Press "Enter" to skip to content

ঊনিশ শতকের রাশিয়ান কথাসাহিত্যিক ইভান তুর্গেনেভের মতো জমিদারপুত্র সত্য বলার দায়ে রাষ্ট্রীয় নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি……।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ ই ভা ন তু র্গে নে ভ

বাবলু ভট্টাচার্য : ঊনিশ শতকের রাশিয়ান কথাসাহিত্যিক ইভান তুর্গেনেভের মতো জমিদারপুত্র সত্য বলার দায়ে রাষ্ট্রীয় নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ফাদার্স অ্যান্ড সন্স’ গ্রন্থখানা প্রকাশের পর শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূলে পরিণত হন এবং বাধ্য হন মাতৃভূমি ছাড়তে।

লিও টলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, পুশকিনসহ অগণন বিখ্যাতজনের সময়কার জগদ্বিখ্যাত নাট্যকার ও কথাশিল্পী ইভান তুর্গেনেভ জমিদার ঘরে জন্ম নিয়েও প্রথাবেষ্টিত নিয়মকানুন, ভূমিহীনতার শোষণ-রেওয়াজ ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর সাহিত্যে ঘুরে ফিরে এসেছে নৈরাশ্যময়তা, আত্মদ্রোহ, প্রেম-বিরহ, চূর্ণিত মুখাবয়ব, একাকিত্ব ও চতুর্মুখী ভাবনার গতি-বৃত্তান্ত।

অভিজাত বংশে জন্ম ইভানের। পঞ্চদশ শতকের তাতার মির্জা লেভ তুর্গেনের বংশের ধারা মিশেছে ইভানের পরিবারে। ইভানের মায়ের বংশও ছিল অভিজাত। ইভান, নিকোলাই এবং সেরগেইকে মা লালন-পালন করেন কড়া শাসনের মধ্যে। তাঁদের গড়ে তোলার দিকে ছিল মায়ের সতর্ক এবং সজাগ দৃষ্টি। ছেলেদের দেখাশোনার জন্য তিনি একাধিক বিদেশি পরিচারিকা নিয়োগ করেন। ফলে ছেলেবেলা থেকেই ইভান ফরাসি, জার্মান এবং ইংরেজি ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করেন।

ইভানের মানসিক বিকাশের ওপর বাবারও একটা বিশেষ প্রভাব দেখা যায়। বাবা কর্মসূত্রে অনেক সময় বাইরে কাটান। তিনি সন্তানদের প্রতি কড়া ছিলেন না। তবু তাঁর অনুপস্থিতি ইভানের মনে অভিমান তৈরি করে। আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘প্রথম প্রেম’ বড় হতে থাকা ইভানের আবেগী মানসের পরিচয় তুলে ধরে।

উচ্চশিক্ষা গ্রহণকালে রাশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেন। দর্শন এবং ইতিহাসের পাঠক হিসেবে এ দু’টি বিষয়ের প্রতি ছিল তার বিশেষ টান। দার্শনিক হেগেলের মতাদর্শ তার ওপর প্রভাব ফেলে। জার্মান সমাজের বিভিন্ন বিষয় তাকে মুগ্ধ করে। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় মনে হতে থাকে, রাশিয়ারও উচিত জার্মানির মতো সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা।

ছেলেবেলায় তুর্গেনেভ অষ্টাদশ শতকের কবি মিখাইল খেরাসকভের কবিতা পড়ে মুগ্ধ হন। অল্প বয়স থেকেই লেখালেখি এবং ছবি আঁকার দিকে ঝোঁক দেখা যায়। তাঁর প্রতিভার লক্ষণ দেখে মুগ্ধ হন তখনকার সময়ের অন্যতম প্রধান রুশ সাহিত্য সমালোচক ভাসারিওন বেলিনস্কি।

ইভান তুর্গেনেভ তাঁর নিজের নন্দনতাত্ত্বিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে মিল খুঁজে পান ফরাসি সাহিত্যিক গুস্তাভ ফ্লবেয়ারের মতাদর্শের। চরম বাম কিংবা ডানপন্থী— উভয়কেই তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেন। জীবনজগতের প্রতিও তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি কোনো কম মতামত ব্যক্ত করে না।

তুর্গেনেভের সঙ্গে দস্তয়েভস্কি এবং তলস্তয়ের সম্পর্ক খুব চমৎকার ছিল না। তাঁরা দুজনই পশ্চিম ইউরোপের প্রতি তুর্গেনেভের আপাতপক্ষপাত পছন্দ করেননি। তুর্গেনেভের প্রতি দস্তয়েভস্কি যতটা বিরক্ত ছিলেন, তার চেয়েও বেশি বিরক্ত ছিলেন তলস্তয়।

একসঙ্গে প্যারিস ভ্রমণের সময় তুর্গেনেভ সম্পর্কে তলস্তয় লেখেন, ‘তুর্গেনেভ অসহ্য।’ মনোমালিন্যের এক পর্যায়ে তাঁরা একে অন্যের সঙ্গে সতেরো বছর কথা বলেননি। তবে তাদের দু’জনের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক অটুট ছিল। অবশ্য তাদের দু’জনের সঙ্গেই তুর্গেনেভের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত বন্ধুত্বের বন্ধনে জোড়া লেগেছিল।

পুশকিনের ভাস্কর্য উদ্বোধনকালে দস্তয়েভস্কির মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনে উপস্থিত অন্য সবার মতো তুর্গেনেভের চোখ থেকেও অশ্রু গড়িয়েছিল। অন্যদিকে মৃত্যুশয্যায় শায়িত তুর্গেনেভ, তলস্তয়কে সাহিত্যে ফিরে আসার অনুরোধ করেছিলেন। তার অনুরোধ মাথায় রেখে তলস্তয় তার বিখ্যাত উপন্যাসিকা ‘ইভান ইলিচের মৃত্যু’ এবং ‘ক্রয়েটজার সোনাটা’ লিখেছিলেন।

১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দেশত্যাগ করে কিছুদিন তিনি জার্মানিতে কাটান, তারপর চলে যান লন্ডনে। সেখানেও স্থায়ীভাবে থিতু হতে পারেননি৷ জুৎসই সঙ্গী-সাথী না পেয়ে চূড়ান্তভাবে চলে যান প্যারিসে। আমৃত্যু প্রেমিকার সান্নিধ্যে সেখানেই কাটান।

১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর প্যারিসের মাটিতে মহান এই লেখক ৬৫ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন।

ইভান তুর্গেনেভ ১৮১৮ সালের আজকের দিনে (৯ নভেম্বর) রাশিয়ার ইউক্রাইন অঞ্চলের ওরিয়াল নগরে জন্মগ্রহণ করেন।

More from InternationalMore posts in International »
More from LifestyleMore posts in Lifestyle »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.