Press "Enter" to skip to content

এখন ইন্ডাস্ট্রি আর রাজনীতির লোকজন ছদ্ম দরদ দেখায়…।

Spread the love

প্রবীর রায় : অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক। কলকাতা, ৫ নভেম্বর, ২০২২। এখন ইন্ডাস্ট্রি আর রাজনীতির লোকজন ছদ্ম দরদ দেখায়…। নিজের স্বার্থ দেখে। সে সময় সবাই কতো আন্তরিক ছিলেন। সব থেকে অবাক লেগেছে LIC এবং Reserve Bank এই রাজ্যে অনেকগুলো নতুন প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করে দিতে রাজি হয়েছিল… সরকারি সংস্থা গুলোর কতোখানি দায়বদ্ধতা ছিল। আর এখনকার মানুষ তো CPM, TMC, BJP-র হয়ে চিৎকার করেই গলা ফাটিয়ে ফেলে……
================================
#মুখ্যমন্ত্রী সমীপে উত্তমকুমার#

বহুদিন আগে দক্ষিণ কলকাতার কোনো এক বিবাহ বাসরে নিমন্ত্রণ রক্ষা করত্বে গিয়েছিলেন উত্তমকুমার। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায় ও নিমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন। ওখানে এক সময় পরষ্পর মুখোমুখি হলেন। সৌজন্যমূলক বার্তা বিনিময় হবার পর মুখ্যমন্ত্রী সহাস্যে উত্তমকুমারকে বললেন, “এসো একদিন, কথা আছে।“

“কথা” কিন্তু সেই বাংলা চলচ্চিত্রের উদ্ভূত সমস্যাকে কেন্দ্র করেই। এখন যেটা সবাই বেশ গুরুত্ব দিয়ে বিচার বিবেচনা করে দেখছেন।

উত্তমকুমারও ভাবছেন। আজকাল উনি প্রায়শ চলচ্চিত্রের সমস্যা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে থাকেন। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি উঠে গেলে বিপদ কারো একার হবে না, বিপদ সকলেরই, সুতরাং এ ব্যাপারে ওঁর ধারণাটা স্বচ্ছ। যে শিল্প তাঁকে এই প্রতিষ্ঠা এনে দিয়েছে, সেই শিল্পের দূর্দিনে তিনি নিজেকে পৃথক করে যে রাখতে চান না, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি তা প্রমাণ করেছেন।

তাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সেদিন কথা হবার কয়েক দিন পর উত্তমকুমার ফোন করে বললেন, “ শুধু আমি একা নই, আপনার যদি আপত্তি না থাকে তো আমি আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই। এঁরা প্রত্যেকেই চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতিষ্ঠিত মানুষ এবং সমস্যা সম্পর্কে রীতিমতো ওয়াকিবহাল। মুখ্যমন্ত্রী জবাবে বললেন, “না না, কোনো আপত্তি নেই। ওঁদেরও সঙ্গে নিয়ে এসো। সবাই মিলে বসে খোলাখুলি আলোচনা করা যাবে।“

সেই বছরের ২২শে জুন সন্ধ্যায় উত্তমকুমার তাই গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সমীপে। সঙ্গে গিয়েছিলেন অসিত চৌধুরী, সুবোধ মিত্র ও পারিজাত বসু। রাইটার্সে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে আলাপ আলোচনা হলো। মুখ্যমন্ত্রী প্রসঙ্গতঃ উত্তমকুমারকে জানালেন, “ আমাদের সরকারি সিদ্ধান্ত হচ্ছে গ্র্যান্ট বাবদ বছরে ২৫ লাখ টাকা বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে দেওয়া হবে। আর অবিলম্বে Film Development Board গঠন করা হবে। গ্র্যান্টের টাকাটা ইন্ডাস্ট্রিতে কিভাবে খরচ হবে, বোর্ডই তা স্থির করে দেবে।

বলা বাহুল্য, বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের সমস্যা এখন চরমে। রোগটা গ্র্যান্ট দিলেই যে নিরাময় হবে, তেমন আশা বৃথা। উত্তমকুমার বললেন, “গ্র্যান্ট দিচ্ছেন, খুব ভাল কথা। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান যদি করতে চান তাহলে নিয়মিত সেস দেবার ব্যবস্থা করুন। তাতে ফল অনেক ভাল এবং সুদুরপ্রসারী হবে। ইন্ডাস্ট্রি বেঁচে যাবে”।

মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “ এ ছাড়া রাজ্যে যত সিনেমা হল আছে, তাতে বছরে অন্ততঃ এক সপ্তাহ যাতে বাধ্যতামূলক বাংলা ছবি প্রদর্শিত হয়, সরকার তারও চেষ্টা করছেন……”
উত্তমকুমারের ধারণা তাতে কিছু লাভ হবে না। রাষ্ট্রপতির শাসনের আমলে রাজ্যপাল ধর্মবীর একবার এই রকম একটা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সে চেষ্টা কার্যতঃ ব্যর্থ হয়েছিল। হিন্দিভাষী অধ্যুষিত এলাকায় যে সব প্রেক্ষাগৃহ, যেখানে সারা বছরই হিন্দি ছবি দেখানো হয়, সেখানে বাংলা ছবি চলবে কেন? তারপর আরও একটা সমস্যা। রাজ্যের ৩৪৬ টি প্রেক্ষাগৃহের মাত্র যে ১৪ বা ১৬ টিতে সারা বছর বাংলা ছবি দেখানো হয়, তারা যদি এই অজুহাতে একবার হিন্দি ছবি দেখাতে শুরু করে, তাহলে কেলেঙ্কারি। এটা তো ঠিক, হিন্দি ছবি চালিয়ে প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা বেশী মুনাফা অর্জনের সুযোগ পেয়ে থাকেন।

সেক্ষেত্রে, উত্তমকুমার বললেন, “সমস্যা অন্যত্র। আপনি সবার আগে বাংলা ছবির কিছু রিলিজ চেন বাড়িয়ে দিন। দেখবেন সমস্যা তাতেই অনেকটা কমে গেছে।“
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন- “কেমন?”

ওঁরা সবিস্তারে জানালেন ব্যাপারটা। প্রধানতঃ ছবি রিলিজের অসুবিধের জন্যই শিল্পের আজ এই দুর্গতি। ইন্ডাস্ট্রিতে বেশি টাকা লগ্নি হচ্ছে না এই একই কারণে। একটা ৩/৪ লাখ টাকার ছবি করে যদি রিলিজের জন্য অনিশ্চিতকাল লগ্নিকারককে বসে থাকতে হয়, তাহলে সে আর দ্বিতীয় ছবি করবে কেন? কি লাভ তার অনর্থক একরাশ টাকা ব্লক করে? কোনো ব্যবসাদারই তা চান না। একমাত্র সরকারই এই সমস্যার সনাধান করতে পারেন। সরকার যদি নিজের উদ্যোগে এগিয়ে এসে কিছু তৈরি করে দিতে চান, তাহলেই সব না হলেও কিছু গন্ডগোল চুকে যায়। অন্ততঃ নতুন নতুন ছবি হতে পারে, লগ্নিকারকেরাও আবার উৎসাহভরে এগিয়ে আসতে পারেন।

মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “সে তো অনেক টাকার ব্যাপার।সরকারের হাতে এখন অতো টাকা নেই, ফিল্ম ছাড়া আমাদের সামনে অনেক সমস্যা আছে।“

 

ওঁরা বললেন, “ ভাল কথা। তাহলে সরকার অন্ততঃ একটা কাজ করুক। কিছুদিন আগে যখন LIC এবং Reserve Bank এই রাজ্যে অনেকগুলো নতুন প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করে দিতে রাজি হয়েছিল শুধু এই শর্তে যে ফিল্মের বাৎসরিক সেসের টাকা থেকে তাঁরা তাঁদের টাকা উঠিয়ে নেবেন- সরকার এবার মধ্যস্থ করে সেই রকম একটা ব্যবস্থা করে দিক। রিলিজ হাউস সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলে ইন্ডাস্ট্রির মঙ্গল হবার সম্ভাবনাই বেশি।

মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, “ বিভিন্ন কারণে এখন সেস করার অসুবিধে আছে। আপনারা বিকল্প প্রস্তাব দিন” – বলে তিনি উত্তমকুমারকে বললে, “ লিখিতভাবে প্রস্তাব দাও তুমি। ইতিমধ্যেই আরেকটি লিখিত প্রস্তাব এসেছে আমার কাছে। তুমিও দিলে ভাল হয়।

উত্তমকুমার বলে এসেছেন, “ আমি যত শীঘ্র পারি প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। কিছু একটা আমাদের করতেই হবে। সে Film Development Board- এর মাধ্যমেই হোক বা অন্য কোনো উপায়ে। ইন্ডাস্ট্রিকে আমরা বাঁচাবোই……।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.