জন্মদিনে স্মরণঃ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ
বাবলু ভট্টাচার্য : বাঙালির গৌরবের দীপ্তিময় এক নক্ষত্রের নাম ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। এই উপমহাদেশের ধ্রুপদী সঙ্গীত জগতের অমর শিল্পী তিনি। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ বাঙালির এমন এক সুরসাধক যিনি সর্বপ্রথম পাশ্চাত্যে এই উপমহাদেশের রাগসঙ্গীতকে পরিচিত ও প্রচার ও সমাদৃত করেন।
বেশ কিছু রাগ-রাগিনীর সৃষ্টি করে তিনি সংগীত জগতে এক নতুন ঘরানা উপহার দেন যা ‘মাইহার ঘরানা’ নামে পরিচিত।
সংগীতে হাতেখড়ি বড় ভাই ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর কাছে। পাঠশালার গতানুগতিক পাঠ তাঁকে একটুও আকর্ষণ করেনি। বরং ব্যাকুল হতেন গাঁয়ের যাত্রাপালার গান শোনার জন্য। সংগীতের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসায় এক সময় স্কুল, বাড়ি— সব ছেড়ে পালিয়ে যোগ দিলেন যাত্রা দলে, ঘুরতে লাগলেন গ্রাম থেকে গ্রামে।
পরবর্তীকালে কলকাতায় প্রখ্যাত সংগীত সাধক গোপালকৃষ্ণের শিষ্যত্ব লাভের সুযোগ হয়। এই সংগীত গুরুর কাছে আলাউদ্দিন খাঁ সাত বছর সরগম সাধনা করেন। এরপর আকৃষ্ট হন যন্ত্র সংগীতে। এ সময় তাঁর দীক্ষাগুরু ছিলেন অমৃতলাল দত্ত।
দীর্ঘ ও একাগ্র সাধনার ফলে ধীরে ধীরে তিনি সব ধরনের যন্ত্র সংগীতেই দক্ষ হয়ে ওঠেন। তার পরেও থেমে থাকে না তাঁর পথচলা। দীর্ঘ ত্রিশ বছর তালিম নেন ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর কাছে।
সুদীর্ঘ সাধনা ও শ্রমলব্ধ জ্ঞান অন্বেষণের পরই তিনি সেসবের কিছু কিছু প্রয়োগ ঘটান রাগ-সংগীতের নানা ক্ষেত্রে। এ উপমহাদেশের রাগ সংগীতকে তিনিই প্রথম পাশ্চাত্যে পরিচিত করান। মেঘ-বাহার, আরাধনা, হেমন্ত, দুর্গেশ্বরী, প্রভাতকেলী, বেহাগ প্রভৃতি রাগ-রাগিনীর স্রষ্টা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ বেশ কিছু বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবনেও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন।
মূলত সরোদ বাদক হলেও ধ্রুপদী সংগীতের নানা ক্ষেত্রে তিনি এক অনুসরণীয় গুরু।
অসাধারণ বিনয়ী এই শিল্পীর শিষ্যদের মধ্যে রয়েছেন ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, অন্নপূর্ণা দেবী প্রমুখ।
১৯৩৫ সালে তিনি নৃত্যশিল্পী উদয়শংকরের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। তিনিই ভারতীয় উপমহাদেশের রাগসঙ্গীতকে সর্বপ্রথম পাশ্চাত্যেও শ্রোতাদের নিকট পরিচিত করান।
তিনি উদয়শঙ্কর পরিচালিত নৃত্যভিত্তিক ‘কল্পনা’ শীর্ষক একটি ক্ল্যাসিকধর্মী ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
দিল্লি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব ল’ উপাধিতে সম্মানিত করে। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ১৯৫২ সালে সঙ্গীত একাডেমী পুরস্কার, ১৯৫৮ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার, ১৯৭১ সালে পদ্ম-বিভূষণ, ১৯৬১ সালে বিশ্ব ভারতী প্রবর্তিত দেশিকোত্তম খেতাব প্রাপ্ত হন।
এছাড়াও তিনি শান্তিনিকেতনে আমন্ত্রিত অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন কিছুকাল।
১৯৭২ সালের ৬ নভেম্বর এই সঙ্গীত সাধক পরলোক গমন করেন।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ১৮৬২ সালের আজকের দিনে (৮ অক্টোবর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment