জন্মদিনে স্মরণঃ জন ডেনভার
বাবলু ভট্টাচার্য : ইংরেজি গান শোনেন অথচ ‘কান্ট্রি রোডস টেক মি হোম’ গানটি শোনেননি এমন শ্রোতা বোধহয় খুঁজে পাওয়া দুস্কর। সর্বাধিক জনপ্রিয় এই কান্ট্রি সংটির গায়ক জন ডেনভার।
জন ডেনভারের বাবা ছিলেন বিমান বাহিনীর পাইলট। আর মা ছিলেন একজন সাধারণ জার্মান-আইরিশ ক্যাথলিক গৃহিণী। ডেনভারের গানের জগতে আসা তার মা’র অনুপ্রেরণাতেই। বাবার সৌহার্দ্যতা তেমন একটা না পেলেও তার গাওয়া গানে মা এবং আজন্ম শৈশবের ছবিই বারবার ফুটে উঠেছে।
একজন গায়ক হিসেবে ডেনভারের দুনিয়াজোড়া খ্যাতি হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, অভিনেতা, ফটোগ্রাফার, গীতিকার এবং শখের বৈমানিক।
বাবার কাজের সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয়েছে জনকে। বাবার সেনাবাহিনীতে চাকুরির কারণে কোন জায়গাতেই খুব বেশিদিন থিতু হয়ে থাকতে পারেনি ডেনভারের পরিবার। তাই শৈশবে খুব বেশি বন্ধুও গড়ে ওঠেনি তার। এক জায়গা থেকে নতুন আরেকটি জায়গা এভাবেই ছুটে চলা ডেনভারের শৈশব।

জন ১২ বছর বয়সে গিবসন ব্র্যান্ডের একটি অ্যাকুয়েস্টিক গিটার উপহার পান দাদীর কাছ থেকে। এরপর থেকে শুধু গিটারের সঙ্গেই সখ্যতা তার। বিভিন্ন লোকাল ক্লাবে তখন থেকেই পারফর্ম শুরু করেন তিনি।
১৯৬৯ সালে ডেনভার ব্যান্ড ছেড়ে তার সলো ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হয়। এ সময় আরসিএ রেকর্ডস থেকে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘রাইমস এন্ড রিজনস’ রিলিজ করেন। এরপর জন বিভন্ন কনসার্টে তার গাওয়া গানগুলোকে নিয়ে নিজেই একটি ডেমো অ্যালবাম রেকর্ডিংয়ের কাজে হাত দেন। এই ডেমো রেকর্ডে ডেনভার “বেবি আই হেট টু গো” গানটি সংযুক্ত করেন, যা পরবর্তীতে ‘লিভিং অন অ্যা জেট প্লেন’ টাইটেলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
এরপর ডেনভারকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। মূলত ‘আরসিএ’ রেকর্ডস তার অ্যালবাম ‘রাইমস এন্ড রিজনস’-এর সঠিকভাবে প্রচারণা না চালানোর কারণে হালে পানি পায়নি অ্যালবামটি।
১৯৭০ সালে তার আরো দুটো অ্যালবাম বেরোয়। ‘টেক মি টুমোরো’ এবং ‘হুজ গার্ডেন ওয়াজ দিস?’। কিন্তু একটিও তেমন একটা সাফলতা না পেলেও সঙ্গীত বোদ্ধাদের মতে ডেনভারের সেরা কাজগুলোর মধ্যে এই দুটি অ্যালবাম উল্লেখযোগ্য। তবে পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭১ সালে তার ‘পোয়েমস, প্রেয়ার্স এন্ড প্রমিজেস’ অ্যালবামটি ব্যাপক সাড়া তোলে। বিশেষ করে ‘কান্ট্রি রোডস টেক মি হোম’ গানটি তাকে জনপ্রিয়তার চুড়ান্তে পৌঁছে দেয়। বিলবোর্ড চার্টে গানটি ২ নম্বর স্থান করে নেয়।

বলতে গেলে ভাগ্যদেবী এসময় থেকে বেশ সুপ্রসন্নই ছিলেন জনের ওপর। পরবর্তী ৪ বছর পর পর বেশ কয়েকটি এ্যালবাম হিট হয় তার। বিশেষ করে রকি মাউন্টেইন হাই, জন ডেনভারর্স গ্রেটেস্ট হিটস, ব্যাক হোম এগেইন, উইন্ডসং উল্লেখযোগ্য অ্যালবাম। এর মাঝে টপ চার্টে স্থান করে নেয় ‘সানসাইন অন মাই সোলডারস’, ‘এ্যানিস সং’, ‘থ্যাঙ্ক গড আই এম কানট্রি বয়’, ‘আই অ্যাম সরি’ গানগুলো।
জেরি উইনট্রাবের কল্যাণে এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও টিভি শো করার সুযোগ মিলে ডেনভারের। পরবর্তীতে নিজেই একটি মাসিক টিভি শো চালু করেন। জন ডেনভারের রকি মাউন্টেইন ক্রিসমাস নামের একটি অনুষ্ঠান তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এবিসি নেটওয়ার্কের সে সময়ের সর্বোচ্চ দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো অনুষ্ঠানটি।
শুধু গান নয় অভিনয়েও কম পটু ছিলেন না জন। মাপেট শো-তে তিনি অতিথি শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭৭ সালের দিকে নিজের অভিনয় প্রতিভা জাহিরের চেষ্টায় নামেন তিনি। “ওহ্ গড” সিনেমাতে তাকে দেখা যায়। উপস্থাপনাও করতেন জন। মোট ৫ বার গ্রামি অ্যাওয়ার্ডের হোস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭৫ সালে কান্ট্রি মিউজিক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ডেনভারকে ‘এন্টারটেইনার অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার দেয়া হয়।
ডেনভার ছবি আঁকতেন। এমনকি ছবি তোলাও ছিল তার শখ। ছোটবেলা থেকেই খোলা আকাশটা তার প্রিয়। সঙ্গীতের পরে প্লেনে করে ঘুরে বেড়ানোটা ছিলো তার অন্যতম শখ। দ্রুত কনসর্টে যাওয়ার জন্য একটি জেট প্লেন কিনেন ১৯৭৪ সালে।

জনের মৃত্যুটাও হয়েছিলো প্লেন উড়াতে গিয়েই। ১৯৯৭ সালের ১২ অক্টোবর জন তার সদ্য কেনা রুটান লং ইজেড প্লেনটি পরীক্ষামূলকভাবে উড়ানোর সময় ক্যালিফোনিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে মারা যান।
জন ডেনভার ১৯৪৩ সালের আজকের দিনে (৩১ ডিসেম্বর) নিউ মেক্সিকোর রোজওয়েলে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment