেবে তার অভিষেক ঘটে বাংলা রোমাঞ্চকর সিনেমা ‘এক যে আছে কন্যা’ (২০০০) সিনেমার মাধ্যমে।
তিনি সকলের নজরে আসেন ইংরেজী-ভাষার সিনেমা ‘মিঃ এন্ড মিসেস আইয়ার’ (২০০২) মাধ্যমে, যার পরিচালক ছিলেন তার মা। এই ছবির জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন।
নাটকীয় চলচ্চিত্র ‘পেইজ ৩’ (২০০৫) এর মাধ্যমে তার দর্শক কর্তৃক স্বীকৃত আরো বৃদ্ধি পায়, এবং তারপর থেকে তিনি অনেক সিনেমায় অভিনয় করেন, যার বেশিরভাগ ছবিতে বাণিজ্যিকভাবে সফল না হলেও তার অভিনয় আলোচনামূলক প্রশংসা অর্জন করে।
তিনি পরপর দুইবার ‘ফিল্মফেয়ার সেরা সহ-অভিনেত্রী’ পুরস্কার অর্জন করেন, এই দুইটি সিনেমা যথাক্রমে ‘ওমকারা’ (২০০৬) এবং ‘লাইফ ইন এ… মেট্রো’ (২০০৭)। তার পূর্বের অভিনীত সিনেমার জন্য তিনি সেরা সহ-অভিনেত্রীর জন্য দ্বিতীয় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন।
কঙ্কনা সেই শিল্পীদের একজন, যিনি ছোট-বড় যেমন চরিত্রেই পান ফুটিয়ে তোলেন যত্ন নিয়ে। প্রচার নয়, নিজের অভিনয় ক্যারিশমায় দর্শকদের বসিয়ে রাখেন সিটে। দেখতে বাধ্য করেন তার কাজ। এবং কোনোদিন নিজের পারিবারিক জীবনকে পেশার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেননি। তাই তাকে নিয়ে অযথা গসিপ নেই। কথা কম কাজ বেশি-তে বিশ্বাসী কঙ্কনার ঝুলি তাই সহজেই ভরেছে ২টি জাতীয় পুরস্কার ৪টি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে।
‘ওয়েক আপ সিড’-এ রণবীর কাপুরের সঙ্গেও যেমন স্বচ্ছন্দ তেমনটাই ইমরান হাসমির সঙ্গে ‘এক থি ডাইন’-এ। সঙ্গে ছিলেন কাল্কি কোয়েলিন। আবার মায়ের ছবিতেও কঙ্কনা অনবদ্য। ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’, ‘ইতি মৃণালিনী’, ‘সারি রাত’, ‘১৫ পার্ক অ্যাভিনিউ’— তার উদাহরণ।

কোনোদিন ইঁদুর দৌড়ে নাম লেখাননি। ছবির বক্স অফিস সাফল্য নিয়েও মাথা ঘামাননি। কিন্তু চাইলে কারতেই পারতেন মুম্বই নায়িকাদের রাতের ঘুম।
২০১৬-য় মায়ের মতোই কঙ্কনা পরিচালনা করেন A Death In The Gunj. ক্যামেরার সামনে ছিলেন ওম পুরী, তনুজা, কাল্কি কোয়েচলিন, রণভীর শোরে, বিক্রান্ত মেসি প্রমুখ। চিত্রনাট্যও কঙ্কনার। ছবিটি দুটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড আর আইফা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল।
কঙ্কনা সেন শর্মা ১৯৭৯ সালের আজকের দিনে (৩ ডিসেম্বর) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

Be First to Comment