শতরূপা সান্যাল : বিশিষ্ট চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক। কলকাতা, ৭, ডিসেম্বর, ২০২০। অভিনেতা মনু মুখার্জী চলে গেলেন। অসামান্য নট ও চরিত্র অভিনেতা তিনি। তাঁর অভিনীত অসামান্য চরিত্রায়ণ ঘটেছিল ১৯৮৭ সালে, সুধার বাবার চরিত্রে, “বিকল্প” ছবিতে। কলকাতা দূরদর্শনের জন্য এই ফিল্মটি পরিচালনা করেছিলেন উৎপলেন্দু চক্রবর্তী। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের কালজয়ী গল্পের যথাযথ চিত্রায়ণ ঘটেছিল, যার অন্যতম শরিক ছিলেন মনুদা। আমি হয়েছিলাম তাঁর কন্যা সুধা। একেকটা শট দিতেন এমন মজা করে যে, সিরিয়াস শটের পরও সবাই হেসে গড়াতো।আসলে, নিজেকে নিয়ে মজা করতেন। অদ্ভুত একটা সানুনাসিক স্বরে তিনি ডিরেক্টর মশাইকেও -“এই যে ক্যাওট !” বলে সম্বোধন করতেন। শট ঠিক নেবার আগে হঠাৎ বলে উঠতেন, আচ্ছা, তুমি ঠিক কী চাইছ , বলো তো? …
ট্যাক্সিতে যাবার টাকা নিয়ে বাসে উঠে পড়তেন। সেটা নিয়ে নিজেই মজা করতেন।
ক্রমে মনুদা আমাদের নিজেদের একজন হয়ে উঠেছিলেন। কোর্টে চাকরি করতেন। তাই কোর্টকাছারি সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সুরাহা তিনিই বাতলাতেন। উৎপলেন্দু ও আমার বিয়ের অন্যতম সাক্ষী হয়েছিলেন মনুদা। সম্পর্কটা এতটাই ভরসাযোগ্য হয়ে উঠেছিল।

পরে ১৯৯৮ সালে আমি প্রথম ছবি পরিচালনা করি “অনু”। সেখানে অনুর বাবা হয়েছিলেন মনুদা। আজ কত কথা মনে পড়ছে। “বিকল্প” ছবিতে মনুদা আমার বাবা, ইন্দ্রনীল ( ইন্দ্রানী হালদারের ভাই) আমার ভাই, সুমিত্রা মুখার্জী আমার মাসি হয়েছিলেন। প্রসাদ মিত্র ছিলেন আর্ট ডিরেক্টর, বনশ্রী সেনগুপ্ত গান গেয়েছিলেন আমার লিপে,দুর্গাদাস মিত্র ছিলেন সাউন্ড রিরেকর্ডিস্ট, অনন্ত দাস মেকআপে। এঁরা কেউ আজ নেই।
আমি বহুবার দূরদর্শনের এই অসাধারণ ফিল্মটি (বিকল্প) রিটেলিকাস্ট করার জন্য একে তাকে অনুরোধ করেছি।কিচ্ছু হয়নি। এখন যদি একবার ওঁরা বিকল্প দেখাতেন, সেটাই হত মনুদার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধার্ঘ।
অ্যালবামে বিকল্প‘র কোনো ছবি পেলামনা। পারিবারিক অনুষ্ঠানে দুটি ছবিতে মনুদা পিছনে বসে আছেন , দেখা যাচ্ছে।

Be First to Comment