স্মরণঃ ও স্তা দ বা হা দু র হো সে ন খা ন
বাবলু ভট্টাচার্য : উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক উজ্জ্বল তারকার নাম ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান। একাধারে তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী, সুরকার ও সরোদ বাদক।
১৯৩১ সালের ১৯ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান সাহেব জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী আয়েত আলী খাঁ এবং মা উমর উন-নেসা।
ছয় ভাইবোনের মধ্যে বাহাদুর পঞ্চম। তার বড় তিন বোন আম্বিয়া, কোহিনূর, ও রাজিয়া এবং বড় ভাই প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আবেদ হোসেন খান ও ছোট ভাই সঙ্গীত গবেষক ও লেখক মোবারক হোসেন খান। পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী শৈশব থেকে সঙ্গীত সাধনায় মগ্ন হন।
পিতার হাতেই প্রথম বাহাদুর হোসেন খানের সরোদে হাতে খড়ি হয়। পরে সঙ্গীতে উচ্চশিক্ষার জন্য পিতা আয়েত আলী খাঁ তাঁকে মাইহারে নিয়ে যান। সেখানে তিনি তাঁর চাচা আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের কাছে দীর্ঘ ২০ বছর সরোদের তালিম গ্রহণ করেন।
১৯৪৯ সালে তিনি বাংলাদেশ বেতারের শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। সেখানে দুই বছর থাকার পর ১৯৫১ সালে বম্বে চলে যান। সেখানে তিনি নৃত্যশিল্পী শান্তি বর্মণের ‘লিটল ব্যালে ট্রুপ’-এর সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বাহাদুরের কয়েকটি লংপ্লেসহ অন্যান্য রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৬০ সালে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘মেঘে ঢাকা তারা’ চলচ্চিত্রে তিনি জ্যোতিরিন্দ্র মিত্রের সহকারী সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সুবর্ণরেখা’ দিয়ে চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করেন।
পরবর্তীতে ‘নতুন পাতা’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার জন্য তিনি বিশেষ সম্মান লাভ করেন। এছাড়া সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ হল- ‘ত্রিসন্ধ্যায়’, ‘যেখানে দাঁড়িয়ে’, ‘শ্বেত ময়ূর’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘গারম হাওয়া’, ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’, ‘অমাবস কি চান্দ’।
ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও যামিনী রায়ের ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্রের আবহ সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান কয়েক বছর কলকাতা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় আলী আকবর কলেজ অব মিউজিকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন।
ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান ১৯৮৯ সালের আজকের দিনে (৩ অক্টোবর) মাত্র ৫৮ বছর বয়সে পরলোকে গমন করেন।
Be First to Comment