——-জন্মদিনে স্মরণঃ ওস্তাদ বিলায়েত খান——
বাবলু ভট্টাচার্য : ওস্তাদ বিলায়েত খান ছিলেন ‘ইমদাদখানী’ বা ‘এটাওয়া ঘরানা’র শিল্পী। বাবা সেতার ও সুরবাহার বাদক এনায়েত খান। মা বশিরন বেগম। ঠাকুর্দা বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ইমদাদ খান। এনায়তখানি কানাড়া, সাঁঝ সারাবলি, কলাবন্তী ও মান্দ ভৈরব রাগের উদ্ভাবক ছিলেন বিলায়েত খান। ‘আর্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে তাঁকে ‘ভারত সেতার সম্রাট’ উপাধি দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ তাঁকে ‘আফতাব-ই-সিতার’ বা ‘সান অফ দ্য সিতার’ আখ্যা দেন। বিলায়েত খান প্রথম জীবনে খুবই সৌখীন মানুষ ছিলেন। অর্থ যেমন উপার্জন করেছেন, ব্যয়ও করেছেন সেইভাবে। দামী গাড়ি, ফিটফাট বেশভুষা, দুষ্প্রাপ্য এন্টিক সংগ্রহ ইত্যাদিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন। ঘোড়ায় চড়তে ভালো বাসতেন। পুল খেলা, সাঁতার, বলরুম ডান্স— সবকিছুতেই তাঁর উৎসাহ ছিল আকাশ ছোঁয়া। শেষের জীবনে এসব জিনিসে ওঁর আগ্রহ কমতে থাকে।

বিলায়েত খানের সেতারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। সাধারণ সেতারের যা গঠন তাতে অনেকগুলি উচ্চ-স্বর পর্যন্ত মীড় দিতে গেলে তারের টানে অন্যান্য তারগুলির সুর হারানোর সম্ভাবনা থাকে, বাজনার ফাঁকেই তাদের নতুন করে বাঁধতে হয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য বিলায়েত খান বাদ্যযন্ত্র নির্মাতাদের সাহায্য নিয়ে সেতারের গঠনকে মজবুত করেন। সেতারের সাতটি প্রধান তারের বদলে তিনি ছয়তারের সেতার চালু করেন। অন্যান্য কিছু তারকে এমন ভাবে বাঁধেন, যাতে রাগের ফাঁকে ফাঁকে সেগুলো বাজিয়ে ভরাট করা যায়— তানপুরার সহযোগিতা ছাড়াই বাজানো যায়। বিলায়েত খানকে অনেক পুরস্কার বা সম্মান দেবার চেষ্টা করা হয়েছে, যার বেশির ভাগই তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভারত সরকারের দেওয়া পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্ম-বিভূষণ— সবকিছুই তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। অনেকের ধারণা এটা অহঙ্কারের জন্য। তিনি মনে করতেন, সেতারের সংক্রান্ত যে কোনও সম্মান তাঁরই প্রথম পাওয়া উচিত। সঙ্গীত শিক্ষা দেবার ব্যাপারে বিলায়েত খানকে তেমন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় নি। তাঁর শিষ্যের সংখ্যা বেশি নয়। অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে কোনও বড় ওস্তাদের স্নেহচ্ছায়ায় না থেকে নিজের অক্লান্ত চেষ্টাতেই তিনি বড় হয়েছিলেন। তাই হয়তো শিষ্য গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি তাগিদ অনুভব করেন নি।

উস্তাদ বিলায়েত খাঁ ১৯২৮ সালের আজকের দিনে (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment