Press "Enter" to skip to content

উনিশশ’ সত্তরের দশকের শেষ দিকে অনেকটা হঠাৎ করেই আবির্ভাব ঘটেছিল পাকিস্তানের কাওয়ালী গায়ক নুসরাত ফতেহ আলি খানের…….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ নুসরাত ফতেহ আলী খান

বাবলু ভট্টাচার্য : উনিশশ’ সত্তরের দশকের শেষ দিকে অনেকটা হঠাৎ করেই আবির্ভাব ঘটেছিল পাকিস্তানের কাওয়ালী গায়ক নুসরাত ফতেহ আলি খানের— যিনি পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই পরিণত হয়েছিলেন বিশ্বসঙ্গীত জগতেরই এক তারকায়। কাওয়ালীর একজন ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে নুসরাত ফতেহ আলি খানের সম্ভাবনা প্রথম অনুভব করেছিলেন ইংল্যান্ডের বার্মিহাম শহরের এক রেকর্ড ব্যবসায়ী। তার নাম মোহাম্মদ আইউব। বামিংহাম শহরে তার একটি দোকান ছিল— যেখান থেকে তিনি এশিয়ান মিউজিকের রেকর্ড বের করতেন। ১৯৭৭ সালে একদিন সকালে তার হাতে পৌঁছালো কতগুলো টেপ— যাতে পাকিস্তানের কিছু নবীন গায়কের গান ছিল। তিনি যখন সেগুলো শুনতে বসলেন, বিশেষ করে একটি কণ্ঠ তাকে চমকে দিল। “আমার মনে হলো, এ কি– এ যে এক দেবদূতের কণ্ঠ। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম। এমনি উঁচু পর্দার, মিষ্টি আর নেশা-ধরানো আওয়াজ তার। আমরা শুনেই যাচ্ছি, শুনেই যাচ্ছি– আর সেই কণ্ঠস্বর যেন আমাদের আরো বেশি করে পেয়ে বসছে। আমার জন্য এ ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমরা উপলব্ধি করলাম – আমরা এক বিশ্বমানের কণ্ঠ আবিষ্কার করেছি, আর একে আমাদের সারা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরতে হবে। “

এই কণ্ঠ ছিল নুসরাত ফতেহ আলি খানের। মোহাম্মদ আইউব কালবিলম্ব না করে নুসরাত ফতেহ আলি খানের সাথে চুক্তি করে ফেললেন, তার চারটি অ্যালবাম বের করার জন্য। তিনি পাকিস্তানের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী৷ অসাধারণ কন্ঠ৷ ইসলামের সুফিবাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ আধ্যাত্মিক সঙ্গীত কাওয়ালির জন্য বিশ্ববন্দিত৷ কাওয়ালি সঙ্গীতকে বিশ্বসঙ্গীতে পরিণত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁর সারা জীবন কেটেছে সঙ্গীত আর সুর সৃষ্টি সাধনায় নিজেকে উৎসর্গ করে গায়কী ক্ষমতার জন্য নুসরাত ফতেহ আলী খানকে বিশ্ব সঙ্গীতের অন্যতম গায়ক মনে করা হয়। তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা উঁচুলয়ে গান গাইতে পারতেন। তার হাত ধরে কাওয়ালি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাকে ‘শাহেন-ই-কাওয়ালি’ বলে ডাকা হয়। ২০০৬ সালে টাইম ম্যাগাজিনে তাকে ৬০ বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ ১২ জন শিল্পীর অন্যতম হিসেবে তুলে ধরে । নুসরাত ফতেহ আলী খানের বাবার নাম ওস্তাদ ফতেহ আলী খান। তার পরিবারের রয়েছে ছয়শ বছরের কাওয়ালি ঐতিহ্য। খুব ছোটবেলাতেই সঙ্গীতের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধ তৈরি হয়। রাগ ও বলবান্দিশ পর্বে যাওয়ার আগে তবলায় হাতেখড়ি নেন। পরবর্তী সময়ে ধ্রুপদী সঙ্গীত খেয়াল শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৬৪ সালে বাবার মৃত্যুতে সঙ্গীত প্রশিক্ষণে খানিক ছেদ পড়ে। পরে চাচা মুবারক আলী খান ও সালামত আলী খানের কাছে প্রশিক্ষণ নেন।

১৬ বছর বয়সে ফয়সালবাদে প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে গান করেন। ১৯৭১ সালে পারিবারিক কাওয়ালি দলের প্রধানের দায়িত্ব নেন। এরপর কাওয়ালি দল নিয়ে প্রথমবারের মতো রেডিও পাকিস্তানের ‘জাশন-ই-বাহারান’ নামের বার্ষিক সঙ্গীত উৎসবে গান পরিবেশন করেন। তার বেশির ভাগ গান উর্দু ও পাঞ্জাবি ভাষায়। তবে ফার্সি, ব্রজ ভাষা ও হিন্দিতেও গান করেছেন। ১৯৮০-এর দশকে ইংল্যান্ডের ওরিয়েন্টাল স্টার এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন নুসরাত। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তার গান ছড়িয়ে পড়ে৷ ৪০টিরও বেশি দেশে তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন৷ এ আর রহমানের ‘বন্দে মাতরম’ এ্যালবামে ‘গুরুস অব পিস’-এ তিনি কন্ঠ দেন৷ তিনি পাকিস্তানী ও ভারতীয় সিনেমায় গান করেছেন৷ তার জনপ্রিয় গান- ‘ইয়ে জো হালকা হালকা’, ‘মাস্ত মাস্ত’, ‘শাহবাজ কালান্দর’, ‘কিনা সোনা’, ‘মোরা সাইয়া’, তুমহে দিল্লাগি ভুল জানি পড়েগি৷’ তিনি পশ্চিমী সঙ্গীতের সঙ্গে কাওয়ালির অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটান৷ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ইউনেস্কো মিউজিক প্রাইজ ও ফুকুওকা এশিয়ান কালচারাল প্রাইজ৷ তাঁর ওপর পাঁচটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মিত হয়েছে৷

বিশ্বখ্যাত এই শিল্পীর ১৯৯৭ সালের ১৬ আগস্ট লন্ডনে মৃত্যু হয় ৷

নুসরাত ফতেহ আলী খান ১৯৪৮ সালের আজকের দিনে (১৩ অক্টোবর) পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.