Press "Enter" to skip to content

এক করোনাজয়ী’র অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা…..

Spread the love

লেখক একজন বিশিষ্ট অভিনেতা, প্রযোজক ও চলচ্চিত্র পরিচালক।

প্রবীর রায় : কলকাতা, ৭, সেপ্টেম্বর, ২০২০। COPD ও করোনা আক্রান্ত হয়ে ১২ দিন ICU, মোট ১৭দিন হসপিটালে কাটিয়ে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়ে গতকাল বাড়ি ফিরলাম ! আর আমার বাড়ির সবাই ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে এ চলে গিয়েছিলো! কলকাতার একটি নামকরা হসপিটালে ভর্তি ছিলাম ! দেখলাম সিস্টারদের কি অসাধারণ পরিশ্রম ! নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না ! যখন ICU তে ছিলাম , দেখেছি PPE পরা সিস্টার এবং অন্যান্য স্টাফ এবং ডক্টরদের ও একই পোশাক ! কিন্তু অবিশ্বাস্য লাগলো সিস্টারদের কাজ দেখে ! PPE ছাড়াও চোখ থেকে পায়ের নখ অবধি ঢাকা ! এই গরমে চোখে চশমা , মুখে মাস্ক, চুল ঢাকা নিয়ে টানা ৮ ঘন্টা ডিউটি করে যাচ্ছে ! একটা কথা মনে রাখা দরকার Covid ICU তে কিন্তু AC চালানো হয় না ! ৪/৫ টা পাখা থাকে, সেগুলো বেশির ভাগ সময়েই রুগীদের দিকেই ঘোরানো থাকে !
সবচেয়ে যেটা অবিশ্বাস্য লাগলো এই ৮ ঘন্টা ওরা জল পর্যন্ত খায়না, কারণ urinal যাওয়া সম্ভব নয় PPE পড়ে ! PPE পুরো ফেলে দিয়ে যেটা করতে হবে এবং ICU তে সম্ভব না ! তার উপর মুখে মাস্কের দরুন চোখে চশমাতে vapor হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে কিছু দেখতে মুশকিল হচ্ছে কিন্তু চশমা খুলে মুছে নেওয়ার সম্ভব না ! চোখ ব্যাথায় ফুলে যাচ্ছে, নিজের চোখে দেখা, এই ভাবে মুখে হাসি নিয়ে ৮ ঘন্টা কাজ করে যাচ্ছে !
বিশ্বজোড়া মহামারীর দাপটে মানুষের সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন যখন তছনছ , তখন কিছু মানুষ প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে নিজের জীবন উপেক্ষা করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ তো সবাই। সবারই সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার আছে। সবারই নিজের পরিবার, আত্মজনের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। বাস্তব চিত্রটা অবশ্য ততোটা উজ্জ্বল নয়। যখন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থকর্মী, পুলিশ প্রশাসন, পুরসভা, দমকল, এমনকি সাধারণ প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত মানুষ মাসের পর মাস আক্রান্ত হবার আশঙ্কা নিয়েও অমানুষিক পরিশ্রম করছেন , তখনই সমাজের এক বিরাট অংশ তাঁদের এই পরিশ্রমকে যেন “taken for granted ” ধরে নিয়েছেন। সামনের সারির এই মানুষগুলোর লড়াই আমাদের নিশ্চিন্ত নিরাপত্তা দিচ্ছে।
পরিবর্তে আমাদের ভূমিকা কি?

করোনা ওয়ার্ডে এই পোশাকেই ডাক্তারবাবু, নার্স সহ স্বাস্থ্য কর্মীদের এই পোশাকেই দেখতে পাওয়া যায়।

মহানন্দে বেপরোয়া জীবনযাপন আর অযাচিতভাবে সমাজ- সংস্কারকের ভূমিকা পালন। মজা অবশ্য মন্দ নয় !! চিকিৎসক, বিজ্ঞানীদের সব অনুরোধ, উপরোধ উপেক্ষা করে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত- যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি না মেনে বাজার করা , আড্ডা দেওয়া থেকে জয় রাইড – সব কিছুই করছি আমরা। তারপর বাড়ি ফিরে সরকারের নীতি আর যাঁরা ফ্রন্টলাইনার – তাঁদের তুলোধোনা করছি। চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত মানুষকে নিজের পাড়ায়, বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছি না। এ সবই আতঙ্কের জের। কিন্তু যাঁরা এরকম অমানবিক আচরণ করছেন, তাঁরা তো একদিনও পাড়ার বাজারে গিয়ে মাস্ক-ছাড়া ক্রেতাদের জোর করে বাড়িতে ফেরত পাঠান নি !! রাস্তায় অহেতুক আড্ডা বন্ধ করতে কোনো কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন নি !!
কেন?

আসলে আমরা হচ্ছি সুবিধেবাদীর দল। “আমি” এবং আমাকে ঘিরে থাকা অল্প কিছু লোকজন – আমার পরিবার, আমার বন্ধুবান্ধব- ভালো থাকলেই আমার কাছে পৃথিবীর সমস্যা শেষ। তাই রোজ বাজারে যাওয়া চাই, রোজ আড্ডা মারা চাই। আমি ভালো থাকলেই হলো। বাকিদের কথা ভাবার দরকার নেই। তার উপরে আছে শিক্ষার অভাব। ‘অশিক্ষা’ অনেক ভালো, সেটা বোঝা যায়। কিন্তু “অল্প শিক্ষিত” ভয়ানক। ‘করোনা বড়লোকের অসুখ, বিদেশে গেলে হয়’.. পুজোআচ্চা থেকে শুরু করে সূর্যগ্রহণ, সব কিছু দিয়েই ভাইরাস বধ করতে আমরা সচেষ্ট। শুধু বেসিক স্বাস্থবিধিটা মেনে চলতে আমাদের বড্ড অনীহা। সোস্যাল মিডিয়ায় বড়ো বড়ো কথা বলে আসল কাজটা করার কথা আর মনে থাকে না। সত্য সেলুকাস !!!!

তাই প্রতিদিন এ রাজ্যে, এ দেশে কতো ডাক্তার, নার্স, পুলিশ এবং অন্যান্য মানুষ- যাঁরা রাস্তায় নেমে একটা অসম লড়াই লড়ছেন – তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। রাজ্যে , দেশে সরকার থাকবে, রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকবে- এটা স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু যাঁরা ফ্রন্টলাইনার, যাঁরা সীমিত সামর্থ্য নিয়ে একটা দানবিক লড়াইতে সামিল হয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের, মানে সাধারণ নাগরিকেরও একটা দায়বদ্ধতা থাকা দরকার।
শুধু টাকা দিয়ে কিছু হয় না। শুধুমাত্র “সামর্থ্য” নয়, একটা সহানুভূতিশীল মন লাগে। সেই মন নিয়েই একবার ভাবি – ‘যাঁরা সময়ের দাবী মেনে মাঠে নেমে কাজ করছেন, তাঁদের স্যালুট। তাঁরাই আসল ঈশ্বর’….।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.